ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার মথুরাপুর গ্রামে অবস্থিত মথুরাপুর দেউল (Mathurapur Deul) একটি ঐতিহ্যবাহী প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। এটি ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মধুখালী বাজার থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে, চন্দনা নদীর তীরে অবস্থিত। টেরাকোটার অত্যন্ত সুন্দর ও শৈল্পিক কারুকার্যমণ্ডিত বারো কোণবিশিষ্ট মথুরাপুর দেউল বা মঠের উচ্চতা প্রায় ৮০ ফুট। দেউলটিতে প্রবেশের জন্য দুটি দরজা রয়েছে। পুরো মঠ জুড়ে শিলা খণ্ডের ছাপচিত্রের পাশাপাশি মাটির ফলক দিয়ে তৈরি অসংখ্য ছোট মূর্তির ব্যবহার বিশেষভাবে লক্ষণীয়। এসব মূর্তির মধ্যে রয়েছে নৃত্যরত নর-নারী, মস্তকবিহীন মানুষের প্রতিকৃতি, তীর-ধনুক হাতে হনুমান, পেঁচা, ঘোড়া ইত্যাদি।
জানা যায়, ষোড়শ শতাব্দীতে সংগ্রাম সিং নামের এক সেনাপতি মথুরাপুর দেউলটি নির্মাণ করেন। ১৬৩৬ সালে ভূষণার জমিদার সত্রাজিতের মৃত্যুর পর সংগ্রাম সিং এই এলাকার রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। অন্য একটি সূত্র অনুযায়ী, সম্রাট আকবরের বিখ্যাত সেনাপতি মানসিং রাজা প্রতাপাদিত্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধজয়ের স্মারক হিসেবে মথুরাপুর দেউলটি নির্মিত হয়। অর্থাৎ, মথুরাপুর দেউল একটি বিজয়স্তম্ভ, তবে এসব তথ্যের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ২০১৪ সালে মথুরাপুর দেউলটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক জাতীয় পুরাকীর্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়।
কিভাবে যাবেন
রাজধানী ঢাকা থেকে বাস ও ট্রেনে ফরিদপুর যাওয়া যায়। গাবতলি বাস স্ট্যান্ড থেকে কমফোর্ট লাইন, রয়েল পরিবহন, সূর্যমুখী পরিবহণ, গোল্ডেন লাইন, আনন্দ পরিবহণ, সাউথ লাইন, আজমেরি এন্টারপ্রাইজ ইত্যাদি বাস ঢাকা-ফরিদপুর রুটে পদ্মা সেতু হয়ে চলাচল করে। বাসে যেতে ভাড়া লাগবে ৪০০-৫০০ টাকা। এছাড়া ঢাকা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সুন্দরবন এক্সপ্রেস, মধুমতি এক্সপ্রেস ও বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে ফরিদপুর আসতে পারবেন। ট্রেনে আসনভেদে ভাড়া ৩০৫ থেকে ৬৯৬ টাকা।
ফরিদপুর থেকে মথুরাপুর দেউল যেতে হলে, শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ড থেকে মধুখালী উপজেলা যাওয়ার বাসে চলতে হবে। অথবা মাগুরা বা ঝিনাইদহ জেলার যাতায়াতকারী বাসেও মধুখালী বাজার যেতে পারবেন। মধুখালী বাজার থেকে রিকশায় করে ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী মথুরাপুর দেউলে পৌঁছানো যাবে।
কোথায় থাকবেন
ফরিদপুর শহরে কয়েকটি ভালো মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে, যার মধ্যে হোটেল র্যাফেলস, জে কে ইন্টারন্যাশনাল, পদ্মা হোটেল এবং হোটেল ঝিলভিউ অন্যতম।
ফরিদপুর আর যা দেখবেন
ফরিদপুর জেলার অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের বাড়ি, নদী গবেষণা ইনস্টিটিউট, হযরত শাহ ফরিদ মসজিদ, জগদ্বন্ধু সুন্দর এর আশ্রম, আটরশি বিশ্ব জাকের মঞ্জিল, বাইশ রশি জমিদার বাড়ি, সদরপুরসাতৈর মসজিদ, পাতরাইল মসজিদ ইত্যাদি।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!