
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলা বাংলাদেশের "চায়ের রাজধানী" হিসেবে বিখ্যাত। এখানে পাহাড়ের কোলে সারি সারি চা বাগানের মনোরম দৃশ্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে। তবে শ্রীমঙ্গলের আকর্ষণ শুধু চা বাগানেই সীমিত নয়—এখানে রয়েছে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট এন্ড গলফ, রাবার বাগান, হামহাম জলপ্রপাত এবং মাধবপুর লেক-এর মতো নানান দর্শনীয় স্থান।
ঢাকা থেকে সহজেই একদিনে শ্রীমঙ্গল ভ্রমণ করা যায়, তাই এটি অনেক পর্যটকের কাছে জনপ্রিয় একটি গন্তব্য। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর শান্ত পরিবেশের জন্য শ্রীমঙ্গল প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য আদর্শ একটি স্থান।
একদিনে শ্রীমঙ্গল ট্যুর প্ল্যান (১)
ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল একদিনে ঘুরে আসতে চাইলে বাস বা ট্রেন—যেকোনো একটি বেছে নিতে পারেন।
বাসে যেতে: সায়দাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে রাত ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে শ্রীমঙ্গলের বাসে রওনা দিন।
ট্রেনে যেতে: সিলেটগামী রাতের উপবন এক্সপ্রেসে উঠলে সুবিধা হবে।
ভোর নাগাদ শ্রীমঙ্গলে পৌঁছে সকালের নাস্তা সেরে মাধবপুর লেক এর উদ্দেশ্যে রওনা দিন। সিএনজি রিজার্ভ করে বা লোকাল ট্রান্সপোর্টে যেতে পারেন। রাস্তার দুই পাশে সবুজ চা বাগান আর মাধবপুর লেকের নির্মল জল ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে।
এরপর লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ঘুরে আসুন। এখানে হালকা ট্রেকিং করে বনের জীববৈচিত্র্য উপভোগ করতে পারবেন।
দুপুরের খাবারের জন্য পানসী বা পাঁচ ভাই হোটেলে যেতে পারেন। এখানে সাশ্রয়ী মূল্যে সুস্বাদু স্থানীয় খাবার পাবেন।
বিকেলে সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা দেখে নিন। এরপর নীলকণ্ঠ চা কেবিনে সাত রঙের চা পান করুন এবং চা গবেষণা ইনস্টিটিউটে সময় কাটান।
বিকেল ৫টার মধ্যে ঘুরাঘুরি শেষ করলে ট্রেনে ঢাকা ফিরতে পারবেন। অন্যথায়, বাসেও ফেরা যাবে।
এভাবে একদিনেই শ্রীমঙ্গলের সেরা জায়গাগুলো ঘুরে আসা সম্ভব!
একদিনে শ্রীমঙ্গল ট্যুর প্ল্যান (২)
যদি আপনি অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী হন, তাহলে শ্রীমঙ্গলের হামহাম ঝর্ণা আপনার জন্য আদর্শ একটি গন্তব্য। ভোর সকালে ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গলে পৌঁছে হালকা নাস্তা সেরে নিন। এরপর সারাদিনের জন্য সিএনজি বা জিপ রিজার্ভ করে হামহাম ঝর্ণার উদ্দেশ্যে রওনা দিন। ভোরে বের হলে মাত্র দুই ঘণ্টায় কলাবন পাড়া পৌঁছে যাবেন। সেখান থেকে স্থানীয় গাইডের সঙ্গে নিয়ে শুরু হবে হামহাম ঝর্ণার ট্রেকিং। এই ঝর্ণার প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করতে বর্ষাকালই সবচেয়ে ভালো সময়।
ঝর্ণা দেখে শ্রীমঙ্গল শহরে ফিরে পাঁচ ভাই কিংবা পানসীতে স্বাদের দুপুরের খাবার খেয়ে নিন। এরপর বিকেলে মাধবপুর লেকের সৌন্দর্য দেখতে যেতে পারেন। লেক ও চা বাগানের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করে চলে যান নীলকণ্ঠ কুঠিরে, সাত রঙের চা পান করার জন্য। শেষে সন্ধ্যায় ট্রেন বা বাসে চেপে ঢাকার পথে যাত্রা করুন।
এই ভ্রমণে প্রকৃতির অকৃত্রিম সৌন্দর্য ও রোমাঞ্চ দুই-ই পাবেন!
ঢাকা থেকে যেভাবে শ্রীমঙ্গল যাবেন
ট্রেনে যাত্রা:
শ্রীমঙ্গল যেতে কমলাপুর বা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে উপবন, জয়ন্তিকা, পারাবত কিংবা কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনে যেতে পারেন। শ্রেণিভেদে ট্রেনের ভাড়া জনপ্রতি ২৭৫ টাকা থেকে ৯৩৮ টাকা পর্যন্ত। ট্রেনে যেতে সময় লাগে প্রায় সাড়ে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা।
বাসে যাত্রা:
ঢাকা থেকে ফকিরাপুল বা সায়দাবাদ বাস স্ট্যান্ড থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, সিলেট এক্সপ্রেস বা এনা পরিবহনের মতো এসি/নন-এসি বাস পাওয়া যায়। বাসের ভাড়া ৪৭০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত। বাসে শ্রীমঙ্গল পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় ৪ ঘণ্টা।
এই পরিবহনগুলো সুবিধাজনক ও আরামদায়ক, তাই পছন্দ অনুযায়ী যেকোনো একটি বেছে নিতে পারেন।
একদিনে শ্রীমঙ্গল ভ্রমণের সম্ভাব্য খরচ
- বাস ভাড়া: ৪৭০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা (বাসের ধরন অনুযায়ী)
- সকালের নাস্তা: ৫০ টাকা
- সিএনজি রিজার্ভ (সারাদিন): ২২০০ টাকা
- দুপুরের খাবার: ১৫০ টাকা
- ফিরতি ট্রেনের টিকেট: ২৭৫ টাকা থেকে ৯৩৮ টাকা
- অন্যান্য খরচ: ১০০ টাকা
মোট আনুমানিক খরচ নির্ভর করছে বাস ও ট্রেনের ভাড়ার ওপর।
একদিনে শ্রীমঙ্গল ভ্রমণ পরামর্শ
- সস্তায় খাবার খেতে চাইলে পানসী বা পাঁচ ভাই হোটেলে যেতে পারেন।
- সিএনজি বুক করার আগে ড্রাইভারকে গন্তব্যের স্থানগুলো আগেই জানিয়ে দিন।
- সিএনজি ভাড়া নেওয়ার সময় দামাদামি করে নিন।
- হাম হাম যাওয়ার সময় জোঁক থেকে সাবধান থাকুন।
- ট্রেনে ফিরতে চাইলে সময়মতো স্টেশনে পৌঁছানোর চেষ্টা করুন।
মন্তব্য