ফাতরার চর বা ফাতারার বন কুয়াকাটার পশ্চিমে ৯,৯৭,৫০৭ একর জমি জুড়ে বিস্তৃত। এটি দ্বিতীয় সুন্দরবন নামে পরিচিত। এই বনে গেওয়া, সুন্দরী, কেওড়া, ফাতরা, গরান, গোলপাতা, বাইনসহ নানা ধরনের ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ রয়েছে। এছাড়াও বানর, শূকর, বিভিন্ন পাখি, সাপ ও গুইসাপের মতো সরীসৃপও এখানে দেখা যায়। সুন্দরবনের মতো ফাতরার চরও দিনে দুবার জোয়ার-ভাটায় প্লাবিত হয়।
ফাতরার চরের খালে প্রবেশ করলে দুপাশের ঘন সবুজ বন দেখে মুগ্ধ হতে হয়। চরের ভেতরে প্রবেশ করলে প্রথমেই চোখে পড়ে একটি শান-বাঁধানো পুকুর ও বন বিভাগের রেস্টহাউস। এই পুকুরটি চরের অস্থায়ী বাসিন্দাদের মিঠাপানির প্রধান উৎস। সাধারণত বন বিভাগের কর্মী ছাড়া এখানে স্থায়ীভাবে কেউ বসবাস করে না। চরের পূর্ব দিকে একটি ছোট সমুদ্র সৈকত রয়েছে, ভাটার সময় এখানে সহজেই স্নান করা যায়।
ফাতরার চর ভ্রমণের সময়
নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত ফাতরার চরে ঘুরার অনুমতি মেলে, তবে মাত্র দুই ঘণ্টার জন্য।
ফাতরার চর যাওয়ার উপায়
ফাতরার চর দেখতে হলে প্রথমে কুয়াকাটা যেতে হবে। কুয়াকাটা থেকে প্রতিদিন বেশ কিছু ট্রলার ফাতরার চরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। জনপ্রতি ভাড়া ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা (মৌসুমভেদে ভিন্ন)। অথবা ট্রলার রিজার্ভ করেও ২ ঘণ্টায় ফাতরার চরে পৌঁছানো যায়।
ঢাকা থেকে কুয়াকাটা যাওয়ার জন্য নদী ও সড়ক পথ দুটিই রয়েছে। ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চে পটুয়াখালী বা বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা যাওয়া যায়। বাসে যেতে চাইলে ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা যাওয়া যায়। তবে নদীপথে যাওয়াই সবচেয়ে আরামদায়ক। ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে লঞ্চে পটুয়াখালী গিয়ে সেখান থেকে বাসে কুয়াকাটা যাওয়া যায়। অথবা লঞ্চে বরিশাল গিয়ে সেখান থেকে বাসে কুয়াকাটা যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
ঢাকা থেকে লঞ্চে কুয়াকাটা
পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় লঞ্চে যাত্রী সংখ্যা কমে গেছে। তাই লঞ্চে যেতে চাইলে আগে থেকে ভালো সার্ভিসের লঞ্চের খোঁজ নিতে হবে। সদরঘাট থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যায় পটুয়াখালীর উদ্দেশ্যে লঞ্চ ছাড়ে, যা সকাল ৭টার দিকে পটুয়াখালী পৌঁছায়। লঞ্চের ভাড়া ডেকে ৪০০-৫০০ টাকা, সিঙ্গেল কেবিন ১,৩০০ টাকা, ডাবল কেবিন ২,৪০০ টাকা এবং ভিআইপি কেবিন ৭,০০০ টাকা।
পটুয়াখালী লঞ্চ ঘাট থেকে অটোতে বাস স্ট্যান্ড গিয়ে লোকাল বাসে কুয়াকাটা যাওয়া যায়। সময় লাগবে প্রায় ২ ঘণ্টা, বাস ভাড়া ১৫০-১৬০ টাকা।
এছাড়া সদরঘাট থেকে সন্ধ্যার পর বরিশালের উদ্দেশ্যে একাধিক লঞ্চ ছাড়ে, যা ভোরে বরিশাল পৌঁছায়। বরিশাল লঞ্চঘাট থেকে রূপাতলী বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে কুয়াকাটার বাস পাওয়া যায়। বাসে যেতে সময় লাগবে প্রায় ৩ ঘণ্টা, ভাড়া ১৮০-২৫০ টাকা।
বাসে ঢাকা থেকে কুয়াকাটা
ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে কুয়াকাটার দূরত্ব প্রায় ২৯৪ কিলোমিটার। বাসে যেতে সময় লাগবে ৬-৭ ঘণ্টা। ঢাকার সায়েদাবাদ, আবদুল্লাপুর, আরামবাগ বা গাবতলী বাস স্ট্যান্ড থেকে সাকুরা পরিবহন, শ্যামলী, গ্রীনলাইন, ইউরো কোচ, হানিফ, টি আর ট্রাভেলসের মতো পরিবহনগুলোর বাস সরাসরি কুয়াকাটা যায়। ঢাকা থেকে কুয়াকাটা নন-এসি বাসের ভাড়া ৭৫০-৯০০ টাকা এবং এসি বাসের ভাড়া ১,১০০-১,৬০০ টাকা।
ফাতরার চরে থাকার ব্যবস্থা
ফাতরার চরে কোন আবাসন ব্যবস্থা নেই, তবে অনুমতি নিয়ে বন বিভাগের রেস্টহাউসে রাত্রিযাপন করা যায়। কুয়াকাটায় বিভিন্ন মানের হোটেল রয়েছে, যেখানে ৪০০ থেকে ৫,০০০ টাকায় থাকা যায়। শেয়ার করে থাকলে খরচ কম হবে। সিজন ও সরকারি ছুটির দিন ছাড়া সাধারণত আগে থেকে বুকিংয়ের প্রয়োজন হয় না। তবে দামাদামি করে নেওয়া ভালো।
খাবারের ব্যবস্থা
ফাতরার চরে যাওয়ার সময় হালকা খাবার সঙ্গে নিয়ে যাওয়াই ভালো, কারণ এখানে মাত্র একটি দোকান আছে। এই দোকানে মোটা চালের ভাত ও মুরগির মাংস ছাড়া তেমন কিছু পাওয়া যায় না।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!