কিভাবে শীতকালে ভ্রমণ প্রস্তুতি নিবেন

কিভাবে শীতকালে ভ্রমণ প্রস্তুতি নিবেন

শীতকাল এলেই বাঙালির মনে পিঠাপুলি আর গরম গরম খাবারের কথা মনে পড়ে। কিন্তু শুধু খাবারই নয়, শীতের সঙ্গে আমাদের মধ্যে জন্মে এক বিশেষ অনুভূতি ঘর ছেড়ে বাইরে কোথাও দূরে ঘুরে আসার তাড়া। শীতের প্রাকৃতিক রুক্ষতা আর শুষ্ক আবহাওয়া আমাদের জীবনকে আলাদা এক ছন্দে বেঁধে দেয় এবং সঙ্গে নিয়ে আসে শীতকালীন ছুটির আমেজ।

আমাদের দেশের ভৌগলিক অবস্থানের কারণে শীতকালে আবহাওয়া বেড়ানোর জন্য অত্যন্ত উপযোগী থাকে। তাই শীতের কোলাহলে শরীর ও মনকে সতেজ করতে আরাম-আয়েশের জন্য শীতে ভ্রমণের জুড়ি মেলা ভার। তবে সব জায়গাই শীতকালে ভ্রমণের জন্য সমান সুবিধাজনক নয়। এই ঋতুতে শুধু শরীরের তাপমাত্রাই নয়, ভ্রমণের নানা আনুষঙ্গিক বিষয়েও বাড়তি খেয়াল রাখতে হয়।

শীতের শীতে কম্বল আর গরম চায়ের উষ্ণতা ছাড়া ভ্রমণ করতে চাইলে, কিছু বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে—যা আপনার যাত্রাকে করবে নিরাপদ, আরামদায়ক এবং স্মরণীয়। চলুন দেখে নেওয়া যাক শীতকালে ভ্রমণের সময় কোন কোন বিষয়গুলো বিশেষ যত্নের দাবি রাখে।

যথাযথ পোশাক

শীতের হিমেল হাওয়ায় ঘরের আরাম ছেড়ে বাইরে বের হতে গেলে সবচেয়ে প্রথম প্রয়োজন যথাযথ শীতের পোশাক। আপনি কোথায় যাচ্ছেন, সেটার ওপর পোশাকের ধরন ও পরিমাণ নির্ভর করে। শীতের জন্য পাহাড়ই সবচেয়ে আদর্শ গন্তব্য, কারণ সেখানে অন্যান্য জায়গার তুলনায় ঠাণ্ডা অনেক বেশি তীব্র ও জাঁকিয়ে বসে। তাই পাহাড়ি এলাকায় ভ্রমণের সময় অবশ্যই কম ওজনের, কিন্তু গরম কাপড় নিতে হবে।

অপরদিকে, যদি সমুদ্রতট বা কম ঠান্ডার জায়গায় যান, তাহলে মাঝারি মানের শীতবস্ত্রই যথেষ্ট হবে। যাত্রাপথের ওজন কম রাখতে সর্বদা চেষ্টা করুন এমন একটি গরম কাপড় নিয়ে যাওয়ার, যা সব পরিস্থিতিতে ব্যবহার উপযোগী হবে।

মাফলার, মোজা, হাত মোজা, আর টুপি দুইটি করে রাখা ভালো, কারণ এগুলো সহজে হারিয়ে যায়। আর পায়ের জন্য সাধারণ স্যান্ডেলের পরিবর্তে কেডস, বুট বা স্নিকারস পরুন—যাতে ঠান্ডা ও ধুলো থেকে পা ভালোভাবে রক্ষা পায়।

প্রয়োজনীয় প্রসাধনী

শীতকালে আবহাওয়া বাইরে বেড়ানোর জন্য বেশ অনুকূল থাকলেও, ত্বকের জন্য প্রকৃতির নিরব অত্যাচার আগের মতোই চলে। শুষ্ক ও ঠাণ্ডা বাতাস ত্বককে রুক্ষ ও ফাটা পড়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। তাই সবসময় সঙ্গে ছোট একটি পেট্রোলিয়াম জেলি বা পোর্টেবল কৌটোতে ক্রিম, লোশন এবং লিপবাম রাখা অত্যন্ত জরুরি।

শীতের রোদ যদিও আরামদায়ক মনে হয়, তবুও তা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই বাইরে বের হলে সানগ্লাস ও সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত, যা ত্বককে রোদ থেকে রক্ষা করবে এবং শীতের ঝলসে যাওয়া থেকে বাঁচাবে।

