
কক্সবাজার বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য, যা প্রকৃতিপ্রেমী ও ভ্রমণপিপাসুদের হৃদয় জয় করে আছে। বিশ্বের দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্রসৈকতের মোহনীয়তা, পাহাড়, নদী, জলপ্রপাত ও নৈসর্গিক দ্বীপের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে এই অপরূপ স্থান। এখানকার ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ বেলাভূমিতে উত্তাল ঢেউয়ের আঘাত বা সন্ধ্যার রক্তিম সূর্যাস্তের দৃশ্য যে কোনো পর্যটককে মুগ্ধ করে তোলে।
এই ভ্রমণ গাইডে আমরা কক্সবাজার ভ্রমণের সম্পূর্ণ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করব—যেমন কীভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন, কোথায় খাবেন এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য। চলুন, জেনে নেওয়া যাক!
ভ্রমণ পরিকল্পনা:
- যাতায়াত: ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন বা বিমানে যাওয়া যায়।
- থাকার ব্যবস্থা: লাক্সারি হোটেল থেকে বাজেট ফ্রেন্ডলি গেস্ট হাউস—বিভিন্ন অপশন রয়েছে।
- দর্শনীয় স্থান: হিমছড়ি, ইনানী বিচ, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ, সোনাদিয়া দ্বীপ ইত্যাদি।
- খাওয়া-দাওয়া: তাজা সামুদ্রিক খাবারের জন্য বিখ্যাত কক্সবাজারের রেস্টুরেন্ট ও স্থানীয় দোকান।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর অ্যাডভেঞ্চারের লোভনীয় মিশেলে কক্সবাজার সত্যিই এক অবিস্মরণীয় গন্তব্য!
২ দিন ১ রাতের প্ল্যান
- কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত (লাবনী, সুগন্ধা ও কলাতলী বীচ)
- মেরিন ড্রাইভ
- দরিয়া নগর
- হিমছড়ি
- ইনানী সমুদ্র সৈকত
- রামু বা মহেশখালী (আদিনাথ মন্দির, রাখাইন পাড়া ও স্বর্ণ মন্দির)
প্রথম দিন:
যেহেতু মাত্র দুই দিন এক রাতের সময় আছে, তাই রাতের বাসে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দিন। সকালে কক্সবাজার পৌঁছে ১১টার মধ্যে হোটেলে চেক ইন করুন। এরপর সরাসরি চলে যান সমুদ্র সৈকতে। কিছুক্ষণ সাগরের পানিতে গা ভিজিয়ে ছবি তুলে দুপুর ২টার আগে হোটেলে ফিরে আসুন। দুপুরের খাবার হোটেল বা কাছাকাছি কোনো রেস্টুরেন্টে সেরে নিন।
বিকেলে আবার বেরিয়ে পড়ুন সমুদ্র দেখতে। সন্ধ্যা পর্যন্ত বীচে সময় কাটিয়ে রাতে হোটেলে ফিরে আসুন। চাইলে বার্মিজ মার্কেটে ঘুরে আসতে পারেন। রাতের খাবারের জন্য পছন্দ করতে পারেন রোদেলা, ঝাউবন, ধানসিঁড়ি, পৌষি, নিরিবিলি বা বোগদাদিয়া-এর মতো রেস্টুরেন্ট। এছাড়া, ঝাউতলার রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ড একটু ঘুরে দেখতে পারেন। ভোরের সূর্যোদয় দেখতে চাইলে রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ুন।
দ্বিতীয় দিন:
ভোরের কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য অসাধারণ! এই দৃশ্য মিস করবেন না। ভোরে উঠে সৈকতে গিয়ে কিছুক্ষণ কাটিয়ে এসে সকালের নাস্তা সেরে নিন।
আজকের দিনটি দুই ভাগে ভাগ করে নিতে পারেন:
মহেশখালীর জন্য: যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রওনা হোন। মহেশখালী ঘুরতে প্রায় ৪ ঘণ্টা সময় লাগবে। প্রথমে অটো বা সিএনজি নিয়ে চলে যান মহেশখালী ট্রলার ঘাটে। স্পিডবুট বা লোকাল ট্রলারে যেতে পারেন। দুপুরের আগেই কক্সবাজার ফিরে এসে খাবার সেরে নিন।
বিকেলে: হিমছড়ি ও ইনানী বীচের উদ্দেশ্যে রওনা দিন। হিমছড়ির ঝর্ণা দেখে ইনানী বীচে সূর্যাস্ত উপভোগ করুন। ফিরে এসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিন। প্রয়োজনে বার্মিজ মার্কেটে শেষ কেনাকাটা সেরে নিন। এরপর বাসের সময় অনুযায়ী কক্সবাজার থেকে ফিরে যান আপনার গন্তব্যের দিকে।
এই প্ল্যান অনুসরণ করে আপনি কক্সবাজারের প্রধান প্রধান দর্শনীয় স্থানগুলো স্বল্প সময়েই ঘুরে দেখতে পারবেন!
