বান্দরবান ট্যুর প্ল্যান : নীলগিরি, নীলাচল, স্বর্ণমন্দির, মেঘলা ও চিম্বুক

বান্দরবান ট্যুর প্ল্যান : নীলগিরি, নীলাচল, স্বর্ণমন্দির, মেঘলা ও চিম্বুক

ঢাকা থেকে কুমিল্লা দিনে ঘুরে সন্ধ্যার মধ্যে ফিরতে চাইলে সকাল ৭টার আগেই রওনা দিন। যাত্রাবাড়ি থেকে কুমিল্লার জন্য এসি/নন-এসি বাসের ভাড়া ১০০ থেকে ৩০০ টাকা। কমলাপুর ও সায়েদাবাদ থেকে তিশা, এশিয়া লাইন, রয়েল, প্রিন্স, স্টার লাইন বা বিআরটিসি বাসে নন-এসি ২০০ টাকা ও এসি ২৫০ টাকা ভাড়ায় যাওয়া যায়।

ট্রেনে যেতে চাইলে কমলাপুর বা বিমানবন্দর স্টেশন থেকে চট্টগ্রামগামী সুবর্ণা ও সোনার বাংলা বাদে প্রায় সব ট্রেনই কুমিল্লায় থামে। ঢাকা থেকে কুমিল্লা ট্রেন ভাড়া ৯০ থেকে ২৫০ টাকা। তবে এমন ট্রেন বেছে নিন যেটি আপনাকে সকাল সকাল কুমিল্লা পৌঁছে দেবে।

বান্দরবান ভ্রমণ প্ল্যান (১ রাত ২ দিন)

ট্যুর প্ল্যান সাধারণত ভ্রমণকারীদের সময়, সুবিধা ও পছন্দের উপর নির্ভর করে। বান্দরবানে প্রথমবার ভ্রমণকারী বা পরিবার-পরিজন নিয়ে যাওয়া ব্যক্তিরা এখানকার জনপ্রিয় স্থানগুলো সহজেই ঘুরে দেখতে পারেন এবং মেঘ ও পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। এই গাইডে বান্দরবান ভ্রমণের একটি সাধারণ পরিকল্পনা দেওয়া হলো, যা আপনি নিজের মতো করে কাস্টমাইজ করতে পারবেন।

কতদিন থাকবেন?

বান্দরবানের প্রধান দর্শনীয় স্থানগুলো ভালোভাবে দেখতে অন্তত ১ রাত ২ দিন থাকা উচিত। এতে সময় ও বাজেট দুটিই সাশ্রয়ী হবে।

পরিদর্শনের স্থানসমূহ:

যানবাহনের ব্যবস্থা:

বান্দরবানে ভ্রমণের জন্য তিন ধরনের যানবাহন পাওয়া যায়:

  • সিএনজি (২-৪ জনের জন্য)
  • মহেন্দ্র জীপ (ল্যান্ডক্রুজার) (৫-৮ জনের জন্য)
  • চান্দের গাড়ি (৮-১৫ জনের জন্য)

যাত্রীদের সংখ্যা অনুযায়ী গাড়ি বুকিং করতে হবে।

প্রথম দিনের পরিকল্পনা:

১. সকালে বান্দরবান পৌঁছানো:

  • সম্ভব হলে ভোরে পৌঁছান, হোটেল চেক-ইন করে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা সেরে নিন।
  • আগে থেকে হোটেল বুকিং না থাকলে দ্রুত একটি হোটেল ঠিক করুন।

২. স্বর্ণমন্দির ভ্রমণ:

  • প্রবেশ ফি: জনপ্রতি ৫০ টাকা।
  • এটি একটি ধর্মীয় স্থান, তাই শালীন পোশাক ও শিষ্টাচার বজায় রাখুন।

৩. দুপুরের খাবার:

  • শহরের কোনো রেস্টুরেন্টে খেতে পারেন অথবা মেঘলায় গিয়ে খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।

৪. মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র ও নীলাচল:

  • বিকেলে মেঘলা ঘুরে নীলাচলের জন্য রওনা দিন।
  • নীলাচলে সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ করুন।

৫. রাতের বান্দরবান:

  • হোটেলে ফিরে বিশ্রাম নিন।
  • রাতের খাবারের পর শহরের ব্রিজের কাছে সাঙ্গুর রূপ দেখতে যেতে পারেন।

