১৬৮৭ সালে মোগল আমলে কাকিনা জমিদারির যাত্রা শুরু হয়। বৃহত্তর রংপুর জেলার জমিদারদের মধ্যে কাকিনা জমিদাররা ছিলেন বেশ প্রভাবশালী। সে সময় দিল্লির মোগল সম্রাট ছিলেন আওরঙ্গজেব, আর বাংলার সুবেদার ছিলেন শায়েস্তা খাঁ। শায়েস্তা খাঁর পুত্র এবাদত খাঁ কাকিনা অঞ্চলের বিশিষ্ট ব্যক্তি রঘু রামের ছেলে রাম নারায়নকে জমিদারির সনদ প্রদান করেন। এরপর রাজা রায় চৌধুরী, রুদ্র রায়, রসিক রায়, অলকা দেবী, রাম রুদ্র রায় চৌধুরী এবং শম্ভুচরণ রায় চৌধুরী পর্যায়ক্রমে কাকিনার জমিদার হন।
১৮৬০ সালে শম্ভুচরণ রায় চৌধুরী ব্যক্তিগত উদ্যোগে রংপুরের প্রথম পত্রিকা ‘রঙ্গপুর প্রকাশ’ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি তিনি শম্ভুসাগর নামে বিশাল একটি দিঘি খনন করেন। পরবর্তীতে তার দত্তকপুত্র মহিমা রঞ্জন রায় চৌধুরী জমিদারির দায়িত্ব নেন।
প্রজা দরদী ও সংস্কৃতিপ্রেমী মহিমা রঞ্জন রায় চৌধুরী কাকিনায় একটি বৃহৎ লাইব্রেরি গড়ে তোলেন। এছাড়া তিনি বগুড়ায় উডবার্ণ লাইব্রেরি, রংপুরের স্কুল, রেলপথ এবং কাকিনায় একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তবে ১৯২৫ সালে অতিরিক্ত ব্যয় ও বিলাসিতার কারণে জমিদারি নিলামে ওঠে। এরপর তিনি পরিবারসহ দার্জিলিং চলে যান এবং ১৯৩৯ সালে সেখানে মৃত্যুবরণ করেন। মহিমা রঞ্জন রায় চৌধুরীর স্মৃতিবিজড়িত এই জমিদারি বর্তমানে ‘কাকিনা জমিদার বাড়ি’ নামে পরিচিত।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে লালমনিরহাটে যেতে বেশ কয়েকটি বাস ও ট্রেনের ব্যবস্থা রয়েছে। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সপ্তাহের ছয় দিন রাত ৯:৪৫-এ লালমনি এক্সপ্রেস, আর সকাল ৮:৩০-এ বুড়িমারী এক্সপ্রেস ছাড়ে (মঙ্গলবার বাদে)। ট্রেনে টিকিটের দাম আসন অনুযায়ী ৬৩৫ থেকে ২১৮০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
বাসে যেতে চাইলে গাবতলী ও কল্যাণপুর থেকে হানিফ ও শাহ আলী পরিবহনের বাস লালমনিরহাটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। লালমনিরহাট থেকে বুড়িমারী স্থলবন্দরগামী পথে প্রায় ২১ কিলোমিটার পাড়ি দিলেই কাকিনা বাজার বাসস্ট্যান্ড। বাসস্ট্যান্ড থেকে মাত্র ২০০ গজ পশ্চিমেই কাকিনা জমিদার বাড়ির অবস্থান।
তাছাড়া, লালমনিরহাট থেকে সরাসরি কাকিনা রেল স্টেশনে নেমেও জমিদার বাড়ি যেতে পারেন, যা স্টেশন থেকে মাত্র ১ কিলোমিটার দূরে। রংপুর শহর থেকে কাকিনা জমিদার বাড়ির দূরত্ব প্রায় ২২ কিলোমিটার।
কোথায় থাকবেন
রাতযাপনের জন্য লালমনিরহাটে বেশ কিছু মানসম্মত হোটেল আছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো — খান হোটেল, হোটেল সীমান্ত আবাসিক, হোটেল অতিথি, হোটেল অবসর, হোটেল মাসুদ ও উত্তরা হোটেল। এছাড়া, কাকিনা ও কালীগঞ্জেও সাধারণ মানের আবাসিক হোটেল পাওয়া যায়।
কোথায় খাবেন
লালমনিরহাট শহরে বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্ট ও খাবার হোটেল রয়েছে। এর মধ্যে প্যারাডাইস, সীমান্ত ক্যান্টিন, পলাশী, পালকি, নিউ শান্তি ও মুক্তিযোদ্ধা হোটেল বেশ জনপ্রিয়। এসব জায়গায় সুলভ মূল্যে মানসম্মত খাবার পাওয়া যায়।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!