কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ধরনীবাড়ী ইউনিয়নে ঐতিহ্যবাহী উলিপুর মুন্সিবাড়ী অবস্থিত। উলিপুর বাজার থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরত্বে প্রায় ৩৯ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এই প্রাসাদটি শতাব্দীর পুরোনো ইতিহাসের সাক্ষী। ১৮শ শতকে শ্রী ব্রজেন্দ্র লাল মুন্সির তত্ত্বাবধানে নির্মিত এই ভবনটি আজও দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। মূল ভবনে শয়ন কক্ষ, ডাইনিং হল, রান্নাঘর, বিশ্রামাগার ও অতিথিশালা ছাড়াও রয়েছে শিব মন্দির, নাট মন্দির, তুলসি মঞ্চ, দূর্গা মন্দির ও একটি শান বাঁধানো পুকুর ঘাট।
মুন্সিবাড়ীর প্রতিষ্ঠার গল্প
জনশ্রুতি অনুযায়ী, বিনোদী লাল নামের এক মুনসেফ কাশিম বাজারের জমিদার কৃষ্ণনাথ নন্দীর অধীনে কাজ করতেন। একবার শিকারে গিয়ে তিনি ব্যাঙের সাপ খাওয়ার দৃশ্য দেখেন, যা সেই সময়ে ধন-সম্পদের প্রতীক বলে মনে করা হতো। এই বিশ্বাস থেকেই তিনি জমিদারের অনুমতি নিয়ে উলিপুরে বিশাল এই বাড়িটি নির্মাণ করেন।
মুক্তিযুদ্ধ ও বর্তমান অবস্থা
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় মুন্সিবাড়ীর উত্তরাধিকারীরা ভারতে চলে গেলে বাড়িটির মালিকানা একাধিকবার বদল হয়। বর্তমানে এটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতায় সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে নিবন্ধিত। মূল ভবনের দুটি কক্ষ এখন ধরনীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস হিসেবে ব্যবহার করা হয়, আর গোবিন্দ মন্দিরে প্রতিদিন পূজা-অর্চনা চলে।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে নাবিল, হক স্পেশাল, হানিফ, তানজিলা বা এনা পরিবহণের এসি/নন-এসি বাসে সরাসরি কুড়িগ্রাম যাওয়া যায়, ভাড়া ৯৫০-১৪০০ টাকা। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস বা রংপুর এক্সপ্রেসে করে ট্রেনেও যেতে পারেন, টিকেটের মূল্য ৬৪০-২১৯৭ টাকা। কুড়িগ্রাম শহর থেকে স্থানীয় ইজিবাইক বা সিএনজিতে উলিপুর বাজার হয়ে সহজেই মুন্সিবাড়ী পৌঁছানো যায়।
থাকার ব্যবস্থা
কুড়িগ্রাম শহরের ঘোষপাড়া ও কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের আশেপাশে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। হোটেল অর্নব প্যালেস, হোটেল ডিকে, হোটেল স্মৃতি, হোটেল নিবেদিকা ও হোটেল মেহেদী থাকবার জন্য ভালো অপশন হতে পারে।
কোথায় খাবেন
শাপলা মোড়ের নান্না বিরিয়ানি, এশিয়া হোটেল বা স্থানীয় খাবারের দোকানগুলোতে সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায়। সিদল ভর্তা ও তিস্তা নদীর বৈরাতী মাছ কুড়িগ্রামের জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী খাবার।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!