কিশোরগঞ্জ জেলা থেকে ২২ কিলোমিটার এবং পাকুন্দিয়া উপজেলা থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এগারসিন্দুর গ্রামে ঈশা খাঁর স্মৃতি বিজড়িত এই ঐতিহাসিক দুর্গ। একসময় এ জায়গাটি "গঞ্জের হাট" নামে পরিচিত ছিল। গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবাহিত ১১টি ছোট-বড় খাল ও নদীর কারণে এ স্থানটি পরে "এগারসিন্দুর" নামে পরিচিতি পায়। নদীপথের কারণে এই এলাকাটি ব্যবসা-বাণিজ্য ও বসবাসের জন্য দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
ইতিহাস
ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত এই দুর্গের মূল নির্মাতার বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেন এটি নির্মাণ করেছেন রাজা আজাহবা, কেউ বলেন কোচ হাজং উপজাতির প্রধান বেবুধ রাজা, আবার কেউ মনে করেন রাজা গৌর গোবিন্দ এর নির্মাতা। তবে, বেবুধ রাজার দীঘি ও অন্যান্য স্থাপনার কারণে বেশিরভাগ ইতিহাসবিদ বেবুধ রাজাকেই এর নির্মাতা মনে করেন।
সুলতানী আমলের পর দুর্গটি বেবুধ রাজার নিয়ন্ত্রণে ছিল। পরবর্তীতে বাংলার বার ভূঁইয়ার প্রধান ঈশা খাঁ তাঁকে পরাজিত করে দুর্গটি দখল করেন। মোঘল সেনাপতি রাজা দুর্জন সিংহ ও মান সিংহের মধ্যেও এখানে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। কথিত আছে, ১৫৯৮ সালে মান সিংহের তলোয়ার ভেঙে গেলে ঈশা খাঁ তাঁকে নতুন অস্ত্র প্রদান করেন, যা মান সিংহকে পরাজয় স্বীকারে বাধ্য করে।
১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে দুর্গটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এখনো দুর্গের ভেতরে উঁচু ঢিবি দেখা যায়, যেখানে কামান বসানো হতো বলে ধারণা করা হয়।
দর্শনীয় স্থানসমূহ
- বেবুধ রাজার দীঘি: এটি বেবুধ রাজার খনন করা দীঘি।
- শাহ মাহমুদ মসজিদ ও বালাখানা: ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত এই মসজিদটি বিশাল গম্বুজসমৃদ্ধ।
- সাদী মসজিদ: ১৬৪২ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট শাহজাহানের শাসনামলে নির্মিত পোড়ামাটির অলঙ্করণে সমৃদ্ধ মসজিদটি দেখার মতো।
যেভাবে যাবেন
- বাসে: ঢাকা মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে জলসিঁড়ি ও অনন্যা পরিবহনের বাসে পাকুন্দিয়া হয়ে থানারঘাট যেতে হবে। সেখান থেকে রিকশা বা ইজিবাইকে এগারসিন্দুর যাওয়া যায়।
- ট্রেনে: ঢাকা থেকে আন্তঃনগর ট্রেন "এগারোসিন্দুর" বা "কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস" ধরে মানিকখালী স্টেশনে নামতে হবে। সেখান থেকে ইজিবাইক বা সিএনজিতে কটিয়াদী হয়ে এগারসিন্দুর পৌঁছানো যায়।
খাওয়া ও থাকা
এগারসিন্দুরে খাওয়া বা থাকার তেমন ভালো ব্যবস্থা নেই। তবে পাকুন্দিয়ায় সাধারণ মানের কিছু খাবার হোটেল এবং একটি সরকারি ডাকবাংলো রয়েছে।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!