সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলা সদর, শ্রীমঙ্গল ও হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলাজুড়ে অবস্থিত একটি বৃহৎ জলাভূমির নাম হাইল হাওর (Hail Haor)। প্রায় ১০ হাজার হেক্টর আয়তনের এই হাওরটি ১৪টি বিল নিয়ে গঠিত। প্রচুর লতা ও গুল্মজাতীয় উদ্ভিদের উপস্থিতির কারণে স্থানীয়রা একে "লতাপাতার হাওর" নামেও ডেকে থাকেন।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্য
হাইল হাওরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা এক অপূর্ব ছবি। নীল আকাশ ও পানির মিতালিতে ভরপুর এই হাওর প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে এক স্বর্গরাজ্য। হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে সারা দেশ থেকে ভ্রমণকারীরা এখানে ছুটে আসেন।
হাইল হাওরে শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই নয়, জীববৈচিত্র্যের ভাণ্ডারও সমৃদ্ধ। এখানে প্রায় ৯৮ প্রজাতির মাছ ও ১৬০ প্রজাতির পাখি দেখা যায়।
ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
বর্ষাকাল হাওর ভ্রমণের সবচেয়ে সুন্দর সময়। তবে যদি বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কলকাকলিতে মুখর পরিবেশ উপভোগ করতে চান, তাহলে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে এখানে আসা সবচেয়ে ভালো।
হাইল হাওরে যাওয়ার উপায়
বাসে: ঢাকার ফকিরাপুল বা সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে হানিফ, শ্যামলী, এস আলম, এনা পরিবহনের বাসে চেপে শ্রীমঙ্গল পৌঁছাতে পারেন। ভাড়া পড়বে ৫৭০ থেকে ৬৫০ টাকা।
ট্রেনে: কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে পারাবত, জয়ন্তিকা, উপবন বা কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনে শ্রীমঙ্গল যাওয়া যায়। ট্রেনের ভাড়া ২৭৫ থেকে ৯৩৮ টাকা, শ্রেণী অনুযায়ী।
লোকাল যানবাহন: শ্রীমঙ্গল-মৌলভীবাজার সড়কের কালাপুর বাজার হয়ে বরুনা-হাজীপুর পাকা রাস্তা ধরে হাজীপুর বাজারে পৌঁছান। এই বাজারটি স্থানীয়ভাবে ঘাটেরবাজার নামে পরিচিত। এখান থেকে পায়ে হেঁটে বা স্থানীয় যানবাহনে ৪ কিলোমিটার দূরের হাইল হাওরে পৌঁছানো যায়।
খাবার ব্যবস্থা
হাওর এলাকার স্থানীয়দের কাছ থেকে খাবার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। অথবা নিজে শুকনো খাবার, যেমন বিস্কুট বা পাউরুটি, নিয়ে যেতে পারেন।
থাকার ব্যবস্থা
হাওর এলাকার বিল ইজারাদারদের দোচালা কুটিরগুলোতে ৪-৫ জন অনায়াসে থাকতে পারেন। তবে এর জন্য বিল মালিকের অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন। রাতের হাওরের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য তাঁবুতে রাত কাটানোও একটি চমৎকার অভিজ্ঞতা হতে পারে।
হাওরের কাছেই শ্রীমঙ্গল শহরে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি:
- গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট (পাঁচ তারকা)
- রেইন ফরেস্ট রিসোর্ট
- হোটেল প্লাজা
- টি টাউন রেস্ট হাউস
ভ্রমণ পরামর্শ
হাজীপুর বাজারে গাইড পাওয়া যায়। যদিও হাওর ঘুরতে গাইডের প্রয়োজন নেই, তবে চাইলে গাইডের সহায়তায় হাইল হাওর ও বাইক্কা বিল সহজে ঘুরে দেখা যায়।
হাইল হাওর প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক অপূর্ব গন্তব্য। এটি ভ্রমণে একদিকে যেমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়, তেমনি জীববৈচিত্র্যের সমৃদ্ধ ভাণ্ডারের সান্নিধ্যে সময় কাটানোর সুযোগ মেলে।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!