চর বিজয়

সাগরকন্যা কুয়াকাটার পূর্বে গঙ্গামতী জঙ্গলের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে উঠা মনোমুগ্ধকর এক দ্বীপের নাম চর বিজয় (Chor Bijoy)। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে একদল ভ্রমণপিপাসু অভিযাত্রী পটুয়াখালী জেলার এই দ্বীপের সন্ধান পায়। বিজয়ের মাসে আবিষ্কারের কারণে দ্বীপটির নামকরণ করা হয় ‘চর বিজয়’ বা The Victory Island। তবে স্থানীয় জেলেদের কাছে এটি হাইরের চর (মাছ ধরার নির্ধারিত সীমানা) নামে বেশি পরিচিত। জনবসতিহীন এই দ্বীপের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য ও সমুদ্রের বিশাল জলরাশি আগত সব ভ্রমণকারীদের মুগ্ধ করে। এডভেঞ্চারপ্রেমী পর্যটকরা ক্যাম্পিংয়ের জন্য চর বিজয়কে তাদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে রাখেন।

প্রায় ৫ হাজার একর জায়গা জুড়ে গড়ে উঠা নান্দনিক সৌন্দর্যের চর বিজয় দ্বীপের দৈর্ঘ্য ১০ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ৩ কিলোমিটার। এখানে রয়েছে লাল কাঁকড়া, হাজারো অতিথি পাখির বিচরণ এবং দ্বীপের স্বচ্ছ পানিতে অসংখ্য সামুদ্রিক মাছের আবাসস্থল। এছাড়া দ্বীপের চারদিকে গোলপাতা, ছইলা, কেওড়া ও সুন্দরী গাছসহ প্রায় ২ হাজার ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছের চারা লাগানো হয়েছে। ঋতুভেদে চর বিজয়ের প্রকৃতিতে দেখা যায় নানা বৈচিত্র্যময় পরিবর্তন। বর্ষায় দ্বীপটি সাগরের জলরাশিতে ডুবে থাকে, তবে শীতকালে ধু ধু বালুচরের দেখা মেলে।

চর বিজয় দ্বীপ প্রান্তিক জেলেদের অস্থায়ী আবাসস্থল বা ডেরা হিসাবে বেশ জনপ্রিয়। জেলেরা এখানে প্রায় দুই থেকে তিন মাস মাছ শিকার করে শুঁটকি তৈরি ও বিক্রি করে। তাই সমুদ্রের প্রতিকূলতার মাঝে অবস্থান করা জেলেদের সাথে রাতে ক্যাম্পিং করে থাকার অভিজ্ঞতা নিঃসন্দেহে এক ভিন্ন অনুভূতি দেবে। এছাড়াও চর বিজয় থেকে সমুদ্রের বুকে ভেসে উঠা সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের চমৎকার দৃশ্য সারাজীবন মনে রাখার মতো।

কিভাবে যাবেন

নদী ও সড়ক পথে ঢাকা থেকে কুয়াকাটা যাওয়া যায়। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় সড়ক পথে ঢাকা থেকে কুয়াকাটা অনেক কম সময়ে এবং সহজে যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে কুয়াকাটার দূরত্ব প্রায় ২৯৪ কিলোমিটার। বাসে যেতে সময় লাগবে প্রায় ৬-৭ ঘন্টা। ঢাকার সায়েদাবাদ, আবদুল্লাপুর, আরামবাগ অথবা গাবতলী বাস স্ট্যান্ড থেকে সাকুরা পরিবহন, শ্যামলী, গ্রীনলাইন, ইউরো কোচ, হানিফ, টি আর ট্রাভেলস সহ আরও অনেক পরিবহনের বাস সরাসরি কুয়াকাটা যায়। ঢাকা থেকে কুয়াকাটা নন-এসি বাসের ভাড়া ৭৫০-৯০০ টাকা এবং এসি বাসের ভাড়া ১১০০-১৬০০ টাকা।

সদরঘাট থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যায় পটুয়াখালি যাবার লঞ্চ ছেড়ে যায় এবং সকাল ৭টার দিকে পটুয়াখালি পৌঁছায়। লঞ্চ ভাড়া ডেক ৪০০-৫০০ টাকা, সিঙ্গেল কেবিন ১৩০০ টাকা, ডাবল কেবিন ২৪০০ টাকা, ভিআইপি কেবিন ভাড়া ৭০০০ টাকা। পটুয়াখালী লঞ্চ ঘাট থেকে অটোতে বাস স্ট্যান্ড গিয়ে লোকাল বাসে কুয়াকাটা যেতে হবে। যেতে সময় লাগবে ২ ঘন্টার মতো, আর বাস ভাড়া ১৫০-১৬০ টাকা।

কুয়াকাটা থেকে ট্যুরিস্ট বোটে করে চর বিজয় যেতে মাত্র দেড় ঘন্টা সময় লাগে। আর বরগুনা জেলার সোনাকাটা হয়ে চর বিজয় যেতে সময় লাগে দুই ঘন্টা।

কোথায় থাকবেন

অনেকেই এই দ্বীপে ক্যাম্পিং করে থাকতে পছন্দ করে। এক্ষেত্রে জেলেদের সাথেও ক্যাম্পিং করে থাকতে পারবেন। এছাড়া কুয়াকাটায় ইয়ুথ ইন হোটেল, হোটেল গ্রেভার ইন, সি ভিউ হোটেল, সিকদার রিসোর্ট, কুয়াকাটা গ্র্যান্ড হোটেল, ম্যানগ্রোভ হোটেল, পর্যটন মোটেল, হোটেল বীচ হ্যাভেন, সি গার্ল প্রভৃতি আবাসিক হোটেল রয়েছে।

কোথায় খাবেন

কুয়াকাটার জিরো পয়েন্টে জয়, হোটেল সানরাইজ, বার্মা হোটেল, রামজান রেস্তোরা, অতিথি ও বৈশাখী সহ বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট পাবেন।

ভ্রমণ পরামর্শ

চর বিজয়ে কোন দোকানপাট নেই তাই কুয়াকাটা থেকে প্রয়োজনীয় শুকনো খাবার ও পানি সাথে নিয়ে যান।
সকাল সকাল চর বিজয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দিলে বিকেলের মধ্যে কুয়াকাটায় ফিরে আসতে পারবেন।

অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

পটুয়াখালীর অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত, পানি জাদুঘর, সোনারচর ও ফাতরার চর উল্লেখযোগ্য।

চর বিজয় এর দূরত্ব
ঢাকা থেকে দূরত্ব:
231.58 কিমি
পটুয়াখালী থেকে
70.85 কিমি
নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থান

মন্তব্য

এখনো কোনো মন্তব্য নেই

প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!

আপনার মন্তব্য লিখুন