একসময় গ্রামবাংলায় সারা বছরজুড়ে নানা ধরণের ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ মেলার আয়োজন করা হতো। তবে সময়ের সাথে সাথে আমাদের মনোভাব ও জীবনযাত্রায় পরিবর্তনের কারণে এসব মেলা ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীক এই গ্রামীণ মেলাগুলো এখন খুব কমই চোখে পড়ে। যদিও কিছু কিছু জায়গায় পুরনো প্রথা ধরে এখনো প্রতি বছর এমন মেলার আয়োজন করা হয়।
তেমনই একটি ঐতিহ্যবাহী মেলা হলো কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদি উপজেলার কুড়িখাই মেলা। ইতিহাস অনুযায়ী, এই মেলা প্রায় ৪০০ বছর ধরে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। বারো আউলিয়াদের অন্যতম হযরত শাহ শামসুদ্দিন আওলিয়া ৪০০ বছর আগে ইসলাম ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে কুড়িখাই এলাকায় আসেন। তখন থেকেই তাঁর মাজারের ওরস কেন্দ্র করে এই মেলার প্রচলন শুরু হয়। প্রতি বছর মাঘ মাসের শেষ সোমবার থেকে শুরু হয়ে এই মেলা চলে সাত দিনব্যাপী। স্থানীয় মানুষজন সারা বছর ধরে এই মেলার জন্য অপেক্ষা করে। আশপাশের এলাকা থেকে আসা মানুষের ভিড়ে পুরো মেলা জমজমাট হয়ে ওঠে। এমনকি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ফকির, দরবেশসহ লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটে এখানে।
মেলাটিতে গ্রামীণ মেলার ঐতিহ্যের প্রায় সবকিছুই পাওয়া যায়। মেলায় এমন কিছু নেই যা পাওয়া যায় না। পাশাপাশি চলে ওরস এবং দূর-দূরান্ত থেকে আসা সাধুদের বিভিন্ন কীর্তি। তবে এই মেলার অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হলো মাছের মেলা। মেলার একপাশে বিশাল আকারের মাছের বাজার বসে, যেখানে নানা রকমের বড় বড় মাছ বিক্রি হয়। প্রচলিত রীতি অনুযায়ী, এলাকার মেয়েদের জামাইদের দাওয়াত দেওয়া হয়, এবং জামাইদের মধ্যে বড় মাছ কেনার প্রতিযোগিতা হয়। শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে সেই মাছ দিয়ে জামাইদের বিশেষ আপ্যায়ন করা হয়। মেলার সময় পুরো এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জগামী আন্তঃনগর ট্রেনে করে মানিকখালী স্টেশনে পৌঁছাতে পারেন (সময়সীমা প্রায় ৩ ঘণ্টা)। সেখান থেকে অটোরিকশা বা সিএনজি নিয়ে জনপ্রতি ৩০-৩৫ টাকা ভাড়ায় মেলায় যেতে পারবেন। বাসে আসতে চাইলে ঢাকার গোলাপবাগ বা সায়েদাবাদ থেকে কিশোরগঞ্জগামী বাসে কটিয়াদি পর্যন্ত আসতে পারবেন (সময় লাগবে ৩ ঘণ্টা+)। সেখান থেকে অটোরিকশা বা সিএনজিতে ৪০-৬০ টাকা ভাড়ায় কুড়িখাই মেলায় যাওয়া যায়।
থাকার ব্যবস্থা
কটিয়াদিতে থাকার তেমন ভালো ব্যবস্থা নেই। রাতে থাকতে চাইলে কিশোরগঞ্জ সদরে যেতে হবে। কটিয়াদি থেকে সিএনজি বা বাসে করে কিশোরগঞ্জ সদরে যেতে পারেন। স্টেশন রোড এলাকায় কিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে যেখানে রাতযাপন করা সম্ভব।
কিশোরগঞ্জের দর্শনীয় স্থান
কিশোরগঞ্জে ঘুরে দেখার মতো আরও কিছু দর্শনীয় স্থানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক বাড়ি, পাগলা মসজিদ, এগারসিন্দুর দুর্গ, জঙ্গলবাড়ি দুর্গ, কবি চন্দ্রাবতী মন্দির ও নরসুন্দা লেক।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!