নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর শহর থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত উত্তরবঙ্গের প্রথম ও প্রাচীনতম ক্যাথলিক গির্জা। ১৮৮৬ সালে এই গির্জা প্রতিষ্ঠিত হয়, যা মূলত সৈয়দপুর রেলওয়েতে কর্মরত অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান ক্যাথলিক ও প্রোটেস্ট্যান্ট সম্প্রদায়ের উপাসনার জন্য নির্মিত হয়েছিল। ব্রিটিশ আমলে সৈয়দপুর একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যকেন্দ্র হয়ে ওঠে, বিশেষত আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে স্থাপিত হওয়ার পর।
রেলওয়ে স্টেশনের ঠিক উত্তর পাশে একটি ছোট লোকোশেড নির্মাণ করা হয়, যার চারপাশে প্রায় ১১০ একর জমিজুড়ে গড়ে ওঠে বিশাল রেল কারখানা। এখানে স্থানীয় বাঙালিদের পাশাপাশি ব্রিটিশ ও অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান খ্রিষ্টানরা কাজ করতেন। তাঁদের ধর্মীয় চাহিদা মেটাতে ব্রিটিশ সরকার সাহেবপাড়ায় দুটি গির্জা স্থাপন করেন, যা রোমান ও ইউরোপীয় স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত।
গির্জার ইতিহাস ও স্থাপত্যশৈলী
রেলওয়ে কারখানার প্রবেশদ্বারের পাশে অবস্থিত গির্জাটি যিশুখ্রিষ্টের মা মেরির নামে উৎসর্গিত হয়। ১৮৯২ সালে গির্জার পাশে ৩ বিঘা জমির উপর নির্মিত হয় পুরোহিতদের বাসভবন। গির্জার অভ্যন্তরে চোখ ধাঁধানো প্রাচীন শিল্পকলা এবং বিশদ স্থাপত্যশৈলী দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। দূর-দূরান্ত থেকে ভ্রমণপ্রেমীরা এই ঐতিহাসিক গির্জা পরিদর্শনে আসেন।
যাতায়াত ব্যবস্থা
ঢাকা থেকে নীলফামারী পৌঁছানোর জন্য রয়েছে সড়ক, রেল ও আকাশপথের সুবিধা। গাবতলী, কলেজগেট ও মহাখালী থেকে সরাসরি বাসে সৈয়দপুর যেতে পারেন, যেখানে জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ৮০০-৯৫০ টাকা। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে নীলসাগর এক্সপ্রেস ও চিলাহাটি এক্সপ্রেস ট্রেনে ৬২৫-২২০৭ টাকার মধ্যে টিকিট পাওয়া যায়। সৈয়দপুর রেলস্টেশন থেকে খুব কাছেই অবস্থিত ক্যাথলিক গির্জাটি।
যদি আকাশপথে যেতে চান, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস বাংলা বা নভোএয়ারের ফ্লাইটে সৈয়দপুর যেতে পারবেন। এক্ষেত্রে টিকিটের খরচ হবে ৪৫০০ থেকে ৬৬০০ টাকা।
কোথায় থাকবেন
নীলফামারীতে থাকার জন্য বেশ কয়েকটি মানসম্মত আবাসিক হোটেল রয়েছে, যেমন:
- হোটেল প্রিমিয়ার
- রনি ড্রিম
- শিশির হোটেল
- অবকাশ হোটেল
- নাভানা রেস্ট হাউজ
- আর রহমান হোটেল
কোথায় খাবেন
স্থানীয় খাবারের স্বাদ নিতে পারেন নীলফামারীর জনপ্রিয় রেস্তোরাঁগুলোতে:
- তাজিন উদ্দিন গ্র্যান্ড হোটেল
- দারুচিনি ক্যাফে
- হোটেল টিপ টপ
- হোটেল স্টার
- হোটেল আকবরিয়া
- হোটেল রহমতিয়া
এই ক্যাথলিক গির্জাটি শুধু একটি ধর্মীয় স্থানই নয়, বরং এটি নীলফামারীর ইতিহাস ও সংস্কৃতির অংশ। ঐতিহ্যবাহী এই স্থাপনা আপনার ভ্রমণ তালিকায় অবশ্যই রাখা উচিত!
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!