দ্বিতীয় দিনের পরিকল্পনা:

১. ভোর সকালে রওনা দেওয়া:

  • সম্ভব হলে ভোর ৬টার মধ্যে নাস্তা সেরে নিন।
  • আগের দিন গাড়ি বুকিং করে রাখলে সময় বাঁচবে।

২. নীলগিরি, চিম্বুক, মিলনছড়ি ও শৈলপ্রপাত:

  • সরাসরি নীলগিরি গিয়ে মেঘের সৌন্দর্য উপভোগ করুন।
  • ফেরার পথে চিম্বুক, মিলনছড়ি ও শৈলপ্রপাত ঘুরে দেখুন।
  • নীলগিরি ও চিম্বুকের প্রবেশ ফি দিতে হবে।

৩. দুপুরের খাবার:

  • নীলগিরি বা চিম্বুকে আদিবাসী হোটেলে খেতে পারেন (অগ্রিম অর্ডার দিলে ভালো)।
  • সঙ্গে শুকনো খাবার ও পানি রাখুন।

৪. বান্দরবান ফিরে যাত্রা শুরু:

  • দিন শেষে ঢাকা/চট্টগ্রামের বাসে ফিরতে পারেন।
  • ট্রেনে ফিরতে চাইলে চট্টগ্রাম হয়ে যেতে হবে।

গাড়িভাড়া (আনুমানিক):

প্রথম দিন:

  • সিএনজি: ৮০০-১০০০ টাকা
  • মহেন্দ্র জীপ: ১২০০-১৬০০ টাকা
  • চান্দের গাড়ি: ১৮০০-২২০০ টাকা

দ্বিতীয় দিন:

  • সিএনজি: ২০০০-২২০০ টাকা
  • মহেন্দ্র জীপ: ২৪০০-৩০০০ টাকা
  • চান্দের গাড়ি: ৩৫০০-৪২০০ টাকা

(ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে ভাড়া বেশি হতে পারে। দরদাম করে নিন।)

সতর্কতা ও পরামর্শ:

  • নীলগিরি যাওয়া-আসায় প্রায় ৫-৬ ঘণ্টা সময় লাগে, তাই ভোরে রওনা দিন।
  • পাহাড়ি রাস্তায় সতর্ক থাকুন।
  • আবহাওয়া পরীক্ষা করে নিন, বিশেষ করে বর্ষায় যাত্রা এড়িয়ে চলুন।

এই গাইড অনুসরণ করে আপনি বান্দরবানের সৌন্দর্য পুরোপুরি উপভোগ করতে পারবেন। শুভ যাত্রা!

বান্দরবান যাওয়ার উপায়

ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে এস. আলম, ইউনিক, হানিফ, শ্যামলি, সৌদিয়া ও সেন্টমার্টিন পরিবহনের বাস বান্দরবানের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এসব বাসে জনপ্রতি ভাড়া নন-এসি ৫৫০–৬৫০ টাকা এবং এসি ৯৫০–১৫০০ টাকা।

ট্রেনে যাতায়াত:
ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম গিয়ে সেখান থেকে বান্দরবান যাওয়া যায়। প্রতিদিন ঢাকা থেকে সোনার বাংলা, সুবর্ণ ও মহানগর প্রভৃতি ট্রেন চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। শ্রেণিভেদে ট্রেনের টিকেটের মূল্য ৩২০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত।

চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান:
চট্টগ্রামের বদ্দারহাট বাস স্টেশন থেকে পূবালী ও পূর্বানী বাসে বান্দরবান যাওয়া যায়। এতে জনপ্রতি ভাড়া ২২০ টাকা। এছাড়া ধামপাড়া বাস স্টপেজ থেকেও বান্দরবানের বাস পাওয়া যায়।

প্রাইভেট গাড়িতে যাতায়াত:
রেন্ট-এ-কার বা মাইক্রোবাস ভাড়া করে চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান যাওয়া যায়। মাইক্রোবাসের ভাড়া সাধারণত ২,৫০০–৩,৫০০ টাকা।

কোথায় থাকবেন

বান্দরবান শহর ও এর আশেপাশে বেশ কয়েকটি মানসম্মত হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে। এখানে থাকার জন্য কিছু জনপ্রিয় হোটেল ও রিসোর্টের তালিকা দেওয়া হলো:

