নোয়াখালীর মাইজদী কোর্ট থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে সোনাইমুড়ী উপজেলার জয়াগ বাজারের কাছে অবস্থিত ঐতিহাসিক গান্ধী আশ্রম। এটি মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতিবিজড়িত একটি ঐতিহ্যবাহী স্থান। প্রয়াত জমিদার ব্যারিস্টার হেমন্ত কুমার ঘোষ তাঁর বাড়িতে আশ্রমটি প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরবর্তীতে একটি সেবামূলক সংগঠন হিসেবে দেশব্যাপী সুনাম অর্জন করে।
গান্ধী স্মৃতি জাদুঘর
২০০০ সালের ২ অক্টোবর, মহাত্মা গান্ধীর অহিংস দর্শন ও জীবনবোধকে আরও কাছ থেকে জানার সুযোগ করে দিতে গান্ধী আশ্রমের মূল ভবনে গান্ধী স্মৃতি জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে গান্ধীর দুর্লভ ছবি, বই, ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও তাঁর কর্মময় জীবনের নানা নিদর্শন সংরক্ষিত আছে, যা দর্শনার্থীদের মন ছুঁয়ে যায়।
ইতিহাসের পাতা থেকে
১৯৪৬ সালের শেষের দিকে নোয়াখালীতে ছড়িয়ে পড়া সাম্প্রদায়িক অশান্তি দূর করতে, ১৯৪৬ সালের ৭ নভেম্বর মহাত্মা গান্ধী চৌমুহনী রেলস্টেশনে পৌঁছান। অহিংস আন্দোলনের বার্তা ছড়িয়ে দিতে তিনি গ্রাম থেকে গ্রামে ঘুরে ১৯৪৭ সালের ২৯ জানুয়ারি জয়াগ গ্রামে আসেন। সেই সময়, ব্যারিস্টার হেমন্ত কুমার ঘোষ গান্ধীর আদর্শ প্রচার ও স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য তাঁর সম্পত্তি দান করে আম্বিকা কালিগঙ্গা চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও গান্ধী আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে, ১৯৭৫ সালে এর নাম পরিবর্তিত হয়ে "গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট" রাখা হয়।
দর্শনার্থীদের জন্য সময়সূচি:
গান্ধী স্মৃতি জাদুঘর প্রতি সপ্তাহের সোমবার থেকে শনিবার দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে।
যেভাবে যাবেন
- বাসে ঢাকা থেকে: সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে একুশে এক্সপ্রেস, মুনলাইন এন্টারপ্রাইজ, বা হিমাচল এক্সপ্রেসে মাইজদি যাওয়া যায়। এরপর সোনাইমুড়ীগামী লোকাল বাস বা সিএনজি নিয়ে জয়াগ বাজারের কাছে আশ্রমে পৌঁছানো যায়। বাস ভাড়া ৫০০-৫৫০ টাকা।
- ট্রেনে ঢাকা থেকে: কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে সপ্তাহে ৬ দিন বিকাল ৩:১০-এ ছেড়ে যাওয়া উপকূল এক্সপ্রেসে মাইজদী স্টেশনে নামতে হয়। যাত্রা সময় প্রায় ৬ ঘণ্টা, টিকিট মূল্য ৩১৫ টাকা। স্টেশন থেকে লোকাল বাস বা সিএনজি নিয়ে আশ্রমে যেতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন
নোয়াখালীতে বেশ কয়েকটি বাজেট-ফ্রেন্ডলি আবাসিক হোটেল রয়েছে। কম খরচে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা পাবেন। উল্লেখযোগ্য হোটেলগুলোর মধ্যে রয়েছে — পুবালি হোটেল, রয়েল হোটেল, হোটেল আল মোরশেদ, হোটেল রাফসান, হোটেল লিটন, টাউন হল, এবং নোয়াখালী গেস্ট হাউস।
এই আশ্রম শুধু একটি ঐতিহাসিক স্থান নয়, বরং অহিংসা, শান্তি ও মানবতার এক উজ্জ্বল নিদর্শন। ইতিহাসপ্রেমী ও ভ্রমণপিপাসুদের জন্য গান্ধী আশ্রম হতে পারে একটি অনন্য গন্তব্য! ✨
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!