কিশোরগঞ্জ জেলার হাওর উপজেলা গুলোর মধ্যে ইটনা অন্যতম। সারা বছরই ইটনার হাওড়ে পানি থাকে, তবে বর্ষাকালে এটি এক অদ্ভুত শৈল্পিক রূপ ধারণ করে। তখন চারপাশে বিস্তীর্ণ পানির সমুদ্র দেখা যায়, যেখানে মাঝে মাঝে সবুজ গাছপালা বা দ্বীপের মতো কিছু বসতবাড়ি চোখে পড়ে। ইটনা হাওর অঞ্চলের মানুষের চলাচলের প্রধান বাহন হলো নৌকা, তাই ইটনা ভ্রমণ করলে অনেক নৌকার দেখা মিলবে।
এখানে জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্যের পাশাপাশি নানান প্রজাতির পাখি দেখা যায়। নৌকা ভাড়া করে হাওরটির অপরূপ প্রকৃতি উপভোগ করতে পারবেন। এছাড়া হাওরের জলে সাঁতার কাটতে এবং জলজ খেলা করতে পারেন। ইটনার হাওরে সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখা এক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা। ইটনায় দুটি উল্লেখযোগ্য হাওর হলো শনির হাওর এবং ধনপুরের হাওর।
ইটনা হাওর ভ্রমণ ছাড়াও যা যা দেখতে পারেন
ইটনা সদরে অবস্থিত ইটনা শাহী মসজিদ উপজেলা এলাকার অন্যতম দর্শনীয় স্থান। এছাড়া দেওয়ান বাড়ি, মহেশগুপ্ত জমিদার বাড়ি, গুরুদয়াল সরকারের বাড়ি এবং জয়সিদ্ধি গ্রামে আনন্দ মোহন বসুর বাড়ি দেখতে পারেন।
হাওরের মাঝ দিয়ে পানি সমান রাস্তা
এমন দৃশ্যের ছবি বা ভিডিও অনেকেই দেখেছেন, যেখানে দুইপাশে পানি এবং মাঝ দিয়ে কাঁচা-পাকা রাস্তা বয়ে যায়। ইটনায় এমন রাস্তা রয়েছে, তবে বর্ষায় যখন পানি বেড়ে যায়, তখন এই রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে যায়। এমন দৃশ্য উপভোগ করতে চাইলে বর্ষার শুরুর দিকে অথবা পানি নেমে যাওয়ার সময় যেতে হবে।
ইটনা হাওরে কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ আসতে হবে। ট্রেন বা বাসে চড়ে কিশোরগঞ্জ যেতে পারবেন।
ঢাকা থেকে ট্রেনে কিশোরগঞ্জ
কমলাপুর অথবা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সকাল ৭:১৫ মিনিটে এগারোসিন্ধুর ট্রেনে উঠলে দুপুর ১১টার মধ্যে কিশোরগঞ্জ পৌঁছাতে পারবেন। ট্রেনের টিকেটের দাম শ্রেণী অনুযায়ী ১৩৫ টাকা থেকে ৩৬৮ টাকা। এরপর ইজিবাইক দিয়ে শহরের একরামপুর মোড়ে পৌঁছাতে হবে।
ঢাকা থেকে বাসে কিশোরগঞ্জ
মহাখালী বাস স্ট্যান্ড থেকে কিশোরগঞ্জ গামী “অনন্যা পরিবহন” অথবা গোলাপবাগ বাস স্ট্যান্ড থেকে “অনন্যা সুপার” বাসে কিশোরগঞ্জ যেতে পারবেন। বাস ভাড়া ২৭০-৩৫০ টাকা, সময় ৩-৪ ঘণ্টা।
কিশোরগঞ্জ থেকে ইটনা: কিশোরগঞ্জ শহরের একরামপুর মোড় থেকে সিএনজি বা মহেন্দ্রতে চড়ে চামটা ঘাট যেতে হবে, ভাড়া ৪০-৫০ টাকা। চামটা ঘাট থেকে ট্রলারে ইটনা যেতে পারবেন, ভাড়া ৬০ টাকা, সময় ২ ঘণ্টা।
ইটনায় থাকার ব্যবস্থা
ইটনায় ভালো হোটেল ব্যবস্থা না থাকলেও কিছু সাধারণ মানের রেস্ট হাউজ রয়েছে। ঠাকুর গেস্ট হাউসে ১৫০-৩০০ টাকায় রুম পাওয়া যায়। এছাড়া উপজেলা পরিষদের ডাক বাংলোতেও থাকতে পারবেন। তবে উন্নত মানের হোটেলের জন্য কিশোরগঞ্জ শহরে ফিরে যেতে হবে।
খাবারের স্থান
ইটনা বাজারে বেশ কিছু খাবারের হোটেল রয়েছে, যেখানে তাজা মাছের নানা পদ পাওয়া যায়। মিষ্টি প্রিয় হলে কিশোরগঞ্জ শহরের মদনগোপাল বা রাজমনী সুইটসের মালাইকারী এবং একরামপুর ব্রিজের কাছে লক্ষীভান্ডারের রসমালাই ট্রাই করতে পারেন।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!