৩ দিন ২ রাতের প্ল্যান
যেসব স্থান ঘুরে দেখবেন:
- কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত (লাবনী, সুগন্ধা ও কলাতলী বীচ)
- রামুর বৌদ্ধ বিহারসমূহ
- মেরিন ড্রাইভ
- দরিয়া নগর
- হিমছড়ি
- ইনানী সমুদ্র সৈকত
- রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড
- মহেশখালী (আদিনাথ মন্দির, রাখাইন পাড়া ও স্বর্ণ মন্দির)
প্রথম দিন
ঢাকা থেকে রাতের বাসে কক্সবাজার পৌঁছে সকাল ১১টার মধ্যে হোটেলে চেক-ইন করুন। এরপর সরাসরি চলে যান সমুদ্র সৈকতে। কিছুক্ষণ সাগরের পানিতে গা ভিজিয়ে ছবি তুলে দুপুর ২টার মধ্যে হোটেলে ফিরে আসুন। দুপুরের খাবার হোটেল বা কাছাকাছি কোনো রেস্টুরেন্টে সেরে নিন। খাওয়ার পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বিকেলে আবার বেরিয়ে পড়ুন সমুদ্র দেখতে। সন্ধ্যা পর্যন্ত বীচে সময় কাটিয়ে হোটেলে ফিরুন অথবা বার্মিজ মার্কেটে ঘুরে আসুন। রাতের খাবারের জন্য রোদেলা, ঝাউবন, ধানসিঁড়ি, পৌষি, নিরিবিলি বা বোগদাদিয়ার মতো রেস্টুরেন্ট বেছে নিন। ভোরের সূর্যোদয় দেখতে চাইলে রাতেই ঘুমিয়ে পড়ুন।
দ্বিতীয় দিন
ভোরের কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য অসাধারণ! এই দৃশ্য মিস করবেন না। সূর্যোদয় দেখে হোটেলে ফিরে সকালের নাস্তা সেরে নিন। এরপর সিএনজি বা অটোরিকশা নিয়ে রামুর বৌদ্ধ বিহারগুলো ঘুরে দেখতে যান। রামু যাওয়ার জন্য শেয়ার্ড অটোতে জনপ্রতি ভাড়া ৪০ টাকা, আর রিজার্ভ নিলে যাওয়া-আসা ও ঘুরে দেখার জন্য ৪০০-৫০০ টাকা খরচ হবে। ৩-৪ ঘণ্টায় বেশ কয়েকটি বিহার দেখতে পারবেন।
দুপুরের আগে কক্সবাজারে ফিরে খাবার সেরে হিমছড়ি ও ইনানী বীচের উদ্দেশ্যে রওনা দিন। হিমছড়ির ঝর্ণা ও ইনানীর সৈকত ঘুরে দেখতে ৩-৪ ঘণ্টা সময় রাখুন। ইনানীতে সূর্যাস্ত দেখে কক্সবাজারে ফিরে বিশ্রাম নিন। সন্ধ্যায় বীচে সময় কাটাতে পারেন বা বার্মিজ মার্কেটে কেনাকাটা করতে যেতে পারেন। রাতের খাবারের পর রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড ঘুরে দেখতে পারেন।
তৃতীয় দিন
সকালে নাস্তা সেরে ট্রলার ঘাটে যান। মহেশখালী যাওয়ার জন্য স্পিডবোট রিজার্ভ করতে পারেন অথবা লোকাল ট্রলারে যেতে পারেন। মহেশখালী ঘাটে পৌঁছে ইজিবাইক বা রিকশা ভাড়া করে আদিনাথ মন্দির, রাখাইন পাড়া ও স্বর্ণ মন্দির ঘুরে দেখুন।
