বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনভূমি সুন্দরবনের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান কটকা। এটি মোংলা বন্দর থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সুন্দরবনের মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে রয়েছে ৪০ ফুট উঁচু একটি ওয়াচ টাওয়ার। এখান থেকে কটকা সমুদ্র সৈকতের নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
কটকা সমুদ্র সৈকত ও আশপাশের পরিবেশ
স্থানীয়দের কাছে জামতলা সমুদ্র সৈকত নামে পরিচিত কটকা সৈকতটি বেশ নির্জন ও পরিচ্ছন্ন। বেলাভূমিতে চোখে পড়ে অসংখ্য কাঁকড়ার তৈরি অনন্য নকশা। সৈকতটি পূর্ব দিকে গিয়ে কচিখালির সঙ্গে মিলিত হয়েছে। তবে এখানে ঢেউয়ের প্রকৃতি বেশ পরিবর্তনশীল, আর অজ্ঞাত চোরাবালির কারণে সমুদ্রে নামা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
কটকায় যাতায়াত ব্যবস্থা
কটকায় যাওয়ার প্রধান মাধ্যম হলো লঞ্চ। সাধারণত পর্যটকবাহী লঞ্চগুলো কটকা খালে নোঙর করে। খালের পশ্চিম পাশে রয়েছে বন বিভাগের কার্যালয়, যেখান থেকে ইট বাঁধানো পথ ধরে কিছু দূর এগোলেই দেখা মেলে বন্য সৌন্দর্যে ভরা কটকা সমুদ্র সৈকত। সূর্যাস্ত উপভোগের জন্য এটি একটি আদর্শ স্থান।
বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি
বন বিভাগের কার্যালয়ের পেছনে কাঠের তৈরি পথ ধরে কেওড়ার বনের নিরিবিলি স্থানে গেলে চিত্রা হরিণের দেখা মেলে। এছাড়া এখানে বানর, বন্য শুকর, বনবিড়ালসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি দেখতে পাওয়া যায়। শীতকালে কুমিরের উপস্থিতিও লক্ষ্য করা যায়। বনের দক্ষিণে তিনটি টাইগার টিলায় প্রায়ই বাঘের পায়ের ছাপ দেখা যায়। পূর্ব দিকে রয়েছে ঘন বন ও একটি মিঠা পানির পুকুর, যা বনকর্মী, কোস্টগার্ড ও স্থানীয় জেলেদের একমাত্র পানির উৎস।
ভ্রমণ খরচ
সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে প্রবেশের জন্য ভ্রমণ ফি নির্ধারিত:
- দেশি পর্যটক: প্রতিদিন জনপ্রতি ১৫০ টাকা
- ছাত্র-ছাত্রী: ৩০ টাকা
- বিদেশি পর্যটক: ১৫০০ টাকা
- গবেষক: ৪০ টাকা
করমজল এলাকায় দেশি পর্যটকদের জন্য ফি ২০ টাকা, আর বিদেশিদের জন্য ৩০০ টাকা।
লঞ্চ, স্পিডবোট, ট্রলার এবং হেলিকপ্টারের জন্য নির্দিষ্ট ফি রয়েছে, যা লঞ্চের আকার ও ধরণভেদে ভিন্ন হতে পারে।
কিভাবে যাবেন?
সুন্দরবনে যেতে চাইলে পর্যটন সংস্থাগুলোর মাধ্যমে কটকা ভ্রমণের ব্যবস্থা করা যায়।
- ঢাকা থেকে গাবতলী ও সায়েদাবাদ থেকে বাসযোগে বাগেরহাট বা খুলনা যাওয়া যায়।
- মেঘনা পরিবহন, পর্যটক পরিবহন, সাকুরা পরিবহন ও সোহাগ পরিবহন— এসব বাসে খুলনা বা মোংলা পৌঁছে লঞ্চে করে কটকা যাওয়া যায়।
- চাইলে ট্রেনে খুলনা পৌঁছে সেখান থেকে নৌপথে সুন্দরবনে যাওয়া সম্ভব।
কোথায় থাকবেন?
সুন্দরবনের টাইগার পয়েন্ট, কচিখালী ও হিরণ পয়েন্টে বন বিভাগের রেস্টহাউজ রয়েছে।
- নীলকমল ও কচিখালী রেস্টহাউজ: দেশি পর্যটকদের জন্য জনপ্রতি ৩,০০০ টাকা, বিদেশিদের জন্য ৫,০০০ টাকা।
- কটকা রেস্টহাউজ: দেশি পর্যটকদের জন্য ২,০০০ টাকা, বিদেশিদের জন্য ৫,০০০ টাকা।
আবাসিক সুবিধা:
- বাগেরহাট ও মোংলায় কিছু সাধারণ মানের হোটেল রয়েছে।
- খুলনায় হোটেল রয়েল, ক্যাসেল সালাম, টাইগার গার্ডেন, সিটি ইন, মিলেনিয়ামসহ বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে।
- সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও মুন্সিগঞ্জ এলাকায় এনজিও পরিচালিত রেস্টহাউজ ও ডরমেটরিতে থাকা যায়।
সুন্দরবন ভ্রমণের আদর্শ সময়
সুন্দরবনে ভ্রমণের জন্য শীতকাল (নভেম্বর-ফেব্রুয়ারি) সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। বিশেষ করে রাস পূর্ণিমার সময় তীর্থযাত্রীরা এখানে সমবেত হন।
সতর্কতা ও পরামর্শ
- অনুমোদিত ট্যুর অপারেটরের মাধ্যমে ভ্রমণ করা ভালো।
- জোয়ার-ভাটার কারণে সমুদ্র সৈকতে সাবধানে চলাফেরা করা উচিত।
- বাঘ, কুমির ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীর বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
সুন্দরবনের কটকা প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক অনন্য গন্তব্য যেখানে নির্জন সৈকত, বৈচিত্র্যময় বন্যপ্রাণী ও অদ্ভুত সুন্দর পরিবেশ মুগ্ধ করবে যে কোনো ভ্রমণপিপাসুকে।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!