দর্শনা

চুয়াডাঙ্গা জেলা সদর থেকে মাত্র ২১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দর্শনা, যা বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সীমান্তবর্তী শিল্পনগরী হিসেবে পরিচিত। ১৮৬২ সালের ১৫ই নভেম্বর এখানেই দেশের প্রথম রেলপথ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন দর্শনা রেলওয়ে স্টেশন এখানকার অন্যতম উল্লেখযোগ্য স্থাপনা, যা সরাসরি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মৈত্রী ট্রেন চলাচলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

কেরু অ্যান্ড কোম্পানি: দর্শনার গর্ব

দর্শনাতে অবস্থিত কেরু অ্যান্ড কোম্পানি হলো এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ চিনিকল। প্রায় ৩,৫৭২ একর এলাকা জুড়ে গড়ে উঠা এই শিল্প কমপ্লেক্সে রয়েছে চিনি উৎপাদন কারখানা, ডিস্টিলারি ইউনিট, কৃষি খামার এবং জৈব সার উৎপাদনের ব্যবস্থা। এখানে মূলত চিনি উৎপাদিত হলেও পাশাপাশি স্পিরিট, মদ্যপ পানীয় ও জৈব সারও তৈরি হয়। এছাড়া দর্শনার এই কারখানা এলাকার ভেতরে একটি দোতলা গেস্ট হাউসসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন পিকনিক স্পট তৈরি হয়েছে, যা এখন পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়।

সীমান্ত বাণিজ্য ও যাতায়াত

দর্শনার স্থল ও রেলপথ সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ যাতায়াত করেন এবং বিভিন্ন পণ্য আমদানি-রপ্তানি করা হয়। এখানকার জিরো পয়েন্টের নিকটেই রয়েছে একটি স্থায়ী কাস্টমস চেকপোস্ট বা শুল্ক স্টেশন, যা সরকারের জন্য উল্লেখযোগ্য রাজস্ব আয়ের উৎস। এই শহর থেকে মাত্র ৩১ কিলোমিটার দূরত্বে বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাজধানী, ঐতিহাসিক মুজিবনগর অবস্থিত।

কিভাবে যাবেন

ঢাকার গাবতলী বা সায়েদাবাদ বাস স্ট্যান্ড থেকে শ্যামলী, পূর্বাশা, দর্শনা ডিলাক্স, চুয়াডাঙ্গা এক্সপ্রেস কিংবা রয়েল এক্সপ্রেসের মতো পরিবহন সংস্থার বাসে চুয়াডাঙ্গা যেতে পারবেন। বাস ভাড়ার পরিমাণ গন্তব্য ও সার্ভিস অনুযায়ী ৬৫০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে হতে পারে।

রেলপথে ঢাকা কমলাপুর থেকে চিত্রা, সুন্দরবন বা বেনাপোল এক্সপ্রেসে করে চুয়াডাঙ্গা যাওয়া যায়, যার ভাড়া ৪৬৫ থেকে ১,৫৯৩ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। চুয়াডাঙ্গা শহর থেকে দর্শনায় বাস কিংবা ট্রেনে যাওয়া যায়। দর্শনায় পৌঁছানোর পর স্থানীয় রিকশা কিংবা ভ্যানে করে কেরু অ্যান্ড কোং, দর্শনা রেল স্টেশন এবং ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস চেকপোস্ট ঘুরে দেখা যায়।

থাকার ব্যবস্থা

চুয়াডাঙ্গায় বিভিন্ন রকম আবাসিক হোটেল রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে সানড্রিয়াল হোটেল, হোটেল অবকাশ, হোটেল আল-আমিন, হোটেল আল-মেরাজ, অন্তরাজ আবাসিক হোটেল, প্রিন্স আবাসিক হোটেল, হোটেল সোনার বাংলা এবং হোটেল সুরমা উল্লেখযোগ্য।

খাওয়ার ব্যবস্থা

দর্শনায় সীমিত পরিসরে হালকা চা-নাস্তার ব্যবস্থা থাকলেও ভালো মানের খাবারের জন্য চুয়াডাঙ্গা শহরের হোটেল বা রেস্টুরেন্টে যাওয়া উত্তম। বিশেষ করে কলেজ রোড এলাকায় কিছু ভালো মানের খাবারের হোটেল রয়েছে। সময় পেলে চুয়াডাঙ্গার বিখ্যাত কালিপদের মিষ্টি অবশ্যই চেখে দেখতে পারেন।

চুয়াডাঙ্গার অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

দর্শনার পাশাপাশি চুয়াডাঙ্গা জেলায় আরো কিছু আকর্ষণীয় স্থান রয়েছে, যেমন মেহেরুন শিশু পার্ক, পুলিশ পার্ক, আট কবর এবং ঐতিহাসিক ঘোলদাড়ী শাহী মসজিদ।

দর্শনা এর দূরত্ব
ঢাকা থেকে দূরত্ব:
167.51 কিমি
চুয়াডাঙ্গা থেকে
13.8 কিমি
নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থান
কেরু এন্ড কোং
ঠাকুরপুর জামে মসজিদ
পুলিশ পার্ক
মেহেরুন শিশু পার্ক
আট কবর
ঘোলদাড়ী শাহী মসজিদ
মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্স
আমঝুপি নীলকুঠি
আমদহ গ্রামের স্থাপত্য
আলমডাঙ্গা বধ্যভূমি
জোহান ড্রীম ভ্যালী পার্ক
সাবিত্রী ও রসকদম্ব মিষ্টি
সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির
ঢোল সমুদ্র দীঘি
ভাটপাড়া নীলকুঠি
নীলকুঠি ও ডিসি ইকোপার্ক
নলডাঙ্গা রাজবাড়ি রিসোর্ট
ঝাউদিয়া শাহী মসজিদ
মিয়ার দালান
জোড় বাংলা মসজিদ

মন্তব্য

এখনো কোনো মন্তব্য নেই

প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!

আপনার মন্তব্য লিখুন