জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার ভারতীয় সীমান্তসংলগ্ন পশ্চিম কড়িয়া গ্রামে অবস্থিত লকমা রাজবাড়ি (Lakma Palace / Lakma Rajbari) একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা। প্রায় ৩০০ বছর আগে এই রাজবাড়িটি নির্মিত হয়। কেউ কেউ মনে করেন, এটি চৌধুরী হাদি মামুনের পূর্বপুরুষদের দ্বারা নির্মিত, আবার অনেকে বলেন, রাজা লক্ষণসেন এই স্থাপনার প্রতিষ্ঠাতা।
দ্বিতল মূল ভবনটি ইংরেজি "U" আকৃতির, যা রাজবাড়ির অন্যতম আকর্ষণ। এর বাইরে আরও দুটি ভবন রয়েছে—একটি ঘোড়াশাল হিসেবে এবং অন্যটি হাতীশাল হিসেবে ব্যবহৃত হতো। রাজবাড়ির পূর্বদিকে রয়েছে কর্মচারীদের থাকার জায়গা ও একটি পুরোনো কবরস্থান।
বর্তমান অবস্থা
বর্তমানে লকমা রাজবাড়ির দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছে ৪২ সদস্যের একটি পরিবারিক সমিতি, যেখানে লকমা চৌধুরীর উত্তরাধিকারীরাও অন্তর্ভুক্ত। রাজবাড়ির অবশিষ্ট প্রায় ১৫ বিঘা জমিতে চাষাবাদ করা হয়, যেখানে বিভিন্ন ধরনের শস্য উৎপাদনের পাশাপাশি ফুল ও ফলের চাষও হয়।
কিভাবে যাবেন?
জয়পুরহাট জেলা সদর থেকে লকমা রাজবাড়ি প্রায় ৩৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ঢাকা থেকে জয়পুরহাটের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন পরিবহন সংস্থার বাস চলাচল করে, যেমন:
- শাহ্ ফতেহ আলী পরিবহণ
- সেন্টমার্টিন ট্রাভেলস
- শ্যামলী পরিবহন এন.আর.
- এস.আর. ট্রাভেলস
- হানিফ পরিবহন
এসি ও নন-এসি বাসের ভাড়া ৫৫০ থেকে ১৪০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
এছাড়া ট্রেনেও জয়পুরহাট যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে কমলাপুর বা বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে নিম্নলিখিত ট্রেনগুলোতে যাত্রা করতে পারেন:
- একতা এক্সপ্রেস
- চিলাহাটি এক্সপ্রেস
- দ্রুতযান এক্সপ্রেস
- কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস
- পঞ্চগড় এক্সপ্রেস
ট্রেনের ভাড়া ৫১০-১,৮১০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে আসনভেদে। জয়পুরহাট শহর থেকে স্থানীয় পরিবহন ব্যবহার করে পাঁচবিবি উপজেলার পশ্চিম কড়িয়া গ্রামে পৌঁছানো সম্ভব।
কোথায় থাকবেন?
জয়পুরহাট শহরে বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেল রয়েছে, যেখানে নিরাপদে রাতযাপন করা যাবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
- হোটেল সৌরভ ইন্টারন্যাশনাল
- হোটেল জাহান আরা ইন্টারন্যাশনাল
- জসিম রেসিডেন্সিয়াল হোটেল
- পৃথিবী হোটেল
- হোটেল বৈশাখী রেসিডেন্সিয়াল
এছাড়াও শহরে আরও কিছু ভালো মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে।
কোথায় খাবেন?
জয়পুরহাট শহরে বেশ কিছু মানসম্মত রেস্টুরেন্ট রয়েছে, যেখানে বাংলা ও চাইনিজ খাবার পাওয়া যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
- ক্যাফে অরেঞ্জ চাইনিজ রেস্টুরেন্ট
- বিসমিল্লা হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট
- রুচিটা রেস্টুরেন্ট এন্ড চাইনিজ
- মিনা রেস্টুরেন্ট
- প্রিন্স রেস্টুরেন্ট
এই রেস্টুরেন্টগুলোতে বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায়।
শেষ কথা
জয়পুরহাটের লকমা রাজবাড়ি ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। ভ্রমণপিপাসুরা চাইলে এখানে এসে পুরনো স্থাপত্যের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। প্রাচীন ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে থাকা এই রাজবাড়ি একবার হলেও দেখে আসা উচিত!
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!