
প্রায় সবাই জীবনে একবার হলেও কাশ্মীরের মনোরম প্রকৃতি দেখতে চায়। তবে আমির খানের ‘থ্রি ইডিয়টস’ মুভি দেখার পর লাদাখের জনপ্রিয়তা অনেক বেড়েছে। সাধারণত ভাবা হয়, প্রথমে লাদাখ ঘুরে আসা হবে, পরে সবুজ কাশ্মীর দেখার স্বপ্ন। কিন্তু যদি সময় সীমিত হয়, তবুও একসঙ্গে লাদাখ ও কাশ্মীর ভ্রমণ করা সম্ভব। কম মানুষই একসাথে এই দুই জায়গায় যায়। চলুন দেখে নেওয়া যাক কিভাবে একটি ভালো মানের লাদাখ-কাশ্মীর ট্যুর প্ল্যান সাজানো যায়।
জম্মু ও কাশ্মীর: একটি হিমালয় উপত্যকা
জম্মু ও কাশ্মীর ভারতীয় উপমহাদেশের হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থিত। উত্তরে ও পূর্বে চীন, পশ্চিমে পাকিস্তান অবস্থিত এই রাজ্যের দুইটি রাজধানী—গ্রীষ্মকালে শ্রীনগর, শীতকালে জম্মু। রাজ্যটি গঠিত তিনটি অংশ দিয়ে—জম্মু, কাশ্মীর উপত্যকা, এবং লাদাখ। যেখানে শ্রীনগরকে ‘সবুজ কাশ্মীর’ বলা হয়, লাদাখের পরিচয় ‘সাদা কাশ্মীর’ হিসেবে।
লাদাখ ও কাশ্মীর যাওয়ার সহজ উপায়
ভ্রমণ যাই হোক, একা না গিয়ে বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে দলবদ্ধ ভ্রমণ করলে আনন্দও বেশি আর খরচও কম হয়। ৪ থেকে ৬ জনের দল নিরাপত্তা ও হোটেল বুকিং সহজ করে। লাদাখ বা কাশ্মীরে যাওয়ার জন্য অবশ্যই ভারতের ট্যুরিস্ট ভিসা লাগবে। ভারতের ভিসার বিস্তারিত তথ্য আমাদের অন্য পোস্টে পাওয়া যাবে।
ঢাকা থেকে কাশ্মীর বা লাদাখ যেতে পারেন বিভিন্ন রুটে:
- রুট ১: ঢাকা থেকে প্লেনে দিল্লি, তারপর শ্রীনগর বা লেহ। এতে খরচ একটু বেশি হলেও সময় বাঁচে। ঢাকা থেকে সরাসরি ফ্লাইট নেই।
- রুট ২: ঢাকা থেকে বাস বা ট্রেনে কলকাতা বা আগরতলা, সেখান থেকে দিল্লি। এরপর দিল্লি থেকে শ্রীনগর/লেহ। খরচ কিছু কম হয়, আগরতলা রুটে সময়ও বাঁচে।
- রুট ৩: ঢাকা থেকে বাস বা ট্রেনে কলকাতা, তারপর ট্রেনে দিল্লি, তারপর শিমলা ও মানালি হয়ে লেহ। এই পথটি বেশি সময়সাপেক্ষ ও কঠিন, তবে অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য সেরা। এই রুট মে থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত খোলা থাকে।
আপনার সময় ও বাজেটের ওপর নির্ভর করে রুট বাছাই করবেন। প্লেনের টিকেট কমপক্ষে ৬০ দিন আগে কাটলে সস্তা হয়।
লাদাখ ভ্রমণের সেরা সময়
লাদাখ অত্যন্ত শীতল ও দুর্গম এলাকা। শীতকালে (নভেম্বর থেকে এপ্রিল) তীব্র ঠান্ডা আর বরফ জমার কারণে অধিকাংশ রাস্তা বন্ধ থাকে। তাই লাদাখ ভ্রমণের জন্য মে থেকে অক্টোবর মাসই সবচেয়ে উপযোগী, কারণ তখন আবহাওয়া স্বাভাবিক ও ভ্রমণের উপযোগী থাকে।
কাশ্মীর ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
