নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর উপজেলায় শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব তীরে অবস্থিত এক ঐতিহাসিক জল দুর্গের নাম সোনাকান্দা দুর্গ (Sonakanda Fort)। ধারণা করা হয়, ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে বাংলা সুবেদার মীর জুমলা ঢাকার আশেপাশে জলদস্যুদের আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য যে তিনটি জল দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন, তার মধ্যে সোনাকান্দা দুর্গ অন্যতম। ইতিহাসের বীর ঈশা খাঁ বাংলার বার ভূঁইয়ার সময় এই দুর্গ ব্যবহার করতেন বলে জানা যায়।
মুঘল আমলে নির্মিত এই দুর্গ ঘিরে বিভিন্ন কল্পকাহিনী প্রচলিত রয়েছে। কিংবদন্তি অনুযায়ী, রাজা কেদার রায়ের কন্যা স্বর্ণময়ী লাঙ্গলবন্দে পুণ্যস্নান করতে গেলে একদল ডাকাত তাকে অপহরণ করে। পরে ঈশা খাঁ তাকে উদ্ধার করেন এবং রাজা কেদার রায়ের কাছে ফেরত পাঠাতে চান। কিন্তু মুসলমানদের তাঁবুতে রাত কাটানোর কারণে স্বর্ণময়ীকে তার পরিবার আর গ্রহণ করেনি। এরপর থেকে স্বর্ণময়ী ঈশা খাঁর সান্নিধ্যে থাকতেন। ধারণা করা হয়, তার নাম অনুসারেই দুর্গটির নামকরণ করা হয় সোনার কান্দা বা সোনাকান্দা দুর্গ।
দুর্গের বিবরণ
প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই চতুষ্কোণ আকৃতির দুর্গটি মজবুত ও সুরক্ষিত। এর অভ্যন্তরীণ ও বাইরের অংশের ব্যাস যথাক্রমে ১৫.৭০ মিটার ও ১৯.৩৫ মিটার। চারপাশে ৬.০৯ মিটার পুরু সুরক্ষা প্রাচীর রয়েছে। দুর্গে একটি বিশাল কামান প্ল্যাটফর্ম ও উত্তরমুখী প্রবেশ তোরণ রয়েছে। দুর্গটির গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোর মধ্যে রয়েছে পশ্চিমমুখী জলদস্যু প্রতিরোধী উঁচু মঞ্চ এবং সুরক্ষা প্রাচীর। প্রাচীরে গোলাবারুদের জন্য অসংখ্য ছোট ছোট ছিদ্র রয়েছে। পশ্চিম দেওয়ালের মাঝখানে মূল দুর্গের বেদীটি অবস্থিত। বর্তমানে এটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে সংরক্ষিত একটি নিদর্শন।
কীভাবে যাবেন?
ঢাকার গুলিস্তান থেকে বাসে নারায়ণগঞ্জ যাওয়া যায়। নারায়ণগঞ্জ শহরের ২ নং লঞ্চ ঘাট থেকে নৌকায় বন্দর উপজেলার ঘাটে নেমে রিকশায় সোনাকান্দা দুর্গ পৌঁছানো সম্ভব।
কোথায় থাকবেন?
ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জের দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসা সম্ভব। তবে রাতে থাকতে হলে নারায়ণগঞ্জ শহরের হোটেল মেহরান, হোটেল সোনালি, হোটেল নারায়ণগঞ্জ, হোটেল সুগন্ধা, হোটেল সুরমা এবং হোটেল রূপায়ন ভালো বিকল্প হতে পারে।
কোথায় খাবেন?
নারায়ণগঞ্জের রেলগেট এলাকায় প্রচুর খাবারের হোটেল রয়েছে। এর মধ্যে জনপ্রিয় কয়েকটি রেস্তোরাঁ হলো মনির রেস্তোরা, নিরিবিলি রেস্টুরেন্ট, শাহী রেস্টুরেন্ট, নিউ ঘরোয়া, খাবার ঘর এবং বিভিন্ন বিরিয়ানি হাউজ।
নারায়ণগঞ্জের অন্যান্য দর্শনীয় স্থান
নারায়ণগঞ্জ ভ্রমণে আরও কিছু উল্লেখযোগ্য স্থান হলো:
- পানাম নগর
- সোনারগাঁও জাদুঘর
- জিন্দা পার্ক
- মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি
- মায়াদ্বীপ
- বাংলার তাজমহল
- গোয়ালদি মসজিদ।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!