বাংলাদেশের সুন্দর ১০ ঝর্ণা ও জলপ্রপাত

বাংলাদেশের সুন্দর ১০ ঝর্ণা ও জলপ্রপাত

এক সময় বাংলাদেশে ঝর্ণা বলতে শুধু মাধবকুণ্ডের নামই শোনা যেত। কিন্তু এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আরও অনেক ঝর্ণা ও জলপ্রপাত আবিষ্কৃত হয়েছে। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ও মিরসরাই থেকে শুরু করে সিলেট, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি—এসব অঞ্চলে ছড়িয়ে আছে অজানা অনেক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। বেশিরভাগ ঝর্ণাই এখনও পর্যটকদের অগোচরে রয়েছে। আবার কিছু ঝর্ণা এতই দুর্গম যে সেখানে পৌঁছানো সময়সাপেক্ষ ও কঠিন। প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য সুন্দর খুঁজে বেড়ানোর এই দুঃসাহসিক অভিযান থেমে নেই। এই ভ্রমণ গাইডে আমরা জানব বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর ১০টি ঝর্ণা ও জলপ্রপাত সম্পর্কে।

নাফাখুম (Nafakhum)

বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলার রেমাক্রি ইউনিয়নে অবস্থিত নাফাখুম জলপ্রপাত পানি প্রবাহের দিক থেকে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ জলপ্রপাত হিসেবে পরিচিত। অনেকে এটিকে "বাংলার নায়াগ্রা" বলে আখ্যায়িত করেন। মারমা ভাষায় "খুম" শব্দের অর্থ জলপ্রপাত।

নাফাখুমে যাওয়ার জন্য থানচি বাজার থেকে সাঙ্গু নদী পথে নৌকায় করে রেমাক্রি পৌঁছাতে হয়। এরপর রেমাক্রি থেকে প্রায় তিন ঘণ্টা পায়ে হেঁটে গেলে প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্যের দেখা মেলে।

ধুপপানি ঝর্ণা (Dhuppani)

রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নের ওড়াছড়িতে অবস্থিত ধুপপানি ঝর্ণা প্রকৃতির এক অনন্য সৃষ্টি। ২০০০ সালের দিকে এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসী এই স্থানে ধ্যান ও উপাসনা শুরু করলে স্থানীয় জনগণের প্রচেষ্টায় ঝর্ণাটি ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। "ধুপপানি" নামটির অর্থ হলো "সাদা পানির ঝর্ণা"। প্রায় ১৫০ মিটার উঁচু থেকে নেমে আসা এই ঝর্ণার শোভা দেখতে প্রতিদিন অনেক পর্যটক ভিড় জমান।

ধুপপানি ঝর্ণার চারপাশের অরণ্যে হরিণ, বন্য শূকর, বনবিড়াল ও ভাল্লুকের মতো বন্যপ্রাণীর বসবাস। ঝর্ণার গর্জন এতটাই প্রবল যে, প্রায় ২ কিলোমিটার দূর থেকেও এর পানির আছড়ে পড়ার শব্দ শোনা যায়। প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে এই ঝর্ণা এক অপূর্ব দর্শনীয় স্থান।

তিনাপ সাইতার (Tinap Saitar)

বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে অবস্থিত তিনাপ সাইতার বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জলপ্রপাত, যা স্থানীয়ভাবে পাইন্দু সাইতার নামেও পরিচিত। ট্রেকিংয়ের জন্য এই জায়গাটি চ্যালেঞ্জিং হলেও এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার জন্য প্রচুর অভিযাত্রী এখানে আসেন। তবে, তিনাপ সাইটারে পৌঁছাতে ৪০ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে অতিক্রম করতে হয়, যা শারীরিকভাবে ফিট না থাকলে কষ্টকর হতে পারে।

বৈশিষ্ট্য:

  • প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি অ্যাডভেঞ্চারের স্বাদ।
  • কঠিন ট্রেকিং রুট, তাই প্রস্তুতি নিয়ে যাওয়া জরুরি।
  • দূরত্ব ও কষ্ট সত্ত্বেও অভিজ্ঞতা অসাধারণ।

জাদিপাই ঝর্ণা (Jadipai)

বান্দরবন জেলার রুমা উপজেলায় অবস্থিত জাদিপাই ঝর্ণা বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রশস্ত জলপ্রপাতগুলোর মধ্যে একটি। বর্ষাকালে এখানকার পানির প্রবাহ বহুগুণে বেড়ে যায়, যা জলপ্রপাতটিকে আরও মহিমান্বিত করে তোলে। এ সময় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পর্যটকরা জাদিপাই ঝর্ণার অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে ভিড় জমান।