কাশ্মীরের চারটি ঋতু রয়েছে—গ্রীষ্ম, শরৎ, শীত ও বসন্ত। আপনি যেকোনো সময় কাশ্মীর যেতে পারেন, তবে এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময় ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে ভালো। বিশেষ করে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ কাশ্মীরের টিউলিপ বাগান, বরফে ঢাকা পাহাড়ের দৃশ্য ও রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ার জন্য আদর্শ।
কাশ্মীর ও লাদাখ ভ্রমণের সময়কাল ও খরচ
দুই জায়গার সব সৌন্দর্য উপভোগ করতে কমপক্ষে এক মাস লাগে, তবে ৮-১০ দিনে একসঙ্গে দু’জায়গা ভ্রমণ করা সম্ভব। কাশ্মীর ভ্রমণের খরচ আনুমানিক ৫০-৬০ হাজার টাকা, তবে আপনার শপিং ও অন্যান্য খরচ অনুযায়ী বাড়তে পারে।
লাদাখ ভ্রমণের প্রস্তুতি
লাদাখে যাওয়ার জন্য পূর্ব পরিকল্পনা খুব জরুরি। ছয় মাস আগেই পরিকল্পনা করা ভালো। উচ্চতা বেশি (প্রায় ১১,৫০০ ফুট) হওয়ায় অক্সিজেনের অভাবের সমস্যা হতে পারে, তাই কিছু প্রস্তুতি ও বিশ্রাম দরকার। AMS (অ্যাকিউট মাউন্টেইন সিকনেস) থেকে বাঁচতে লেহে পৌঁছে ১-২ দিন বিশ্রাম নিন ও প্রচুর পানি পান করুন।
শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখতে যাওয়ার আগের মাসগুলোতে ব্যায়াম করা উচিত। হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট থাকলে যাওয়া ঠিক নয়।
লাদাখ সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় নিরাপত্তা কঠোর। আর্মি ক্যাম্প এবং আর্মি কনভয়ের উপস্থিতি নিয়মিত দেখা যায়। তাই পাসপোর্ট, হোটেলের ঠিকানা এবং ফোন নম্বর সঙ্গে রাখুন। মোবাইল নেটওয়ার্ক সীমিত, মূলত BSNL কাজ করে, তাই হোটেলে ওয়াইফাই নিশ্চিত করুন।
লাদাখ-কাশ্মীর ট্যুর প্ল্যানের খসড়া
- প্রথম দিন: ঢাকা থেকে ট্রেনে আখাউড়া, সেখান থেকে ল্যান্ড বর্ডার পার হয়ে আগরতলা। বিকালে দিল্লি, রাতে দিল্লিতে থাকা।
- দ্বিতীয় দিন: দিল্লি থেকে লাদাখের লেহ ফ্লাইট। দিনব্যাপী বিশ্রাম।
- তৃতীয় দিন: লেহ শহরের আশেপাশে ঘুরে দেখা।
- চতুর্থ দিন: লেহ থেকে সড়ক পথে কার্গিল যাত্রা, পথে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে রাত কার্গিলে।
- পঞ্চম দিন: কার্গিল থেকে সোনমার্গ, জোজিলা পাস অতিক্রম, বিকেলে পেহেলগাম।
- ষষ্ঠ দিন: পেহেলগামে দিনব্যাপী ঘোরাঘুরি, সন্ধ্যায় শ্রীনগর যাত্রা, রাত ডাল লেকে ভাসমান হোটেলে।
- সপ্তম দিন: শ্রীনগর শহরে ঘোরাঘুরি, কেনাকাটা, রাত হোটেলে।
- অষ্টম দিন: সকালবেলা ফ্লাইটে দিল্লি, তারপর আগরতলা ও ঢাকায় ফেরত।
শেষ কথা
কাশ্মীর একটি অত্যন্ত সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন অঞ্চল। এখানে আবর্জনা ফেলবেন না। স্থানীয়দের ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন। তারা বাংলাদেশিদের বিশেষ সম্মান করে এবং ক্রিকেট তাদের খুবই প্রিয়। সাকিব-মাশরাফির জনপ্রিয়তা এখানেও উজ্জ্বল।
এই লাদাখ-কাশ্মীর ট্যুর প্ল্যান আপনার ভ্রমণকে সহজ, নিরাপদ ও আনন্দময় করে তুলবে, আশা করি আপনার পরবর্তী ভ্রমণে সহায়ক হবে।
মন্তব্য