টক-মিষ্টি স্বাদের লটকন (Lotkon) সবারই পছন্দের একটি ফল। লটকনের জন্য নরসিংদী জেলার খ্যাতি দেশজোড়া। বিশেষ করে শিবপুর ও মরজাল উপজেলায় সবচেয়ে বেশি লটকনের চাষ হয়। শিবপুরের ছোটাবান্দা গ্রামের রাস্তার দু'পাশজুড়ে অসংখ্য লটকন বাগান নজর কাড়ে। গাছের গোড়া থেকে শুরু করে শাখা-প্রশাখা পর্যন্ত ঝুলে থাকে থোকা থোকা লটকন। তবে বাগানে প্রবেশের আগে মালিকের অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। বেশিরভাগ বাগানের মালিকই ভ্রমণপিপাসুদের আন্তরিকতার সঙ্গে বাগান ঘুরিয়ে দেখান। মালিকের অনুমতি নিয়ে গাছ থেকে সরাসরি লটকন পেড়ে খাওয়ার অভিজ্ঞতাও নিতে পারবেন।
নরসিংদীর উয়ারি বটেশ্বর, রায়পুর, যশোর, আগরপুর, মাকাল্লা, ভিটিখৈনকুট, দক্ষিণ কামালপুর, নৌকাঘাটা, লালখারটেক, ভাঙ্গারটেকসহ আশেপাশের গ্রামগুলোতেও প্রচুর লটকনের বাগান রয়েছে। স্থানীয়দের কাছ থেকে দিকনির্দেশনা নিয়ে সহজেই কাছাকাছি বাগান ঘুরে দেখতে পারেন। লটকন কেনার জন্য ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মরজাল, সৃস্টিগড়, শিবপুরের কামারটেক, চৈতন্য বাজার ও গাবতলী বাজার অন্যতম স্থান। এখানে দরদাম করে তাজা লটকন কেনা যাবে।
যেভাবে যাবেন
বাসে: ঢাকার গুলিস্তান, আব্দুল্লাহপুর বা সায়েদাবাদ থেকে নরসিংদী যাওয়ার বাসে উঠুন। কাঁচপুর ব্রিজ পার হয়ে মরজাল বা সৃস্টিগড় বাস স্ট্যান্ডে নামুন। সেখান থেকে অটো বা রিকশায় কাছাকাছি লটকন বাগানে যেতে পারবেন।
ট্রেনে: ঢাকার কমলাপুর থেকে মহানগর এক্সপ্রেস, কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস বা এগারোসিন্দুর গোধূলি ট্রেনে মাত্র ১ ঘণ্টায় নরসিংদী পৌঁছানো যায়। নরসিংদী স্টেশন থেকে ভেলানগর হয়ে মরজাল বা উয়ারি বটেশ্বর এলাকার বাগানে যেতে অটো বা লেগুনা নিতে হবে।
কোথায় থাকবেন
সারাদিন ঘুরে সন্ধ্যার মধ্যে ঢাকায় ফিরে আসা সম্ভব। তবে প্রয়োজনে নরসিংদীর ইব্রাহীম কটেজ, সার্কিট হাউজ, এলজিইডির রেস্ট হাউজ বা জেলা পরিষদের ডাকবাংলোতে রাত কাটানো যাবে।
কোথায় খাবেন
নরসিংদীতে ফাল্গুনি হোটেল, বাবুর্চি আলমগীর হোটেল, বন্ধু হোটেল এবং খোকন হোটেল ভালো খাবারের জন্য পরিচিত। নরসিংদীর বিশেষ খাবারগুলোর মধ্যে রসগোল্লা, লালমোহন, খিরমোহন এবং শাহী জিলাপি উল্লেখযোগ্য। ভেলানগরের সুস্বাদু মালাই চাও অবশ্যই চেখে দেখুন।
লটকন বাগান ভ্রমণের পরামর্শ
- মে থেকে জুলাই মাস লটকন বাগান দেখার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।
- গ্রুপে মাইক্রোবাস ভাড়া করে সৃষ্টিগড়, চৈতন্য, কুণ্ডপাড়া এবং বেলাবোর বাগানগুলো সহজেই ঘুরে দেখা যাবে।
- বাগানে ঢোকার আগে মালিকের অনুমতি নিন এবং ফল নষ্ট করবেন না।
- স্থানীয় রিকশা বা অটোরিকশা চালকের পরিচিত বাগানগুলোতে যাওয়া সুবিধাজনক।
- ফেরার পথে মরজাল বাজার থেকে তাজা লটকন কিনতে ভুলবেন না।
- পাঁচদোনায় নেমে বাড়তি ভোগান্তি এড়িয়ে চলুন।
নরসিংদীর দর্শনীয় স্থান
লটকন বাগানের পাশাপাশি নরসিংদীর লক্ষণ সাহার জমিদার বাড়ি, বালাপুর জমিদার বাড়ি, উয়ারি বটেশ্বর এবং ড্রিম হলিডে পার্ক ভ্রমণপিপাসুদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ।
লটকনের স্বাদ আর নরসিংদীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখনই পরিকল্পনা করে ফেলুন।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!