গন্তব্যের ব্যাপারে খোঁজখবর

বেড়াতে যাওয়ার আগে গন্তব্যস্থল সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে শীতকালে ভ্রমণের সময় এটি আরও বেশি প্রয়োজন হয়, কারণ বিভিন্ন জায়গায় শীতের তীব্রতা ও প্রকোপ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। তাই যাত্রার আগে সেখানকার আবহাওয়ার পূর্বাভাস ভালো করে দেখে নিন।

এই ছোট্ট প্রস্তুতি আপনাকে প্যাকিংয়ের সময় সঠিক জিনিস বাছাই করতে সাহায্য করবে এবং যাত্রাপথে অপ্রত্যাশিত সমস্যায় পড়া থেকে রক্ষা করবে।

আগাম বুকিং নিশ্চিত করুন

শীতকাল আসে সঙ্গে নিয়ে ছুটির মাধুর্য ও আনন্দ, আর এই সময়টা সবাই প্রিয়জনের সঙ্গে ঘুরতে বের হওয়া পছন্দ করে। বাংলাদেশে শীতকালের ভ্রমণকেই বলা হয় প্রধান পিক সিজন। তাই এই সময়ে দূরের কোনো জনপ্রিয় স্থানে ভ্রমণের পরিকল্পনা করলে আগে থেকেই যানবাহন এবং হোটেলের টিকেট বুকিং করে নেওয়া উচিত।

বুকিং না করলে অনেক সময় অতিরিক্ত খরচের পাশাপাশি থাকা-খাওয়ার ও যাতায়াতের বন্দোবস্ত করতে বড় ধরনের ঝামেলায় পড়তে হয়। সুতরাং বুদ্ধিমানের মতো আগে থেকেই প্রস্তুতি নিলেই ভ্রমণ হবে নিরাপদ, আরামদায়ক ও স্মরণীয়।

প্রাথমিক ঔষধপত্র সঙ্গে রাখুন

চাই একা থাকুন বা দলের সঙ্গে, ভ্রমণের সময় ছোটোখাটো অসুস্থতাও আনন্দকে ব্যাহত করতে পারে। শীতকালে ঠাণ্ডা, জ্বর, কাশি সহ নানা ধরনের অসুখ দেখা দেয় বেশি। তাই ভ্রমণে যাওয়ার সময় অবশ্যই ফার্স্ট এইড কিট সাথে রাখুন। এর মধ্যে থাকা উচিত ঠাণ্ডা, কাশি, মাথাব্যথা, পেট খারাপ এবং জ্বরের ঔষধ। এই প্রস্তুতি থাকলে অপ্রত্যাশিত অসুস্থতার সময় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হয় এবং ভ্রমণ আনন্দময় হয়ে ওঠে।

খাবার পরিকল্পনা

শীতে ভ্রমণের সময় অতিরিক্ত তেল বা মশলার খাবার এড়িয়ে একটু বুদ্ধিমানের মতো খাবার নির্বাচন করলে শরীরও ভালো থাকে এবং ভ্রমণের আনন্দও দ্বিগুণ হয়। শীতকালে এমন খাবার খাওয়া উচিত যা শরীরকে গরম রাখতে সাহায্য করে এবং হাইড্রেশন বজায় রাখে।

চকলেট, স্যুপ, স্টু বা হট চকলেট ঠাণ্ডায় শরীরকে আরাম দেয়। বিদেশের তীব্র শীতল এলাকায় গেলে ফ্যাটযুক্ত খাবার গ্রহণ করা বিশেষভাবে প্রয়োজন, কারণ তা শরীরের তাপমাত্রা ধরে রাখতে সহায়তা করে।

অতিরিক্ত শীতকালীন ভ্রমণের টিপস

ট্রেকিং: শীতকাল শুষ্ক আবহাওয়া থাকার কারণে ট্রেকিংয়ের জন্য আদর্শ সময়। হালকা ওজনের মালপত্র, স্লিপিং ব্যাগ এবং আগুন জ্বালানোর উপকরণ সঙ্গে রাখুন।

রাত ও ভোরের যাত্রা এড়িয়ে চলুন: কুয়াশা ও শীতের কারণে রাতের যাত্রা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

পানির বোতল সঙ্গে রাখুন: শীতকালে পানি কম পান করা হয়, তাই পানির অভাবে অসুস্থতা হতে পারে।

শিশুদের বিশেষ যত্ন: শিশুদের জন্য বেশি গরম জামাকাপড় এবং তাদের ঠাণ্ডা প্রতিরোধে বিশেষ খেয়াল রাখুন।

বিদেশি ভ্রমণে ফ্লু শট নিন: তীব্র শীতে যাওয়া হলে ফ্লু শট নেওয়া জরুরি, যা সর্দি, কাশি ও অন্যান্য শীতজনিত অসুখ থেকে রক্ষা করবে।

মন্তব্য