কচিখালী সমুদ্র সৈকত

সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জে অবস্থিত কচিখালী সমুদ্র সৈকত এক অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। এটি কটকা নদীর পূর্বদিকে অবস্থিত, যেখানে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ও সমুদ্রের মোহনায় একত্রিত হয়েছে এক অপূর্ব পরিবেশ। এই সৈকতকে অনেকে “ভয়ংকর সুন্দর” বলেও ডাকেন, কারণ এখানে পৌঁছাতে হলে বঙ্গোপসাগরের উত্তাল কটকা নদী আর প্রায় তিন কিলোমিটার বনাঞ্চল পেরোতে হয়। এই পথে হরিণের পাল, বন্য শুকর এমনকি বাঘের পায়ের ছাপও দেখা যেতে পারে।

অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের স্বর্গ

বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে ঘন জঙ্গলের ভিতর দিয়ে হাঁটলেই পৌঁছে যাবেন কচিখালীর সীমানায়। বনের শেষ প্রান্তেই দেখা মেলে কচিখালী সমুদ্র সৈকতের। পশুর, কেওড়া, বাইন ও সুন্দরী গাছে ঘেরা এই অরণ্যে রয়েছে অসংখ্য পাখি ও বন্যপ্রাণীর বাসস্থান। বিশেষ করে চিত্রা হরিণ, মায়া হরিণ, বনমোরগ, বানর, অজগর সাপসহ অনেক প্রজাতির প্রাণী এই এলাকায় দেখতে পাওয়া যায়। ভাগ্য ভালো থাকলে রয়েল বেঙ্গল টাইগারও দেখা যেতে পারে।

মোহনায় জলজ প্রাণীদের আনাগোনা

কটকা নদীর মোহনায় কুমির, শুশুক ও ডলফিনের উপস্থিতি এই অঞ্চলকে আরও বৈচিত্র্যময় করে তুলেছে। লবণাক্ত জলের কচিখালী সৈকত ও ম্যানগ্রোভ বন, ৪০ ফুট উচ্চতার ওয়াচ টাওয়ার এবং সবুজে ঘেরা পরিবেশ যেন প্রকৃতির এক চিত্রশালা। সূর্যাস্তের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য এই সৈকতের অন্যতম আকর্ষণ।

প্রবেশ ফি ও অন্যান্য খরচ

অভয়ারণ্য এলাকার প্রবেশ ফি (প্রতিদিন):

  • দেশি পর্যটক: ১৫০ টাকা
  • ছাত্র-ছাত্রী: ৩০ টাকা
  • বিদেশি পর্যটক: ১৫০০ টাকা

অভয়ারণ্যের বাইরে:

  • দেশি পর্যটক: ৭০ টাকা
  • ছাত্র-ছাত্রী: ২০ টাকা
  • বিদেশি পর্যটক: ১০০০ টাকা
  • গবেষক: ৪০ টাকা

করমজল এলাকায়:

  • দেশি: ২০ টাকা
  • বিদেশি: ৩০০ টাকা

যানবাহনের ফি (এককালীন + নবায়ন):

  • হেলিকপ্টার/সী-প্লেন: ৩০,০০০ + ১০,০০০ টাকা
  • ১০০ ফুটের বেশি লঞ্চ: ১৫,০০০ + ৪,০০০ টাকা
  • ৫০-১০০ ফুট লঞ্চ: ১০,০০০ + ৩,০০০ টাকা
  • ৫০ ফুটের নিচে নৌযান: ৭,৫০০ + ২,৫০০ টাকা
  • সাধারণ ট্রলার: ৩,০০০ + ১,৫০০ টাকা
  • স্পিডবোট: ৫,০০০ + ২,০০০ টাকা
  • ট্যুরিস্ট জালিবোট: ২,০০০ + ১,০০০ টাকা

অন্যান্য খরচ:

  • গাইড: ৫০০ টাকা
  • নিরাপত্তা গার্ড: ৩০০ টাকা
  • লঞ্চ ক্রু: ৭০ টাকা
  • টেলিকমিউনিকেশন: ২০০ টাকা
  • ভিডিও ক্যামেরা (দেশি): ২০০ টাকা
  • ভিডিও ক্যামেরা (বিদেশি): ৩০০ টাকা