মহেশখালী থেকে ফিরে বিকেল সন্ধ্যায় শেষবারের মতো বীচে সময় কাটান। রাতের খাবার শেষে বাস কাউন্টারে চলে যান ফেরার জন্য।
যেভাবে কক্সবাজার যাবেন
ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার যেতে পারেন বিভিন্ন বাস সার্ভিসে, যেমন: সৌদিয়া, এস আলম মার্সিডিজ বেঞ্জ, গ্রিন লাইন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, সোহাগ পরিবহন, এস.আলম পরিবহন ও মডার্ন লাইন। নন-এসি বাসের ভাড়া ১০০০-১২০০ টাকা, আর এসি বাসের ভাড়া ১৩০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত (ক্লাসভেদে)।
ট্রেনে যেতে চাইলে ঢাকার কমলাপুর বা বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে পর্যটক এক্সপ্রেস বা কক্সবাজার এক্সপ্রেস এ ভ্রমণ করতে পারেন।
চট্টগ্রাম থেকে নতুন ব্রিজ এলাকা বা দামপাড়া বাস স্ট্যান্ড থেকে এস আলম, হানিফ, ইউনিক প্রভৃতি বাসে কক্সবাজার যাওয়া যায়। ভাড়া ৪২০ থেকে ১০০০ টাকা (বাসের ধরন অনুযায়ী)।
বিমানে যেতে চাইলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, নভোএয়ার, ইউএস বাংলা বা এয়ার অ্যাসট্রা এয়ারলাইন্স-এর ফ্লাইটে ঢাকা থেকে মাত্র ৪৫-৬০ মিনিটে কক্সবাজার পৌঁছানো সম্ভব।
কোথায় থাকবেন
কক্সবাজারে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল পাওয়া যায়। সাধারণত অফ সিজনে অগ্রিম বুকিং ছাড়াই হোটেলে রুম পাওয়া গেলেও, পিক সিজনে আগে থেকে বুকিং করে যাওয়াই ভালো। এখানের উল্লেখযোগ্য হোটেল ও রিসোর্টগুলোর মধ্যে রয়েছে মারমেইড বিচ রিসোর্ট, সায়মন বিচ রিসোর্ট, ওশেন প্যারাডাইজ, লং বীচ, কক্স টুডে, হেরিটেজ, সী প্যালেস, সী গাল, কোরাল রীফ, নিটোল রিসোর্ট, আইল্যান্ডিয়া, বীচ ভিউ, সী ক্রাউন এবং ইউনি রিসোর্ট প্রভৃতি। এসব হোটেলে বাজেট ও সুবিধা অনুযায়ী ১,০০০ থেকে ২০,০০০ টাকায় রাত্রিযাপন করা যায়। আপনার পছন্দ ও প্রয়োজন অনুসারে উপযুক্ত হোটেল বেছে নিতে পারেন।
কোথায় কি খাবেন
কক্সবাজারের প্রায় সব হোটেলেই অতিথিদের জন্য নিজস্ব খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে পর্যটকরা চাইলে বাইরেও খেতে পারেন—এখানে বিভিন্ন ধরণ ও মানের রেস্টুরেন্ট সহজলভ্য। বাজেট-বান্ধব রেস্টুরেন্টের মধ্যে আল গনি, পৌষি, ঝাউবন, ধানসিঁড়ি, নিরিবিলি, কয়লা, কাসুন্দি, বোগদাদিয়া ইত্যাদি বিশেষ জনপ্রিয়। মনে রাখবেন, মৌসুমভেদে খাবারের দামে ওঠানামা হতে পারে।
মন্তব্য