হাওরের দুই পাশে রাস্তা এবং রাস্তার পাশ দিয়ে চলমান পথ এমন একটি দৃশ্য দেখতে চাইলে কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার বালিখোলা একটি চমৎকার স্থান। করিমগঞ্জের রৌয়া থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য নিয়ে নিয়ামতপুর-বালিখলা রাস্তা হাওরের মাঝ দিয়ে বয়ে চলে এবং অপূর্ব সৌন্দর্য প্রদর্শন করে। রাস্তা অনেক উঁচু হওয়ায় এটি পানিতে ডুবে যায় না। এখানে হাওরে নৌ ভ্রমণের সুযোগও রয়েছে। ঢাকা এবং আশপাশের এলাকা থেকে একদিনেই ঘুরে আসা সম্ভব। বালিখলা রাস্তা নিয়ে আমাদের ভিডিও গাইড দেখতে এইখানে ক্লিক করুন।
কিভাবে যাবেন?
ঢাকা থেকে ট্রেনে কিশোরগঞ্জ
প্রথমে কিশোরগঞ্জ জেলা সদরে পৌঁছাতে হবে। ঢাকা থেকে বাস বা ট্রেনে কিশোরগঞ্জ আসা যাবে। সকালের ট্রেন, বিশেষ করে ‘এগারোসিন্ধুর প্রভাতী’, সবচেয়ে সুবিধাজনক হবে। ট্রেন ভাড়া শ্রেণী অনুযায়ী ১৩৫-৩৬৮ টাকা এবং সময় প্রায় ৪ ঘণ্টা। ট্রেন স্টেশন থেকে একরামপুর সিএনজি স্ট্যান্ডে ১৫-২০ টাকা রিক্সা ভাড়া দিয়ে পৌঁছাতে পারবেন।
ঢাকা থেকে বাসে কিশোরগঞ্জ
মহাখালী থেকে অনন্যা পরিবহণ বা অনন্যা ক্লাসিক এবং গোলাপবাগ (সায়েদাবাদ) থেকে যাতায়াত বা অনন্যা সুপার বাসে সরাসরি কিশোরগঞ্জ আসা যাবে। বাস ভাড়া ২৫০-৩৫০ টাকা। মহাখালী থেকে সময় লাগবে প্রায় ৩ ঘণ্টা ৩০ মিনিট, এবং গোলাপবাগ থেকে সময় প্রায় ৪ ঘণ্টা। বাস স্ট্যান্ড থেকে লোকাল (১৫ টাকা) বা রিজার্ভ ইজিবাইকে (১২০ টাকা) একরামপুর সিএনজি স্ট্যান্ডে চলে আসুন।
কিশোরগঞ্জ থেকে বালিখোলা
কিশোরগঞ্জ শহর থেকে বালিখোলার দূরত্ব প্রায় ১৯ কিলোমিটার। একরামপুর সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে সিএনজি রিজার্ভ করে ১ ঘণ্টায় বালিখোলায় পৌঁছাতে পারবেন। ভাড়া ২৫০-৩০০ টাকা। ইজিবাইকেও যেতে পারবেন, তবে সময় কিছুটা বেশি লাগবে। লোকাল পথে যেতে চাইলে একরামপুর থেকে চামটা বন্দর গামী যে কোনো সিএনজিতে উঠে নেমে যান নিয়ামতপুর বাজারে। সেখান থেকে ১ কিলোমিটার দূরত্বে ইজিবাইকে বালিখোলা রাস্তায় চলে যেতে পারবেন। রাস্তার শেষ প্রান্তে বালিখোলা বাজার রয়েছে, যেখানে নৌকা দিয়ে ঘুরে বেড়ানো যাবে।
একদিনে ঘুরে আসা সম্ভব?
ঢাকা বা এর আশেপাশ থেকে একদিনে ঘুরে আসা সম্ভব। তবে এজন্য সকালে রওনা দিতে হবে। ঢাকার ট্রেনে বা মহাখালী থেকে সকাল ৭টার আগেই বাসে রওনা দিলে কিশোরগঞ্জ সকাল ১০-১১টার মধ্যে পৌঁছানো যাবে। তবে ফিরতি পথে বাসে ফিরতে হবে। কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকার শেষ বাস সন্ধ্যা ৬:৫০-এ। সময়ের দিকে সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়া, বালিখোলা থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে চামটা/চামড়া বন্দর থেকেও ঢাকার বাস রয়েছে, তবে তাদের সার্ভিস তুলনামূলকভাবে খারাপ।
আর কি করা যায়?
আপনার সময় অনুযায়ী আরও অনেক কিছু দেখা সম্ভব। বালিখোলা রাস্তার শেষে হাওরে নৌকা ভ্রমণের সুবিধা আছে, যেখানে ঘন্টাপ্রতি ৩০০-৫০০ টাকায় ভ্রমণ করা যাবে। চাইলে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের বাড়ি মিঠামইনও ঘুরে আসতে পারেন। এতে হাওর ভ্রমণ ও মিঠামইন দেখার অভিজ্ঞতা হবে। বালিখোলা বাজার থেকে নৌকায় মিঠামইন যাওয়ার সময় প্রায় ৩ ঘণ্টা লাগবে। সময় থাকলে কিশোরগঞ্জ শহরের লেকসিটি পার্ক, পাগলা মসজিদ, শোলাকিয়া ঈদগাহও ঘুরে দেখতে পারবেন।
কোথায় খাবেন
বালিখোলায় খাবারের কোনো ভালো ব্যবস্থা নেই, তবে কয়েকটি টং দোকানে হালকা নাস্তা পাওয়া যায়। ভারি খাবারের জন্য কিশোরগঞ্জ শহর বা যাত্রাপথে করিমগঞ্জ বাজারে খেতে হবে। চামটা/চামড়া বন্দরে কিছু হোটেল রয়েছে, যেগুলোতে খাবার পাওয়া যায়।
কোথায় থাকবেন
যদি রাতে থাকার প্রয়োজন হয়, তবে কিশোরগঞ্জ শহরে ভালো মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে, যেখানে ৮০০-১২০০ টাকায় থাকার ব্যবস্থা আছে।
যাওয়ার উপযুক্ত সময়
যেকোনো হাওর এলাকা ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে ভালো সময় বর্ষাকাল। বিশেষ করে জুলাই-আগস্ট মাসে এখানে ভ্রমণের সবচেয়ে ভালো সময়।
সতর্কতা
হাওর ভ্রমণে সতর্ক থাকতে হবে। সাতার না জানলে পানিতে নামবেন না এবং লাইফ জ্যাকেট সঙ্গে রাখার চেষ্টা করুন। একদিনে ভ্রমণ করতে চাইলে সময়ের দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!