রাস পূর্ণিমার সময়:

  • তীর্থযাত্রী (৩ দিন): ৫০ টাকা
  • নিবন্ধিত ট্রলার: ২০০ টাকা
  • অনিবন্ধিত ট্রলার: ৮০০ টাকা
  • প্রতিদিনের ট্রলার অবস্থান: ২০০ টাকা

যেভাবে যাবেন

কচিখালী ভ্রমণের জন্য লঞ্চই সবচেয়ে সহজ মাধ্যম। কটকা হয়ে পূর্ব দিকে কিছুদূর এগোলেই পৌঁছে যাবেন কচিখালীতে। চাইলে ট্যুর এজেন্সির মাধ্যমে গ্রুপ ট্যুরে অংশ নিতে পারেন। “ভ্রমণ”, “এভারগ্রীন ট্রাভেল বাংলাদেশ”, “ট্যুর ডট কম ডট বিডি” সহ অনেক প্রতিষ্ঠান সুন্দরবনে প্যাকেজ ট্যুর পরিচালনা করে।

নিজে যেতে চাইলে ঢাকা থেকে গাবতলী বা সায়েদাবাদ থেকে মেঘনা, পর্যটক, সাকুরা, বা সোহাগ পরিবহনের বাসে বাগেরহাট যেতে পারেন। ট্রেনেও খুলনা পৌঁছে, সেখান থেকে রূপসা ঘাট, মোংলা বা শরণখোলা থেকে লঞ্চ বা নৌযান ভাড়া করতে পারবেন।

কোথায় থাকবেন

সাধারণত পর্যটকেরা কটকা বা কচিখালীতে রাত কাটান। অনেকেই নৌযানে রাত্রিযাপন পছন্দ করেন। বন বিভাগের রেস্ট হাউজ রয়েছে কচিখালী, কটকা ও হিরণ পয়েন্টে। মোংলায় ট্যুরিস্ট হোটেল, পশুর বন্দরে থাকার ব্যবস্থা এবং শ্যামনগরে কিছু সাধারণ হোটেল ও গেস্ট হাউজ রয়েছে। বুকিং নিশ্চিত করার জন্য আগেই বন বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

খাবারের ব্যবস্থা

যারা ট্যুর প্যাকেজে যাচ্ছেন তাদের জন্য খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা প্যাকেজের মধ্যেই থাকে। আর বন বিভাগের রেস্ট হাউজে থাকলে পূর্ব যোগাযোগে খাবারের ব্যবস্থা পাওয়া সম্ভব।

ভ্রমণের সতর্কতা

  • সৈকতের ঢেউ ও চোরাবালির কারণে সমুদ্রে নামা ঝুঁকিপূর্ণ।
  • খালে কুমির থাকতে পারে, সাবধানতা জরুরি।
  • নিরাপত্তা নিশ্চিত করে বনভ্রমণ করুন।
  • সাপ ও বাঘের উপস্থিতির সম্ভাবনা মাথায় রেখে চলাফেরা করুন।
  • গাইড ছাড়া অচেনা পথে হাঁটবেন না।
  • উজ্জ্বল পোশাক পরিহার করুন।
  • সন্ধ্যার আগে নিরাপদ স্থানে ফিরতে ভুলবেন না।
কচিখালী সমুদ্র সৈকত এর দূরত্ব
ঢাকা থেকে দূরত্ব:
225.34 কিমি
বাগেরহাট থেকে
89.4 কিমি
নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থান
কটকা সমুদ্র সৈকত
হরিণঘাটা পর্যটন কেন্দ্র
লালদিয়া বন ও সমুদ্র সৈকত
টেংরাগিরি ইকোপার্ক
শুভ সন্ধ্যা সমুদ্র সৈকত
ফাতরার চর
লেবুর চর
দুবলার চর
মিশ্রিপাড়া সীমা বৌদ্ধ মন্দির
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত
পানি জাদুঘর
হিরণ পয়েন্ট
চর বিজয়
বঙ্গবন্ধু নৌকা জাদুঘর

মন্তব্য

এখনো কোনো মন্তব্য নেই

প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!

আপনার মন্তব্য লিখুন