লালমনিরহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের বড়বাড়িতে অবস্থিত প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো মুসলিম স্থাপত্য নিদর্শন নিদাড়িয়া মসজিদ। ইট, সুরকি ও চুন দিয়ে নির্মিত এই মসজিদে মোঘল স্থাপত্যশৈলীর স্পষ্ট প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৪২ ফুট এবং প্রস্থ ১৬ ফুট। এর ছাদের ওপর এক সারিতে তিনটি গম্বুজ এবং চারকোণে নকশা করা চারটি বুরুজ রয়েছে। এছাড়া মসজিদে তিনটি দরজা ও ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ১২টি মিনার আছে, যা এর সৌন্দর্য বাড়িয়েছে।
মসজিদের সামনেই একটি দোচালা ঘর ও বিশাল ঈদগাহ মাঠ রয়েছে, যেখানে ঈদের নামাজসহ নানা ইসলামিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। ফার্সি ভাষায় লেখা শিলালিপি অনুযায়ী, ১১৭৬ হিজরি সালে মোঘল সুবেদার মাসুদ খাঁ ও তার পুত্র মনসুর খাঁর তত্ত্বাবধানে মসজিদটি নির্মিত হয়। পরবর্তীতে সুবেদার মনসুর খাঁ মসজিদের জন্য অতিরিক্ত ১০.৫৬ একর জমি দান করেন। জনশ্রুতি অনুযায়ী, মনসুর খাঁর মুখে দাড়ি না থাকায় তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, যদি তার মুখে দাড়ি ওঠে, তবে তিনি একটি মসজিদ নির্মাণ করবেন। পরবর্তীতে দাড়ি গজালে তিনি এই মসজিদটি তৈরি করেন এবং তার দাড়িহীনতার কারণে মসজিদের নাম রাখা হয় "নিদাড়িয়া" (ফার্সি ভাষায় "নিদাড়িয়া" শব্দের অর্থ দাড়িবিহীন)।
মসজিদটির বর্তমান অবস্থা
প্রত্নতাত্ত্বিকরা ধারণা করেন, মসজিদের পাশে থাকা বাঁধানো কবরটি এর প্রতিষ্ঠাতা সুবেদার মনসুর খাঁয়ের। যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে মসজিদটির কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তবে এটি এখনও লালমনিরহাটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে টিকে আছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের দ্বিতীয় প্রাচীনতম এই মসজিদটি বর্তমানে প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের অধীনে রয়েছে এবং স্থানীয় মুসল্লিরা এখানে নিয়মিত নামাজ আদায় করেন।
কিভাবে যাবেন?
- বাস: ঢাকার গাবতলী ও কল্যাণপুর থেকে নাবিল পরিবহন, এস আর ট্রাভেলস, মানিক এক্সপ্রেস, বরকত ট্রাভেলস, হানিফ ও শাহ্ আলি পরিবহণের এসি/নন-এসি বাসে লালমনিরহাট যাওয়া যায়। বাসভাড়া ৬০০ থেকে ১৬০০ টাকার মধ্যে।
- ট্রেন: কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে লালমনি এক্সপ্রেস (শুক্রবার ছাড়া) প্রতিদিন রাত ৯:৪৫ মিনিটে এবং বুড়িমারী এক্সপ্রেস (মঙ্গলবার ছাড়া) প্রতিদিন সকাল ৮:৩০ মিনিটে লালমনিরহাটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। টিকিটের মূল্য ৬৩৫ থেকে ২১৮০ টাকা পর্যন্ত।
- স্থানীয় পরিবহন: লালমনিরহাট শহর থেকে সিএনজি বা অটোরিকশায় বড়বাড়ি হয়ে রংপুর-কুড়িগ্রাম সড়ক ধরে দক্ষিণ দিকে ২ কিলোমিটার এগোলেই নিদাড়িয়া মসজিদে পৌঁছানো যায়।
কোথায় থাকবেন?
লালমনিরহাটে বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেল ও গেস্ট হাউজ রয়েছে, যেমন:
- খান হোটেল
- হোটেল সিমান্ত
- হোটেল অবসর
- নর্থ বেঙ্গল গেস্ট হাউজ
- দোয়েল গেস্ট হাউজ
- মিশন গেস্ট হাউজ
- সার্কিট হাউজ ও জেলা পরিষদের ডাকবাংলো
কোথায় খাবেন?
- পঞ্চগ্রামের বড়বাড়িতে সাধারণ মানের খাবারের দোকান রয়েছে।
- লালমনিরহাট শহরে ভালো মানের খাবারের জন্য কয়েকটি জনপ্রিয় রেস্টুরেন্ট হলো:
- মুনস্টার রেস্টুরেন্ট
- মফিজের হোটেল
- গ্রামীণ রেস্টুরেন্ট
- নিউ ক্যাফে আড্ডা
- প্যারাডাইস হোটেল
- প্রিয় হোটেল
এখানে বাংলার ঐতিহ্যবাহী খাবার, চাইনিজ ও ফাস্টফুড জাতীয় খাবার পাওয়া যায়।
লালমনিরহাটের দর্শনীয় স্থান
নিদাড়িয়া মসজিদ ছাড়াও লালমনিরহাটের উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানসমূহ:
- তুষভাণ্ডার জমিদার বাড়ি
- কাকিনা জমিদার বাড়ি
- তিন বিঘা করিডোর
- তিস্তা ব্যারেজ
এই সব ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণের জন্য লালমনিরহাট একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য হতে পারে।
কমল মিয়া
ভ্রমণকারীনিদাড়িয়া মসজিদ আলহাদুলিল্লাহ, অনেক সুন্দর এবং পুরাতন একটি মসজিদ।