
চট্টগ্রাম পাহাড় ও সমুদ্রের মাঝে অবস্থিত একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যপূর্ণ অঞ্চল, যা ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য এক বিশেষ আকর্ষণের কেন্দ্র। চট্টগ্রাম শহরের আশেপাশে অনেক সমুদ্র সৈকত রয়েছে, যেগুলো একদিনে ঘুরে আসা সম্ভব।
পতেঙ্গা, পারকি, বাঁশবাড়িয়া, গুলিয়াখালী, আকিলপুর এবং কাট্টলী—এই পাচটি সৈকত শহর থেকে সহজেই পৌঁছানো যায় এবং প্রতিটির নিজস্ব অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য, ম্যানগ্রোভ বন, কাঠের সেতু, স্থানীয় খাবারের স্বাদ এবং শান্ত পরিবেশ মিলিয়ে এই সৈকতগুলো ভ্রমণকে স্মরণীয় করে তোলে।
১. পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত
চট্টগ্রাম শহর থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত। এটি চট্টগ্রামের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন স্থান। এখানে সূর্যের উদয় ও অস্তের সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করা যায়। চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য অপেক্ষমাণ ছোট-বড় জাহাজগুলো এই এলাকার পরিবেশকে আরও জীবন্ত করে তোলে। পতেঙ্গায় স্পীডবোটে চড়ে সমুদ্রে ভ্রমণের সুযোগ রয়েছে। সমুদ্রতটে ঘুরে বেড়ানোর জন্য সী বাইক এবং ঘোড়াও পাওয়া যায়। কেনাকাটার জন্য আছে বার্মিজ মার্কেট এবং খাওয়ার জন্য বিভিন্ন রকমের সুস্বাদু স্ট্রিট ফুডের ব্যবস্থা রয়েছে।

২. বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত
সীতাকুণ্ড উপজেলার অন্তর্গত এই সৈকতটি চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সীতাকুণ্ড যেন প্রকৃতির নানা রূপের এক অনন্য সমাহার—এখানে রয়েছে পাহাড়, জলাশয়, ঝর্ণা, সমুদ্র সৈকত এবং প্রাচীন নিদর্শন। বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত (Bashbaria Sea Beach) পর্যটকদের কাছে একটি বিশেষ আকর্ষণের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। ঝাউ গাছের সারি, মুক্ত এবং স্বচ্ছন্দ পরিবেশ, সবুজ ঘাসে ঢাকা চর, এবং মনোরম পিকনিক স্পটসহ বাঁশবাড়িয়া সৈকত তার অপরূপ সৌন্দর্যে দর্শনার্থীদের অপেক্ষায় রয়েছে।

৩. গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত
গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায় অবস্থিত। স্থানীয়রা এই সৈকতকে মুরাদপুর বীচ নামেও জানে। সীতাকুণ্ড বাজার থেকে গুলিয়াখালী সৈকত পর্যন্ত পথ মাত্র ৫ কিলোমিটার। প্রকৃতি এখানে কোনো সংযম করেনি, তাই গুলিয়াখালী সৈকত খুবই সুন্দর। একপাশে বিস্তীর্ণ সাগরের জলরাশি আর অন্যপাশে কেওড়া বন এটি একটি অনন্য সৌন্দর্যের স্থান হিসেবে গড়ে তুলেছে।

৪. আকিলপুর সমুদ্র সৈকত
চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দুরে সীতাকুন্ড উপজেলার আকিলপুর সমুদ্র সৈকত অবস্থিত। যদিও এই সৈকতটি তুলনামূলকভাবে কম পরিচিত, তবুও এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অদ্ভুত সুন্দর। সীতাকুন্ডের নিমতলা গ্রামের পাশে এই সৈকতটি করে। আগে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের কারণে এখানে জলস্তর অনেক উঁচু হত। বর্তমানে সরকার বাধ নির্মাণ করে এবং সারিবদ্ধ গাছ লাগিয়ে এখানকার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ এখানে ঘুরতে আসেন। পর্যটকদের সুবিধার্থে এখানে শৌচাগার এবং বিভিন্ন দোকানেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।
৫. পারকি সমুদ্র সৈকত
চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে আনোয়ারা উপজেলার পারকি সমুদ্র সৈকত অবস্থিত। এটি কর্ণফুলী নদীর মোহনার বিপরীত পাড়ে, যেখানে নদী ও সমুদ্রের মিলনস্থল চোখে পড়ে। সৈকতের চারপাশে ঘন ঝাউবন, সবুজ মাঠ এবং মাছের ঘের রয়েছে, যা এক অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সৃষ্টি করে। পর্যটকদের জন্য এখানে স্পিডবোট, সি-বাইক, ঘোড়ার সওয়ারি এবং পিকনিক স্পটসহ নানা ধরনের বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে। পারকি সৈকতের সূর্যাস্ত অত্যন্ত মনোরম এবং দর্শনার্থীদের অনেক আকৃষ্ট করে। পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে একদিনের ঘোরাঘুরির জন্য পারকি সমুদ্র সৈকত একটি আদর্শ স্থান।

এই পাচটি সমুদ্র সৈকত শহর থেকে খুব সহজেই পৌঁছানো যায় এবং প্রতিটি সৈকতের নিজস্ব অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ব্যস্ত জীবনের ক্লান্তি কাটিয়ে উঠতে বা প্রিয়জনদের সঙ্গে আনন্দঘন মুহূর্ত কাটাতে চট্টগ্রামের এই সমুদ্র সৈকতগুলো হতে পারে আপনার পরবর্তী ভ্রমণের স্থান।
মন্তব্য