মহেশখালী

মহেশখালী (Maheshkhali) উপজেলা কক্সবাজার জেলার একটি দ্বীপ, যা কক্সবাজার থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। জনশ্রুতি রয়েছে যে, ১৫৫৯ সালের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ফলে মূল ভূ-খন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এই দ্বীপের সৃষ্টি হয়েছিল। প্রায় ২০০ বছর আগে বৌদ্ধ সেন মহেশ্বরের নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়, এবং এটি মহেশখালী দ্বীপ নামেও পরিচিত। এই উপজেলার মধ্যে সোনাদিয়া, মাতারবাড়ী, ও ধলঘাটা নামে তিনটি ছোট দ্বীপ রয়েছে। পান, মাছ, শুঁটকী, চিংড়ি, লবণ এবং মুক্তা উৎপাদনের জন্য মহেশখালী সারা বাংলাদেশে বিখ্যাত। কক্সবাজার থেকে ৪-৫ ঘণ্টা সময় ব্যয় করলে আপনি মহেশখালী দ্বীপ থেকে ঘুরে আসতে পারবেন।

কি দেখবেন

মহেশখালী বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ। এখানে মৈনাক পর্বতের উপরে আদিনাথ মন্দির রয়েছে, যা দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে। এছাড়া, প্রতি বছর ফাল্গুন মাসে এখানে আদিনাথ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। দ্বীপে কিছু বৌদ্ধ বিহার, জলাবন এবং বিভিন্ন প্রজাতির পশুপাখিও রয়েছে। মহেশখালীতে আদিনাথ মন্দির, রাখাইন পাড়া, স্বর্ণ মন্দির এবং ঝাউবাগান ও চরপাড়া বিচ রয়েছে। এই পথে আপনি পান গাছের বাগান এবং লবণের মাঠও দেখতে পাবেন। মহেশখালী দ্বীপের পান সমগ্র দেশে সুনাম অর্জন করেছে, তাই এখানে এসে অবশ্যই পান খাওয়ার চেষ্টা করবেন।

কিভাবে যাবেন

মহেশখালী যাওয়ার দুটি প্রধান পথ রয়েছে। প্রথমত, কক্সবাজার আসতে হবে, যা কক্সবাজারগামী পর্যটকদের জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক। ঢাকা থেকে কক্সবাজার যেতে সড়ক, রেল ও আকাশপথ ব্যবহার করা যেতে পারে। বাসের মধ্যে সৗদিয়া, এস আলম মার্সিডিজ বেঞ্জ, গ্রিন লাইন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, সোহাগ পরিবহন, এস.আলম পরিবহন, সেন্টমার্টিন হুন্দাই উল্লেখযোগ্য। বাসের ভাড়া ৯০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকার মধ্যে হতে পারে। এছাড়া ট্রেনে ঢাকা থেকে কক্সবাজার এক্সপ্রেস বা পর্যটক এক্সপ্রেস ব্যবহার করা যেতে পারে, যেখানে আসনভেদে ভাড়া ৪০৫-১৩৯৮ টাকা হতে পারে। বিমানে ঢাকা থেকে কক্সবাজার যেতে বিভিন্ন এয়ারলাইন্স যেমন বাংলাদেশ বিমান, নভোএয়ার, ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স ও এয়ার আস্ট্রা সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করে। বিমান ভাড়া ৪,৫৯৯ টাকা থেকে ১২,০০০ টাকার মধ্যে হতে পারে। কক্সবাজার থেকে মহেশখালীতে যাওয়ার জন্য ৬ নম্বর ঘাট থেকে স্থানীয় ট্রলার বা স্পীডবোটে যেতে হবে, যা ৭০-৮০ টাকায় পাওয়া যায়।

কোথায় থাকবেন

মহেশখালী থেকে সহজেই কক্সবাজার ফিরে আসা যায়, তাই রাত্রী যাপনের জন্য কক্সবাজারে থাকতে পারেন। তবে মহেশখালীতে থাকার বিশেষ ব্যবস্থা নেই। কক্সবাজারে হোটেল/মোটেল/রিসোর্টের দাম ভিন্ন হয়ে থাকে। সাধারণত, ৬০০০ থেকে ১০,০০০ টাকার মধ্যে কিছু রিসোর্ট পাওয়া যায়, যেমন মারমেইড বিচ রিসোর্ট, সায়মন বিচ রিসোর্ট, ওশেন প্যারাডাইজ, লং বিচ ইত্যাদি। কিছু সস্তা রিসোর্টও পাওয়া যায়, যেমন কোরাল রীফ, ইকরা বিচ রিসোর্ট, অভিসার, মিডিয়া ইন ইত্যাদি।

কি খাবেন

মহেশখালী থেকে ফিরে এসে কক্সবাজারে খেতে পারেন। কক্সবাজারে বিভিন্ন মানের রেস্টুরেন্ট রয়েছে, যেমন রোদেলা, ঝাউবন, ধানসিঁড়ি, পৌষি, নিরিবিলি ইত্যাদি। খাদ্যমূল্য সিজন অনুসারে পরিবর্তিত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ভাত ২০-৪০ টাকা, মিক্সড ভর্তা ৭৫-৩০০ টাকা, কোরাল মাছ ১৫০ টাকা, গরুর মাংস ১৫০-২০০ টাকা (২ জন শেয়ার করতে পারবেন), ডাল ৩০-৬০ টাকা। এছাড়াও, হান্ডি রেস্তোরাঁ থেকে ২০০-২৫০ টাকায় হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানি চেখে দেখতে পারেন।

মহেশখালী এর দূরত্ব
ঢাকা থেকে দূরত্ব:
290.7 কিমি
কক্সবাজার থেকে
21.92 কিমি
নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থান
আদিনাথ মন্দির
ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক
সোনাদিয়া দ্বীপ
রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত
সী পার্ল বিচ রিসোর্ট এন্ড স্পা
রামু রাবার বাগান
দরিয়া নগর
রামু বৌদ্ধ বিহার
কুতুবদিয়া দ্বীপ
হিমছড়ি
মারায়ন তং
মারমেইড বিচ রিসোর্ট
চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
আলীর গুহা বা আলীর সুড়ঙ্গ
বাঁশখালী ইকোপার্ক
ইনানী সমুদ্র সৈকত
দামতুয়া ঝর্ণা

মন্তব্য

এখনো কোনো মন্তব্য নেই

প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!

আপনার মন্তব্য লিখুন