সস্তায় বিমান টিকেট কেনার এক ১০ টিপস

সস্তায় বিমান টিকেট কেনার এক ১০ টিপস

অতীতের দিনে দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে পৌঁছাতে বছর-বছর সময় লাগত, কারণ যাত্রা হতো প্রধানত জাহাজে। জুল ভার্ন তার গল্প ‘আশি দিনে বিশ্বভ্রমণ’-এ দেখিয়েছেন, শুধু জাহাজ নয়, বেলুনে চড়েও আকাশপথে পৃথিবী ঘুরে আসা সম্ভব—এবং তা অনেক দ্রুত। বেলুনের পর উড়োজাহাজ আবিষ্কার হলে আকাশপথে যাতায়াত তীব্রগতিতে বাড়তে শুরু করে, যেন সময় আর দূরত্ব হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। প্লেনে করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে দ্রুত পৌঁছানো যাচ্ছে, কিন্তু এই দ্রুততার বিনিময়ে অনেক সময় ভ্রমণের খরচও বেড়ে যায়। তবে প্লেনের টিকেট সবসময়ই দামি হয় এমন নয়। নিচে সস্তায় প্লেনের টিকেট কিভাবে বুক করা যায় তার কিছু টিপস দেওয়া হলো।

১. যত দ্রুত টিকেট বুক করবেন, ততই কম দাম পাবেন

আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে যত আগে টিকেট কেটে নেওয়া হবে, ততই সস্তা হবে। অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটেও এই নিয়ম প্রযোজ্য। তাই ভ্রমণের পরিকল্পনা থাকলে কমপক্ষে ৬০ দিন আগেই টিকেট বুক করুন। যাত্রার মাত্র ৭ দিন বা ২ দিন আগে টিকেট কাটলে দাম অনেকটাই বাড়ে, যা প্রায় ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ বেশি হতে পারে।

২. ট্রাভেল এজেন্টের ওপর নির্ভর কম করুন

ফ্লাইট বুকিংয়ের জন্য সরাসরি নিজে খোঁজ নিয়ে অনলাইনে বুক করা ভালো। কারণ অনেক ট্রাভেল এজেন্টের বিমান কোম্পানির সাথে চুক্তি থাকে, তারা নিজেদের কমিশন বাড়াতে আপনার পছন্দ মতো সস্তা টিকেট দেওয়ার বদলে লাভজনক ফ্লাইট বুক করাতে পারে, যার ফলে দাম বাড়ে।

৩. অনলাইন অ্যাপ বা বুকিং সাইট ব্যবহার করুন

বুকিং সাইট বা অ্যাপ থেকে আগেভাগেই টিকেট দেখে নেওয়া উচিত। এসব সাইট তুলনামূলক সস্তা টিকেট অফার করে এবং মাঝে মাঝে বিশেষ ছাড় দেয়। যেমন বুকিং.কম, এক্সপিডিয়া, মেকমাইট্রিপ ইত্যাদি। বর্তমানে ‘স্কাইস্যানার’ অ্যাপটি অনেক জনপ্রিয়, কারণ এটি একাধিক বুকিং সাইট একসাথে সার্চ করে সবচেয়ে সস্তা ফ্লাইট খুঁজে দেয় এবং দাম কমলে এলার্ট দেয়।

৪. প্রাইভেট ব্রাউজিং মোড ব্যবহার করুন

ফ্লাইট সার্চ করার সময় ব্রাউজারের ‘ইনকগনিটো’ বা ‘প্রাইভেট’ মোড চালু রাখুন। না হলে আপনার ব্রাউজিং তথ্য কুকিজের মাধ্যমে সংরক্ষিত হয়ে যায়, যা বিমান সংস্থা দেখে দাম বাড়াতে পারে। প্রাইভেট মোডে সার্চ করলে পরে বুক করার সময় টিকেট সস্তা পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

৫. ভিপিএন বা প্রক্সি ব্যবহার করুন

প্রাইভেট ব্রাউজিংয়ের পাশাপাশি ভিপিএন বা প্রক্সি ব্যবহার করে নিজের অবস্থান লুকিয়ে রাখুন। অনেক বিমান সংস্থা আপনার ডিভাইসের আইপি অ্যাড্রেস লগ করে রাখে এবং সার্চ ইতিহাস থেকে দাম বাড়াতে পারে। ভিপিএন ব্যবহারে এড়ানো যায় এসব।

৬. ছুটির দিনে ফ্লাইট টিকেট এড়িয়ে চলা

ছুটির দিনগুলোতে যেমন বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবারে ফ্লাইট টিকেটের দাম বাড়ে। তাই এই দিনগুলোতে টিকেট কাটার থেকে আগে বা পরে বুকিং করা ভালো।

৭. সপ্তাহের মাঝের দিনে ফ্লাইটের সুযোগ নেওয়া

সোম, মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবারে টিকেটের দাম সাধারণত কম থাকে। বিশেষ করে মঙ্গলবারের টিকেট প্রায় ১০% কম খরচ হয়, তাই এই দিনে বুকিং করলে সাশ্রয় হয়।

৮. রাউন্ড ট্রিপ টিকেটের সুবিধা

কিছু ক্ষেত্রে সিঙ্গেল ওয়ান-ওয়ে টিকেটের চেয়ে রিটার্ন টিকেট সস্তা হতে পারে, তবে কোম্পানি এবং সময় অনুসারে ভিন্ন হতে পারে। আন্তর্জাতিক ট্রানজিটের ক্ষেত্রে একই এয়ারলাইন্সের টিকেট নেওয়া ভালো।

৯. সরাসরি বিমান কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ

বিমান সংস্থার অফিসে গিয়ে, ইমেইল বা কাস্টমার সার্ভিসে ফোন করে কম দামে টিকেট পাওয়া যেতে পারে। যদিও বিভিন্ন কোম্পানির সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগ রাখা সময়সাপেক্ষ।

১০. নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব এবং শেষ মুহূর্তের সুযোগ নেওয়া

বুকিং সাইট এবং এয়ারলাইন্সের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করলে শেষ মুহূর্তে বড় ডিসকাউন্ট পেতে পারেন, কারণ তারা বেচতে না পারা সিট শেষ মুহূর্তে কম দামে বিক্রি করে।

টিকেট কেনার আগে সতর্কতা

অনলাইনে টিকেট কেনার সময় সার্ভিস চার্জ, মালপত্র ও খাবারের খরচ ইত্যাদি আলাদাভাবে খেয়াল করতে হবে। সস্তা টিকেট দেখেই হুট করে বুকিং করা ঠিক নয়, কারণ অতিরিক্ত চার্জে দাম অনেক বেড়ে যেতে পারে।

উপসংহার

যদি উপরের টিপসগুলো অনুসরণ করা হয়, তাহলে উড়োজাহাজ শুধু ধনীর জন্য নয়, সবার জন্য সাশ্রয়ী ও সহজে পৌঁছানোর মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে। আশা করি এই পরামর্শগুলো আপনার ফ্লাইট বুকিং আরও সুবিধাজনক করবে।

মন্তব্য