জমিদারি প্রথা বহু আগেই বিলুপ্ত হয়েছে, কিন্তু কালের সাক্ষী হয়ে এখনও দাঁড়িয়ে আছে কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নে অবস্থিত গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ি। স্থানীয়ভাবে এটি 'মানব বাবুর বাড়ি' নামে পরিচিত, যা বর্তমান জমিদার বংশের উত্তরাধিকারী মানবেন্দ্র চক্রবর্তী চৌধুরীর নামানুসারে পরিচিতি লাভ করেছে।
অষ্টাদশ শতকের গ্রীক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত এই জমিদার বাড়িটি তার কারুকার্যময় নকশা এবং নান্দনিক সৌন্দর্যের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। এখানে রয়েছে কাচারিঘর, নহবতখানা, দরবারগৃহ, মন্দির এবং একটি বড় পুকুর। জমিদার বাড়িটি চারদিকে উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা, যার ভেতরে রয়েছে সবুজে মোড়া বিশাল আঙিনা। যদিও এখন অধিকাংশ স্থাপনা ধ্বংসপ্রাপ্ত, তবুও প্রাচীন স্থাপত্যকলা দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা প্রতি বছর এখানে ভিড় করেন।
গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ির ইতিহাস
ইতিহাস থেকে জানা যায়, দীননাথ চক্রবর্তীর পূর্বপুরুষরা ছিলেন ব্রাহ্মণ গোত্রের একজন শাস্ত্রীয় পণ্ডিত। ১৬শ শতকে তারা বর্তমান জমিদার বাড়ি থেকে দক্ষিণে শিবমন্দিরের কাছে বসতি স্থাপন করেন। ১৮শ শতকের শেষ দিকে দীননাথ চক্রবর্তী ইংরেজদের কাছ থেকে হোসেনশাহী পরগনার কিছু অংশ কিনে জমিদারি প্রতিষ্ঠা করেন। পরে অতুলচন্দ্র চক্রবর্তী ‘পত্তনি’ সূত্রে আঠার বাড়ির জমিদার জ্ঞানদা সুন্দরী চৌধুরাণীর কাছ থেকে এই জমিদার বাড়িটি অন্তর্ভুক্ত করেন।
জমিদার বাড়ি থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে মানব বাবুর একটি বিশাল মাছের প্রকল্প রয়েছে, যা প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক চমৎকার জায়গা।
কীভাবে পৌঁছাবেন?
গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলা সদর থেকে ১১ কিলোমিটার দূরত্বে। ঢাকা থেকে ট্রেনে বা বাসে কিশোরগঞ্জ পৌঁছে সিএনজি বা ইজিবাইকে জমিদার বাড়ি যেতে পারবেন।
- ট্রেনে: কমলাপুর বা বিমানবন্দর স্টেশন থেকে সকাল ৭:১৫-এ এগারোসিন্ধুর ট্রেনে উঠলে কিশোরগঞ্জ পৌঁছাতে সময় লাগবে প্রায় ৪ ঘণ্টা। ভাড়া ১৩৫ থেকে ৩৬৮ টাকা।
- বাসে: মহাখালী বা গোলাপবাগ থেকে কিশোরগঞ্জগামী বাসে যাত্রা করলে ভাড়া ২৭০-৩৫০ টাকা। গাইটাল বাস স্ট্যান্ড থেকে সিএনজি বা ইজিবাইকে জমিদার বাড়ি যাওয়া যাবে।
খাবার ও থাকার ব্যবস্থা
জমিদার বাড়ির পাশে কয়েকটি সাধারণ মানের খাবার হোটেল আছে। তবে কিশোরগঞ্জ শহরে ধানসিঁড়ি, গাংচিল, রিভার ভিউ বা তাজ রেস্টুরেন্টে মানসম্মত খাবার পাওয়া যাবে। থাকার জন্য কিশোরগঞ্জ শহরের রিভার ভিউ, গাংচিল, নিরালা, উজানভাটি, ক্যাসেল সালাম হোটেলগুলো ভালো।
গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ি কেবল এক প্রাচীন স্থাপত্য নিদর্শন নয়, এটি ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং প্রকৃতির এক অনন্য মেলবন্ধন।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!