চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার চান্দ্রা বাজার থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত লোহাগড়া মঠ (Lohagarh Moth) একটি ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন স্থাপনা। জমিদার বংশের দুই অত্যাচারী ও প্রভাবশালী ভাই লোহা এবং গহড় ডাকাতিয়া নদীর কূল ঘেঁষে এই মঠটি নির্মাণ করেন এবং তাদের নামেই এই গ্রাম ও মঠের নামকরণ করা হয়। প্রায় ২০০ বছরের পুরনো লোহাগড়া মঠে বর্তমানে তিনটি মঠের ধ্বংসাবশেষ, প্রাসাদের রুক্ষ অংশ ও মাটির নিচে একটি গহবর রয়েছে। সবচেয়ে বড় মঠটি শৈল্পিক কারুকার্যে সজ্জিত এবং অন্যান্য মঠগুলির থেকে আলাদা। তৎকালীন জমিদারদের অত্যাচারের নিঃশব্দ সাক্ষী হিসেবে লোহাগড়া মঠ চাঁদপুরের অন্যতম জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠেছে।
একসময় ব্রিটিশ পরিব্রাজক এই গ্রাম পরিদর্শন করতে এসে মঠের আভিজাত্যে মুগ্ধ হন। কথিত আছে, এই ব্রিটিশ পরিব্রাজকের আগমন উপলক্ষে জমিদার ভাই লোহা এবং গহড় নিজেদের ধন-সম্পত্তির প্রদর্শন হিসেবে নদীর তীর থেকে জমিদার বাড়ি পর্যন্ত ২০০ হাত দৈর্ঘ্য, ২ হাত প্রস্থ ও ১ হাত উচ্চতা বিশিষ্ট একটি রাস্তা সিকি ও আধুলি মুদ্রা দিয়ে তৈরি করেছিলেন। এছাড়া, তারা মঠের শিখরে একটি আড়াই মণ ওজনের স্বর্ণদণ্ড স্থাপন করেন। লোকমুখে শোনা যায়, বহু মানুষ সেই স্বর্ণদণ্ডের লোভে মঠের শিখরে উঠে মৃত্যুবরণ করেছে। পরে, কোন এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে স্বর্ণদণ্ডটি মঠ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নদীতে পড়ে যায়।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সড়ক, নৌ ও রেলপথে চাঁদপুর যাওয়া সম্ভব, তবে নৌপথ সবচেয়ে সুবিধাজনক। ঢাকার সদরঘাট থেকে এমভি সিরিজের সোনার তরী, মেঘলা রাণী, বোগদাদীয়া, আল বোরাক, ঈগল, তাকওয়া, মিতালি ও ইমাম হাসান নামক লঞ্চ চাঁদপুর নৌপথে চলাচল করে। চাঁদপুর শহর থেকে লোহাগড়া মঠের দূরত্ব প্রায় ১২ কিলোমিটার, যেখানে বাস, সিএনজি বা মোটরসাইকেল দিয়ে যেতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন
চাঁদপুরের বড় স্টেশন রোড এবং কুমিল্লা রোডে বেশ কিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে, যেমন মেঘনা রিসোর্ট, হোটেল গ্র্যান্ড হিলিসা, হোটেল শেরাটন, হোটেল আল রাজিব, হোটেল গাজী, হোটেল তাজমহল, হোটেল শ্যামলী ও হোটেল জোনাকি ইত্যাদি।
কোথায় খাবেন
ফরিদগঞ্জে শাহী রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে রাজধানী, হাজি রেস্টুরেন্ট, ঘরোয়া হোটেল ও ফরিদগঞ্জ ওয়ান স্টার রেস্টুরেন্ট রয়েছে। চাঁদপুরে গেলে চাঁদপুর লঞ্চঘাটের স্থানীয় রেস্টুরেন্ট অথবা কালীবাড়ি রোডের ক্যাফে কর্নারের পদ্মা ইলিশের স্বাদ নিতে ভুলবেন না।
ভ্রমণ পরামর্শ
বর্ষাকালে এই মঠে যাওয়ার রাস্তা খারাপ হয়ে যায়, তাই শীতকালেই এই মঠে যাওয়ার জন্য সবচেয়ে ভালো সময়। শীতকালে ভোরবেলা রওনা দিলে পথে খেজুরের তাজা রসও উপভোগ করা যাবে।
চাঁদপুরের অন্যান্য দর্শনীয় স্থান
চাঁদপুরের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে অঙ্গীকার ভাস্কর্য, বড় স্টেশন, বড় মসজিদ ও রূপসা জমিদার বাড়ি অন্যতম।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!