
কলকাতা (Kolkata), যার পুরনো নাম কলিকাতা (Calcutta), হলো ভারতের পূর্বাঞ্চলের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী এবং সবচেয়ে বড় শহর। এটি ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত এবং হুগলি নদীর পূর্ব তীরে অবস্থিত। এক সময় এই শহরটি দেশের শিক্ষা, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির প্রধান কেন্দ্র ছিল। কম খরচে বিদেশ ভ্রমণ, কেনাকাটা বা চিকিৎসার জন্য কলকাতা এখন বাংলাদেশের মানুষের প্রথম পছন্দের গন্তব্য। চলুন, জেনে নেই একটি মানসম্পন্ন কলকাতা ভ্রমণ পরিকল্পনা।
কলকাতা ভ্রমণ পরিকল্পনা
কলকাতায় আপনি কোথায় কোথায় ঘুরবেন এবং কখন কোথায় থাকবেন তা ঢাকা থেকেই একটি খসড়া তৈরি করে নিন। কলকাতার সকল দোকানপাট সাধারণত রাত ৮:০০ থেকে ৮:৩০টার মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। তাই সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ঘোরাঘুরি করার জন্য সময় বরাদ্দ রাখুন এবং বিকেল থেকে শপিং করুন। এতে আপনার সময়ের সঠিক ব্যবহার হবে। মোটামুটি ৫ দিনে কলকাতা ভ্রমণের পরিকল্পনা এই রকম হতে পারে:
প্রথম দিন:
বাস/ট্রেন/বিমানযোগে কলকাতা পৌঁছান। চেষ্টা করবেন ভোরে কলকাতা পৌঁছাতে, যাতে সময় হাতে বেশি থাকে। হোটেলে চেক-ইন করে একটু বিশ্রাম নিন। এরপর কলকাতা মিউজিয়াম ঘুরে নিউ মার্কেট যেতে পারেন।

দ্বিতীয় দিন:
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল এবং সায়েন্স সিটি দর্শন করুন।
তৃতীয় দিন:
হাওড়া ব্রিজ, হাওড়া রেলস্টেশন, ইডেন গার্ডেন ও ময়দান ঘুরে দেখুন।
চতুর্থ দিন:
সারা দিন শপিং করতে পারেন অথবা অন্য কিছু আকর্ষণীয় স্থান ঘুরে দেখতে পারেন।
পঞ্চম দিন:
ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করুন।
কলকাতায় যাতায়াত
ঢাকা থেকে কলকাতা যাত্রা এখন অনেক সহজ হয়েছে। আপনি স্থলপথ বা আকাশপথ যেকোনো পথে যেতে পারেন। তবে প্রথমেই প্রয়োজন ইন্ডিয়ান ভিসা, যা আপনি ইন্ডিয়ান ভিসা আবেদন কেন্দ্র (আইভ্যাক) থেকে আবেদন করে পেতে পারেন।

ঢাকায় আগে কয়েকটি আইভ্যাক সেন্টার ছিল, এখন সব বন্ধ হয়ে যমুনা ফিউচার পার্কে নতুন আইভ্যাক সেন্টার চালু হয়েছে। ওয়েবসাইট থেকে ফর্ম পূরণ করে প্রিন্ট করে এখানে জমা দিতে হয়। সব ঠিকঠাক থাকলে প্রায় ৭ দিনের মধ্যে ভিসা পেয়ে যাবেন।
সড়কপথে কলকাতা যাত্রা
প্রতিদিন সকালে ও রাতে ঢাকা থেকে অনেক বাস কলকাতার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। কিছু বাস সরাসরি ঢাকা থেকে কলকাতা যায়, যেখানে কোনো বাস বদলাতে হয় না। শ্যামলী, বিআরটিসি, সৌহার্দ্য বাসগুলো সকাল-বিকেলে ছেড়ে যায়।
অন্যদিকে শ্যামলী, গ্রিন লাইন, সোহাগ, রয়েল, লন্ডন সার্ভিস ইত্যাদি বাস ঢাকা থেকে বেনাপোল পর্যন্ত যায় এবং বেনাপোল থেকে পেট্রাপোল হয়ে কলকাতায় পৌঁছায়। এগুলো সাধারণত রাতে ছেড়ে যায় এবং এগুলোর মধ্যে এসি ও নন-এসি বাস দুটোই থাকে।
বিসনেস ক্লাস নামে বিলাসবহুল বাসও আছে, যার ভাড়া ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা। এগুলোর গাড়ির মান ও সার্ভিস অনেক ভালো।
বর্ডারে ইমিগ্রেশন বাসের লোকজনই করে দেয়। বাসগুলো সাধারণত কলকাতার নিউমার্কেট সংলগ্ন মারকুইস স্ট্রিটে নামায়।
রেলপথে কলকাতা যাত্রা
যারা ট্রেন পছন্দ করেন, তারা ‘মৈত্রী এক্সপ্রেস’ ট্রেনে ঢাকা থেকে কলকাতায় আসতে পারেন। এই ট্রেন ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে ছেড়ে কলকাতা স্টেশনে এসে থামে। ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস চেকিং যাত্রা শুরু হওয়ার আগেই হয়। ভ্রমণের সময় লাগে প্রায় ৮ ঘণ্টা।

মৈত্রী এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে সকাল ৮:১০ মিনিটে ছেড়ে যায় এবং কলকাতা থেকে সকাল ৭:১০ মিনিটে ছেড়ে যায়। রবিবার কোন ট্রেন ছাড়ে না, সব ট্রেন সব দিন চলে না, তাই যাত্রার তারিখ দেখে নিতে হবে।
ঢাকায় কমলাপুর রেলস্টেশনে টিকিট পাওয়া যায়, এবং রিটার্ন টিকিটও কিনতে পারেন।
আকাশপথে কলকাতা যাত্রা
যদি সময় কম থাকে, তাহলে বিমানযোগে যেতে পারেন। বাংলাদেশ বিমান, রিজেন্ট, ইউনাইটেড, জেট এয়ারওয়েজ, এয়ার ইন্ডিয়া প্রায় প্রতিদিন ঢাকা-কলকাতা রুটে চলাচল করে। সময় লাগে মাত্র ৪৫ মিনিট। বিমানের ভাড়া ৪০০০ থেকে ৮০০০ টাকার মধ্যে। আগে থেকে টিকেট কাটলে দাম কম হয়।
কলকাতায় থাকার ব্যবস্থা
কলকাতায় ভালো মানের গেস্ট হাউস বা হোটেল খুঁজে পেতে একটু ঝামেলা হতে পারে। প্রতি রাতের ভাড়া ৩০০ থেকে ৫০০০ রুপি পর্যন্ত হতে পারে। যারা চিকিৎসার জন্য আসেন তাদের জন্য এক রুমের ভাড়া ২০-২৫ হাজার রুপি পর্যন্ত হতে পারে। শহরটি বড় এবং এলাকার ওপর ভিত্তি করে ভাড়া পরিবর্তিত হয়। কাজের ধরন অনুযায়ী হোটেল বেছে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
কলকাতায় খাওয়ার ব্যবস্থা
খাবারের ক্ষেত্রে, কলকাতার বেশিরভাগ খাবার আমাদের দেশের খাবারের মতো হলেও এখানে একটি বিশেষ মসলা ব্যবহৃত হয় যা অনেকের কাছে স্বাদে ভিন্ন হতে পারে। তাই ভালো রেস্টুরেন্ট বেছে নেওয়া জরুরি।
মন্তব্য