  • হোটেল হিল ভিউ: বান্দরবান বাস স্ট্যান্ডের খুব কাছেই অবস্থিত। কক্ষের ভাড়া ১০০০ থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত।
  • হোটেল হিলটন: বাস স্ট্যান্ডের নিকটেই এই হোটেলটি অবস্থিত। ভাড়া ১২০০ থেকে ৩৫০০ টাকা।
  • হোটেল প্লাজা: বাস স্ট্যান্ড থেকে মাত্র ৫ মিনিট হাঁটার দূরত্বে। ভাড়া ৮০০ থেকে ৩০০০ টাকা।
  • রিভার ভিউ: সাঙ্গু নদীর তীরে অবস্থিত এই হোটেলটির ভাড়া ৬০০ থেকে ২০০০ টাকা।
  • পর্যটন মোটেল: পাহাড় ও লেকের পাশে অবস্থিত, শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে মেঘলায়। ভাড়া ১২০০ থেকে ২৫০০ টাকা।

এছাড়াও, সাইরু রিসোর্ট সহ বান্দরবানে আরও অনেক সুন্দর রিসোর্ট রয়েছে। বান্দরবানের সেরা হোটেল ও রিসোর্ট সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের ইউটিউব ভিডিও গাইড "বান্দরবানের সেরা ১০ রিসোর্ট" দেখুন অথবা বান্দরবানের সমস্ত হোটেল ও রিসোর্টের তালিকা পড়ে নিন।

কোথায় খাবেন

বান্দরবান শহরে খাওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি ভালো রেস্তোরাঁ রয়েছে, যেমন— তাজিংডং ক্যাফে, মেঘদূত ক্যাফে, ফুড প্লেস রেস্টুরেন্ট, রূপসী বাংলা রেস্টুরেন্ট, রী সং সং এবং কলাপাতা রেস্টুরেন্ট।

বান্দরবান ভ্রমণ খরচ

শুরুতেই বলে রাখি, ভ্রমণ খরচ মূলত নির্ভর করে ভ্রমণের সময়কাল এবং ভ্রমণকারীর পছন্দের উপর। কেউ কেউ আরামদায়ক ভ্রমণকে প্রাধান্য দেন, আবার কেউ বাজেটের দিকে বেশি নজর রাখেন। তবে বান্দরবান ভ্রমণের একটি সাধারণ খরচের ধারণা দেওয়া যাক। ধরা যাক, আপনি ঢাকা থেকে ৬ জনের একটি গ্রুপে ১ রাত ২ দিনের ট্যুরে যাচ্ছেন এবং বান্দরবানে ঘোরার জন্য মহেন্দ্র জীপ গাড়ি ব্যবহার করবেন।

খরচের বিবরণ (জনপ্রতি):

  • বাস ভাড়া (নন-এসি, যাওয়া-আসা): ৬২০ × ২ = ১,২৪০ টাকা
  • হোটেল ভাড়া (১ রাত, ২ জন শেয়ারিং): ১,৮০০ ÷ ২ = ৯০০ টাকা
  • প্রথম দিনের যানবাহন ভাড়া: ১,৫০০ ÷ ৬ = ২৫০ টাকা
  • দ্বিতীয় দিনের যানবাহন ভাড়া: ২,৮০০ ÷ ৬ = ৪৬৬ টাকা
  • প্রথম দিনের খাবার (৩ বেলা): ১২০ + ১৫০ + ২০০ = ৪৭০ টাকা
  • দ্বিতীয় দিনের খাবার (৩ বেলা): ১২০ + ১৫০ + ২০০ = ৪৭০ টাকা
  • অন্যান্য খরচ: ৫০০ টাকা

মোট আনুমানিক খরচ: ৪,৩০০ টাকা
এই হিসাবটি একটি মধ্যম মানের ভ্রমণের জন্য প্রযোজ্য। আপনি চাইলে বিলাসিতা বাড়াতে পারেন—যেমন এসি বাসে যাতায়াত, ভালো হোটেল বা রিসোর্টে থাকা এবং উচ্চমানের খাবার নেওয়া। অন্যদিকে, বাজেট ট্রাভেলার হিসেবে খরচ আরও কমানো সম্ভব।

মন্তব্য