ভাটপাড়া নীলকুঠি

মেহেরপুর জেলা শহর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে গাংনী উপজেলার কাজলা নদীর তীরে ইতিহাসের এক নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ভাটপাড়া নীলকুঠি (Bhatpara Neelkuthi)। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত এই নীলকুঠিটি ১৮৫৯ সালে ২৭ একর জায়গাজুড়ে গড়ে তোলা হয়। ৮০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৭০ ফুট প্রস্থের এই স্থাপনাটি একসময় নীলচাষের অন্যতম কেন্দ্র ছিল।

স্থাপত্য ও নির্মাণশৈলী

ইট, চুন ও সুরকির সমন্বয়ে নির্মিত এই নীলকুঠির ছাদ তৈরি করা হয়েছে লোহার বিম ও ইটের টালি দিয়ে। মূল ভবনের পাশাপাশি এখনও টিকে আছে সাহেবদের প্রমোদ ঘর, শয়নকক্ষ, কাচারি ঘর, জেলখানা, মৃত্যুকূপ ও ঘোড়ার ঘর। ভবনের সামনেই রয়েছে একটি পুরোনো আমবাগান, আর দক্ষিণ পাশে রয়েছে একসময় নীলকুঠির কর্মকর্তাদের জন্য নির্মিত একটি চার্চের ধ্বংসাবশেষ।

প্রচলিত জনশ্রুতি অনুসারে, গভীর রাতে নীলকুঠি থেকে এখনো নর্তকীদের নূপুরের শব্দ এবং নির্যাতিত চাষিদের আর্তনাদ শোনা যায়!

পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে উন্নয়ন

নীলকুঠির পাশ দিয়ে বয়ে গেছে কাজলা নদী, যা এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তুলেছে। ২০১৬ সালে সরকারি উদ্যোগে ভাটপাড়া নীলকুঠিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়। এখানে কৃত্রিম লেক, ঝর্ণা, বিভিন্ন পশুপাখির মূর্তি, কিডস জোন ও আকর্ষণীয় ফুলের বাগান তৈরি করা হয়েছে। বর্তমানে এটি বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব বিভাগের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। প্রতিদিন বহু দর্শনার্থী ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটি দেখতে আসেন।

কিভাবে যাবেন?

ঢাকার গাবতলী থেকে পদ্মা সেতু হয়ে জেআর, শ্যামলী, এস এম, রয়েল এক্সপ্রেস, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর ডিলাক্স বাস সার্ভিসে সরাসরি মেহেরপুর যাওয়া যায়।

  • নন-এসি বাস ভাড়া: ৬০০-৭০০ টাকা
  • এসি বাস ভাড়া: ৮০০-১৩০০ টাকা

মেহেরপুর থেকে স্থানীয় পরিবহণে সহজেই ভাটপাড়া নীলকুঠিতে পৌঁছানো যাবে।

কোথায় থাকবেন?

মেহেরপুরে থাকার জন্য বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেল রয়েছে, যেমন:

  • হোটেল রনি
  • মেহেরপুর পৌর গেস্ট হাউজ
  • হোটেল অনাবিল
  • সোহাগ গেস্ট হাউজ
  • হোটেল ফিন টাওয়ার
  • হোটেল নাইট বিলাস
  • হোটেল শাহজাদী
  • হোটেল আটলান্টিকা
  • হোটেল প্রিন্স
  • হোটেল মিতা

কোথায় খাবেন?

চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর হাইওয়ের কাছে বেশ কিছু ভালো মানের রেস্টুরেন্ট রয়েছে, যেমন:

  • গালিব রেস্টুরেন্ট
  • ক্যাফে ইন
  • দাওয়াত রেস্টুরেন্ট
  • ইসলামিয়া হোটেল
  • ফিন ফুড রেস্টুরেন্ট
  • লা ভোগ

এছাড়া মেহেরপুরের বিখ্যাত সাবিত্রী মিষ্টি ও রসকদম্ব মিষ্টির স্বাদ অবশ্যই গ্রহণ করা উচিত!

মেহেরপুর জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ

ভাটপাড়া নীলকুঠি ছাড়াও মেহেরপুরে ঘুরে দেখার মতো আরও বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে, যেমন:

  • সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির
  • আমদহ গ্রামের স্থাপত্য
  • আমঝুপি নীলকুঠি
  • মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্স
  • ডিসি ইকোপার্ক

ইতিহাস, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ব্রিটিশ আমলের স্থাপত্য দেখতে চাইলে ভাটপাড়া নীলকুঠি ও মেহেরপুরের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে আসতে পারেন! 

ভাটপাড়া নীলকুঠি এর দূরত্ব
ঢাকা থেকে দূরত্ব:
174.01 কিমি
মেহেরপুর থেকে
10.62 কিমি
নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থান
নীলকুঠি ও ডিসি ইকোপার্ক
সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির
সাবিত্রী ও রসকদম্ব মিষ্টি
আমঝুপি নীলকুঠি
আমদহ গ্রামের স্থাপত্য
মেহেরুন শিশু পার্ক
আট কবর
মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্স
আলমডাঙ্গা বধ্যভূমি
পুলিশ পার্ক
ঠাকুরপুর জামে মসজিদ
ঘোলদাড়ী শাহী মসজিদ
কেরু এন্ড কোং
ঝাউদিয়া শাহী মসজিদ
দর্শনা
বাঘা মসজিদ
লালন শাহ সেতু
হার্ডিঞ্জ ব্রীজ
উৎসব পার্ক
পাকশী রিসোর্ট

মন্তব্য

এখনো কোনো মন্তব্য নেই

প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!

আপনার মন্তব্য লিখুন