বাঙালিরা স্বভাবতই ভোজনরসিক। কোনো জায়গা ঘুরতে গেলে সেই এলাকার ঐতিহ্যবাহী খাবার চেখে দেখা যেন অবধারিত। ঠিক তেমনই, মেহেরপুর জেলা বিখ্যাত দুটি ব্যতিক্রমধর্মী মিষ্টির জন্য— সাবিত্রী ও রসকদম্ব। এই মিষ্টিগুলো রসহীন হলেও স্বাদে অনন্য। ১৮৬১ সাল থেকে শুরু হওয়া এই মিষ্টির যাত্রা এখন শুধুমাত্র বাংলাদেশেই নয়, ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের নানা প্রান্তে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
ব্রিটিশ আমলে মেহেরপুরের বাসিন্দা বাসুদেব প্রধান প্রথম সাবিত্রী ও রসকদম্ব মিষ্টি তৈরির কৌশল উদ্ভাবন করেন। বর্তমানে তাঁর নাতি বিকাশ কুমার সাহা ও অনন্ত কুমার সাহা তাঁদের পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য ধরে রেখে এই মিষ্টি তৈরি করছেন বাসুদেব গ্র্যান্ড সন্স নামের একটি দোকানে। এই মিষ্টির রেসিপি এখনো কেবল পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ, ফলে প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ মিষ্টিই তৈরি করা হয়।
বিশেষভাবে দেশি গরুর দুধ ও চিনি ব্যবহার করে বানানো হয় এই মিষ্টি। চাহিদা এত বেশি যে প্রতিদিন বেলা ৩টার মধ্যেই দোকান খালি হয়ে যায়। সারা দেশে শুধুমাত্র মেহেরপুরেই এই মিষ্টি পাওয়া যায়।
আন্তর্জাতিক চাহিদা
সাবিত্রী ও রসকদম্ব এখন শুধু দেশের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নয়। যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও কুয়েত সহ বহু দেশে রপ্তানি হচ্ছে এই মিষ্টি। রসহীন হওয়ায় এটি সংরক্ষণে সুবিধা হয়— ফ্রিজ ছাড়া এক সপ্তাহ পর্যন্ত এবং ফ্রিজে রাখলে প্রায় এক মাস পর্যন্ত ভালো থাকে।
কোথায় পাওয়া যায়?
এই মিষ্টির একমাত্র বিক্রয়স্থল হলো মেহেরপুর জেলা শহরের বাসুদেব গ্র্যান্ড সন্স। জেলা সদরের মহিলা কলেজ মোড় থেকে মাত্র ৫০ মিটার দক্ষিণে এর অবস্থান। প্রতিদিন অল্প সংখ্যক মিষ্টি তৈরি হয় এবং অগ্রিম অর্ডার ছাড়া হঠাৎ গিয়েই মিষ্টি পাওয়া বেশ কঠিন।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সড়কপথে পদ্মা সেতু হয়ে মেহেরপুরের দূরত্ব প্রায় ২৬১ কিলোমিটার। বাসে সময় লাগে প্রায় ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা। ঢাকা থেকে মেহেরপুরগামী উল্লেখযোগ্য বাস সার্ভিসগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স
- পূর্বাশা
- এম.এম. পরিবহন
- দর্শনা ডিলাক্স
- শ্যামলী পরিবহন
- মেহেরপুর ডিলাক্স
- জে.আর পরিবহন
নন-এসি বাস ভাড়া: প্রায় ৬০০–৭০০ টাকা
এসি বাস ভাড়া: ৮০০–১৩০০ টাকার মধ্যে
কোথায় থাকবেন?
মেহেরপুর শহরে কিছু ভালো মানের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। যেমন:
- সার্কিট হাউজ
- পৌর হল
- ফিন টায়ার আবাসিক হোটেল
- কামাল আবাসিক হোটেল
- মিতা আবাসিক হোটেল
কোথায় খাবেন?
মেহেরপুর শহরে বিভিন্ন রকমের খাবারের হোটেল ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে, যেগুলো ভ্রমণকারীদের দৈনন্দিন খাবারের প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম। বিশেষ করে আমের মৌসুমে এখানে গেলে, সাবিত্রী ও রসকদম্ব মিষ্টির পাশাপাশি স্থানীয় পাকা আমের স্বাদ নিতে ভুলবেন না।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!