আলীর গুহা বা আলীর সুড়ঙ্গ প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট একটি রহস্যময় গুহা, যা বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলায় অবস্থিত। আলীর পাহাড় থেকে এর নামকরণ করা হয়েছে। আলীকদম সদর থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরে, মাতামুহুরী-টোয়াইন খালের পাশে দুই পাহাড়ের চূড়ায় এই গুহার অবস্থান। এই গুহা নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে অনেক গল্প-রহস্য রয়েছে।
এখানে মূলত তিনটি গুহা আছে, সবগুলো ঘুরে দেখতে প্রায় ২ ঘণ্টার মতো সময় লাগতে পারে। গুহাগুলোতে যেতে হলে ঝিরিপথ ধরে এগোতে হবে, এবং গুহামুখে উঠতে কিছুটা পাহাড় বেয়ে উঠতে হবে। প্রথম গুহায় সিঁড়ি থাকলেও বাকি গুহাগুলোর জন্যে আপনাকে আরোহণ করতে হবে। গুহার ভেতরে সম্পূর্ণ অন্ধকার, তাই টর্চ লাইট বা মশাল নিয়ে যেতে হবে। কিছু কিছু অংশ এতটাই সরু যে হামাগুড়ি দিয়ে যেতে হতে পারে। ভিতরে স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ, আর ঘনঘন বাদুড়ের ওড়াউড়ি গুহার রহস্যময়তা আরও বাড়িয়ে দেয়। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, তারা ক্ষতি করবে না।
যাওয়ার উপায়
আলীর গুহায় যেতে হলে আগে আপনাকে বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় পৌঁছাতে হবে। কক্সবাজারের চকরিয়া হয়ে আলীকদম আসা সবচেয়ে সহজ ও সময়সাশ্রয়ী।
- ঢাকা থেকে আলীকদম:
শ্যামলি ও হানিফ পরিবহনের সরাসরি বাস চলে, ভাড়া প্রায় ৮৫০ টাকা। সরাসরি আলীকদম চলে গেলে সময় ও ঝামেলা দুটোই কমে। - চকরিয়া থেকে আলীকদম:
ঢাকা থেকে চকরিয়া বাসে গেলে ভাড়া শ্রেণিভেদে ৯৫০ থেকে ২২০০ টাকা। চকরিয়া থেকে আলীকদমের লোকাল বাস পাবেন সকাল ৭:৩০ থেকে সন্ধ্যা ৬:৩০ পর্যন্ত, ভাড়া ৬৫ টাকা। চাইলে চাঁদের গাড়ি (জীপ) রিজার্ভ করেও যেতে পারেন, একপথে ১২০০-১৫০০ টাকা (দামাদামি করে নেওয়া ভালো)।
আলীকদম থেকে গুহার পথে
আলীকদম থেকে মংচুপ্রু পাড়ায় যেতে হবে, যা মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরে। হেঁটে বা ইজিবাইকে সহজেই পৌঁছানো যায়। পাড়ার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া টোয়াইন খাল পার হয়ে পাহাড়ি ও ঝিরিপথ ধরে ২০-৩০ মিনিট হাঁটলেই প্রথম গুহায় পৌঁছাতে পারবেন। সবগুলো গুহা দেখতে চাইলে যাতায়াতসহ মোটামুটি ৩ ঘণ্টা সময় লাগবে।
থাকার ব্যবস্থা
একদিনেই ঘুরে ফিরে আসা সম্ভব, তবে থাকতেই চাইলে আলীকদমে "দ্যা দামতুয়া ইন" (০১৭৪৮-৯১২১২৭) বা জেলা পরিষদের ডাকবাংলোতে থাকতে পারেন। এছাড়া পানবাজারের সাধারণ মানের একটি বোর্ডিংও আছে।
গাইড নেওয়া ভালো
প্রথমবার গেলে স্থানীয় কাউকে গাইড হিসেবে নিয়ে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে। মংচুপ্রু পাড়ায় ছোট ছেলেরা গাইডিং করে, তাদের সামান্য কিছু দিলেই খুশি হবে।
খাওয়া-দাওয়া
আলীকদমের পানবাজারে বা আশেপাশে দেশীয় খাবারের হোটেল পাবেন। খুব জাঁকজমক না হলেও, ভাত-মুরগি-মাছ-মাংসের সাধারণ পদ পাওয়া যায়, খরচ ১০০-১৫০ টাকার মধ্যে।
টিপস ও সতর্কতা
- পিচ্ছিল ও পাথুরে পথে সাবধানে চলাফেরা করুন।
- ভালো গ্রিপযুক্ত জুতা পরুন।
- বর্ষায় রাস্তা বেশি পিচ্ছিল হয়, সতর্ক থাকুন।
- দড়ি সঙ্গে রাখলে কাজে লাগতে পারে।
- গুহার ভেতরে চিৎকার বা হৈ-হুল্লোড় করবেন না।
- ময়লা বা প্লাস্টিক ফেলে প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট করবেন না।
আলীর গুহা প্রকৃতির এক বিস্ময়, যেখানে পা রাখলে মনে হবে অন্য এক রহস্যময় জগতে চলে গেছেন। প্রকৃতিকে ভালোবেসে, তার প্রতি যত্নশীল হয়ে ঘুরলে অভিজ্ঞতাটা আরও সুন্দর হবে। তো, কবে যাচ্ছেন এই অ্যাডভেঞ্চার-ভরা গুহা অভিযানে?
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!