বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলা থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরে সোনাকাটা ইউনিয়নে সুন্দরবনের একটি অংশ নিয়ে গড়ে উঠেছে টেংরাগিরি ইকোপার্ক (Tengra Giri Eco Park)। এই ইকোপার্কের পাশেই অবস্থিত সোনাকাটা সমুদ্র সৈকত, যা পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান। ১৯৬০ সালের ১২ জুলাই এই বনাঞ্চলকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। স্থানীয়দের কাছে এটি ফাতরার বন, পাথরঘাটার বন বা হরিণঘাটার বন নামে পরিচিত হলেও ১৯৬৭ সালে এর নামকরণ করা হয় টেংরাগিরি বন। সুন্দরবনের পর এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল, যা দিনে দুইবার জোয়ার-ভাটায় প্লাবিত হয়। লবণাক্ত ও মিষ্টি পানির মিশ্রণের কারণে এই বনে রয়েছে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির অসংখ্য গাছপালা, পশুপাখি ও সরীসৃপ। টেংরাগিরির ঘন সবুজ ম্যানগ্রোভ বন, সৈকতের কাঁকড়াদের ছোটাছুটি, পাখির কলতান এবং সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে। এ কারণে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে অনেকেই এখানে আসেন।
টেংরাগিরি বন প্রায় ৪০৪৮ হেক্টর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত, যার পূর্ব-পশ্চিমে ৯ কিলোমিটার এবং উত্তর-দক্ষিণে ৪ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃতি রয়েছে। বনের পূর্বে কুয়াকাটা, পশ্চিমে সুন্দরবন ও হরিণবাড়িয়া, উত্তরে রাখাইন এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত। এই বনে কেওড়া, গরাণ, সিংরা, হেতাল, গেওয়া, ওড়া সহ বিভিন্ন ম্যানগ্রোভ গাছপালা দেখা যায়। এছাড়াও এখানে রয়েছে মিঠাপানির পুকুর, ছোট ছোট খাল, বন বিভাগের রেস্ট হাউজ এবং পিকনিক কর্নার। বনের গহীনে দক্ষিণ দিকে এগিয়ে গেলে চোখে পড়বে ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সোনাকাটা সমুদ্র সৈকত। সৈকতে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে। এছাড়া ট্রলারে চড়ে বনের জীববৈচিত্র্য ও সমুদ্রের ঢেউ উপভোগ করা যায়।
২০১১-১২ অর্থবছরে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অধীনে টেংরাগিরি সংরক্ষিত বনাঞ্চলে সোনাকাটা ইকোপার্ক পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়। এই ইকোপার্কে একটি কুমির প্রজনন কেন্দ্র ছাড়াও হরিণ, শূকর, চিতা বাঘ, অজগর, বানর, শজারু ও বন বিড়ালের মতো বিভিন্ন বন্যপ্রাণী দেখা যায়। বর্তমানে এই বনকে শকুনের নিরাপদ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সড়ক ও নৌপথে বরগুনা যাওয়া যায়। ঢাকার সায়েদাবাদ বা গাবতলী থেকে বাসে তালতলী পৌঁছে সেখান থেকে মোটরসাইকেলে সোনাকাটা ইকোপার্ক যাওয়া যায়। নৌপথে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে পটুয়াখালী রুটের লঞ্চে বরগুনা যাওয়া যায়। এরপর বরগুনা থেকে বাসে আমতলী এসে মোটরবাইক বা ইজিবাইকে সোনাকাটা যাওয়া যায়। কুয়াকাটা থেকে লোকাল ট্রলার বা রিজার্ভ নিয়েও টেংরাগিরি ইকোপার্কে যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
কোথায় থাকবেন
বনে প্রবেশ করলে আমতলী ফরেস্ট রেস্টহাউজ চোখে পড়বে। কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে এখানে রাত্রিযাপন করা যায়। এছাড়া বরগুনা শহরে হোটেল আলম, হোটেল বে অফ বেঙ্গল, হোটেল তাজবিন, হোটেল বসুন্ধরা, হোটেল মৌমিতার মতো হোটেলেও থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।
কোথায় খাবেন
আমতলী-তালতলী-সোনাচর রোডে কিছু বাঙালি খাবারের রেস্তোরাঁ রয়েছে।
টেংরাগিরি ইকোপার্ক ভ্রমণ সতর্কতা:
বন বিভাগের নিয়ম মেনে চলুন।
সমুদ্র সৈকতে যাওয়ার পথে ভাঙা ব্রিজ পার হতে সাবধান থাকুন।
নিরাপত্তার জন্য গাইড নিন এবং নির্ধারিত ট্রেইল অনুসরণ করুন।
একা গহীন বনে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
শুকনো খাবার, ফাস্ট এইড বক্স ও পানির বোতল সাথে রাখুন।
পশুপাখিদের বিরক্ত করবেন না।
ময়লা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলুন।
বরগুনার দর্শনীয় স্থান
সোনাকাটার কাছে আশার চর ও তালতলী রাখাইন পল্লী ঘুরে দেখতে পারেন। এছাড়া বরগুনায় শুভসন্ধ্যা সমুদ্র সৈকত, লালদিয়া বন ও সমুদ্র সৈকত, হরিণঘাটা পর্যটন কেন্দ্র এবং বিবি চিনি মসজিদের মতো দর্শনীয় স্থান রয়েছে।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!