মধুমতি নদী বাংলাদেশের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নদী। এটি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মাগুরা, ফরিদপুর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ এবং বাগেরহাট জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত পদ্মা নদীর একটি শাখা। মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার নাকোল ইউনিয়নে গড়াই নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে মাগুরা-ফরিদপুর জেলার সীমান্ত ঘেঁষে প্রবাহিত হয়ে মধুমতি নামে পরিচিত হয়। এরপর এটি নড়াইল ও খুলনা জেলার আঠারবেকি হয়ে বাগেরহাটে প্রবেশ করে এবং বরিশালের হরিণঘাটা মোহনায় বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে মিলিত হয়।
সাপের মতো বাঁকানো মধুমতি নদীর দৈর্ঘ্য ১৩৭ কিলোমিটার, প্রস্থ ৫০০ মিটার এবং গভীরতা ১০.৫ মিটার। নদীর প্রবাহপথে মাগুরা জেলার মোহাম্মদপুর, ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা, নড়াইলের লোহাগড়া ও কালিয়া, গোপালগঞ্জ সদর, কাশিয়ানী ও টুঙ্গিপাড়া এবং বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাট, চিতরশারী ও কচুয়া উপজেলার মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকা রয়েছে। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে মধুমতি নদীর উপর মধুমতি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নবগঙ্গা-মধুমতি সেচ প্রকল্প চালু রয়েছে।
শুষ্ক মৌসুমে নদীর পানি সবুজাভ হয়ে যায় এবং প্রবাহ কমে গেলেও বর্ষাকালে এটি দু’কূল ছাপিয়ে যায়। একসময় সুন্দরবন থেকে বাওয়ালীরা এই নদী পথে মধু সংগ্রহ করে বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করত। অনেকের মতে, নদীর সুমিষ্ট জল ও মধু বহনের কারণে এর নাম রাখা হয়েছে মধুমতি। নদীর তীরবর্তী এলাকায় বহু পুরোনো হাটবাজার, মন্দির, মসজিদ, দালানকোঠা এবং জেলে পল্লী গড়ে উঠেছে। এছাড়া নদীতে ইলিশ, বাচা, বাঘাইড়, চিতল, চিংড়ি, বেলে, আইড়, রুই, কাতলসহ নানা ধরনের সুস্বাদু মাছ পাওয়া যায়। নদীর তীরবর্তী অঞ্চল অত্যন্ত উর্বর হওয়ায় এখানে ধান, পাটসহ বিভিন্ন অর্থকরী ফসল উৎপাদন হয়।
কিভাবে যাবেন
রাজধানী ঢাকা থেকে বাস অথবা ট্রেনে ফরিদপুর যাওয়া যায়। গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে কমফোর্ট লাইন, রয়েল পরিবহন, সূর্যমুখী পরিবহণ, গোল্ডেন লাইন, আনন্দ পরিবহণ, সাউথ লাইন এবং আজমেরি এন্টারপ্রাইজসহ বিভিন্ন বাস পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরে চলাচল করে। বাসে ভাড়া মানভেদে ৪০০-৫০০ টাকা। এছাড়া ঢাকা কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে সুন্দরবন এক্সপ্রেস, মধুমতি এক্সপ্রেস এবং বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে ফরিদপুরে যাওয়া যায়। ট্রেনের আসনভেদে ভাড়া ৩০৫ থেকে ৬৯৬ টাকা। ফরিদপুর জেলা শহরের মধ্য দিয়ে মধুমতি নদীর একটি বড় অংশ প্রবাহিত হওয়ায় এখান থেকে নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
কোথায় থাকবেন
ফরিদপুরে থাকার জন্য বিভিন্ন আবাসিক হোটেল রয়েছে। এর মধ্যে হোটেল সুন্দরবন, হোটেল পার্ক, লাক্সারি হোটেল, হোটেল রাজস্থান, জে কে ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল শ্যামলী, পদ্মা হোটেল এবং হোটেল সুপার উল্লেখযোগ্য।
কোথায় খাবেন
ফরিদপুরে খাওয়ার জন্য রয়েছে রেইনফরেস্ট হোটেল, শাহী রেস্তোরাঁ, জাকির হোটেল এবং টেরাকোটা রেস্টুরেন্ট।
ফরিদপুরের দর্শনীয় স্থান
ফরিদপুরে আরও কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এর মধ্যে কানাইপুর জমিদার বাড়ি, পল্লীকবি জসিমউদ্দিনের বাড়ি, নদী গবেষণা কেন্দ্র, মথুরাপুর দেউল এবং পাতরাইল মসজিদ অন্যতম।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!