কেওক্রাডং থেকে প্রায় ২৫০০ ফুট নিচে জাদিপাই ঝর্ণার অবস্থান। এই ঝর্ণায় পায়ে হেঁটে পৌঁছাতে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লাগে, তবে প্রকৃতির মাঝে এই যাত্রা অত্যন্ত রোমাঞ্চকর ও সৌন্দর্যময়।

আমিয়াখুম (Amiakum)

বান্দরবানে অবস্থিত আমিয়াখুম জলপ্রপাতকে অনেকে "বাংলার ভূস্বর্গ" বলে জানেন। অনেকের মতে, এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর জলপ্রপাত। সবুজ পাহাড় ও পাথরের ফাঁক দিয়ে সাদা ফেনায় মোড়া জলধারা নিচে পড়ছে। প্রবাহমান জলের মিষ্টি শব্দ আর জলপ্রপাতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যে কাউকে মুগ্ধ করে—এ দৃশ্য হৃদয়ে গভীর ছাপ রাখে।

সাইংপ্রা ঝর্ণা (Saingpra)

বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলায় অবস্থিত কির্স তং পাহাড়ের গায়ে বয়ে চলা সাইংপ্রা ঝর্ণা আদিম সৌন্দর্যের এক অনন্য নিদর্শন। তবে এই ঝর্ণা দেখতে যাওয়া সহজ নয়। পিচ্ছিল ও দুর্গম পথ ধরে হাঁটার সময় প্রতিটি মুহূর্তে থাকতে হয় সতর্ক।即便如此, চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যাত্রাপথকে করে তোলে অবিস্মরণীয়। তিনটি ধাপে বিভক্ত এই সাইংপ্রা ঝর্ণা প্রকৃতির এক অনিন্দ্য সৃষ্টি।

খৈয়াছড়া ঝর্ণা (Khoiyachora)

চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাইয়ে অবস্থিত খৈয়াছড়া ঝর্ণা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও সুন্দর ঝর্ণাগুলোর মধ্যে অন্যতম। নয়টি ধাপে প্রবাহিত এই ঝর্ণার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য每一位 ভ্রমণপ্রেমীকে মুগ্ধ করে। সবুজ-শ্যামল গ্রামীণ পথ, আঁকাবাঁকা মেঠো রাস্তা আর পাহাড়ের মায়াবী ডাকে খৈয়াছড়ার মোহনীয়তা যে কারও হৃদয় ছুঁয়ে যায়। এই অপরূপ সৌন্দর্যের জন্য প্রকৃতিপ্রেমীরা একে "বাংলাদেশের ঝর্ণা রানী" হিসেবে অভিহিত করেন। প্রকৃতির কোলে লুকিয়ে থাকা এই ঝর্ণা তার অনন্য সৌন্দর্য দিয়ে সবাইকে আকর্ষণ করে।

হামহাম জলপ্রপাত (Humhum)

মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার রাজকান্দি বনাঞ্চলের গভীরে অবস্থিত হাম হাম জলপ্রপাত। প্রায় ১৪০ ফুট উঁচু থেকে নেমে আসা এই জলপ্রপাতের নির্জন ও বুনো সৌন্দর্য দেখতে প্রতি বর্ষায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা এখানে ছুটে আসেন। প্রকৃতির অদম্য সৃষ্টি হাম হাম জলপ্রপাত তার স্বচ্ছ জলধারা ও সবুজ অরণ্যের মাঝে এক অনন্য অভিজ্ঞতা প্রদান করে।

দামতুয়া জলপ্রপাত (Damtua)

দামতুয়া ঝর্ণার কয়েকশ গজ উপরে অবস্থিত দামতুয়া জলপ্রপাত, যার ধাপগুলো প্রকৃতির হাতে তৈরি একেকটি অনবদ্য স্থাপত্য। এই জলপ্রপাতের সৌন্দর্য যেন মায়াবী এক স্বর্গীয় দৃশ্য।

দামতুয়া জলপ্রপাত দেখতে চাইলে বান্দরবানের আলীকদম বাসস্ট্যান্ড থেকে থানচির নতুন রাস্তা ধরে প্রায় ১৭ কিলোমিটার এগোতে হবে। এরপর গাইডের সহায়তায় পাহাড়ি বনের গভীরে প্রবেশ করতে হয়। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাস্তা থানচি পথে চলার সময় চারপাশের পাহাড়ি দৃশ্যাবলি এতটাই মোহনীয় যে তা কল্পনাকেও ছাড়িয়ে যায়।

মন্তব্য