পুরান ঢাকার সাকরাইন উৎসব কিভাবে পালিত হয়

পুরান ঢাকার সাকরাইন উৎসব কিভাবে পালিত হয়

পুরান ঢাকার সাকরাইন উৎসব বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীন উৎসব। এটি মূলত পৌষসংক্রান্তি হিসেবে পালিত হয় এবং ঘুড়ি উৎসব নামেও বিখ্যাত। বর্তমানে সাকরাইন উৎসব (Shakrain Festival) শুধু পুরান ঢাকার সীমা ছাড়িয়ে সার্বজনীন একটি আয়োজনে পরিণত হয়েছে।

এই উৎসবে সারাদিন ধরে ঘুড়ি উড়ানো হয়, বাড়ির ছাদগুলো জমকালো আলোকসজ্জায় সাজে এবং আগুন নিয়ে নানান খেলার আয়োজন করা হয়। সন্ধ্যায় আকাশ রঙিন হয়ে ওঠে বর্ণিল আতশবাজি ও ফানুশে, যা পুরান ঢাকার পরিবেশকে করে তোলে আরও প্রাণবন্ত।

সাকরাইন কবে হয়?

ঐতিহ্যবাহী 'সাকরাইন' উৎসব পৌষসংক্রান্তি ও মাঘ মাসের সূচনালগ্নে উদযাপিত হয়ে থাকে। প্রতি বছর ১৪ জানুয়ারি এই উৎসব নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালন করা হয়। এবারও ২০২৫ সালের ১৪ জানুয়ারি (৩০ পৌষ) তারিখে পুরান ঢাকায় বর্ণাঢ্য আয়োজনে সাকরাইন উৎসব অনুষ্ঠিত হবে।

সাকরাইন উৎসবের ইতিহাস

"সাকরাইন" শব্দটি সংস্কৃত শব্দ "সংক্রান্তি" থেকে এসেছে, যার অর্থ হলো "বিশেষ মুহূর্ত"। এই বিশেষ সময়কে ঘিরে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে উৎসব পালন করা হয়, যদিও নাম ভিন্ন। বাংলায় এটি "পৌষ সংক্রান্তি" এবং ভারতীয় উপমহাদেশে "মকর সংক্রান্তি" নামে পরিচিত।

ইতিহাস অনুসারে, ১৭৪০ সালে মোঘল আমলে নায়েব-ই-নাজিম নওয়াজেশ মোহাম্মদ খানের সময়ে প্রথম ঘুড়ি উড়ানোর প্রচলন শুরু হয়। সেই থেকে এই দিনটি একটি বড় উৎসবে পরিণত হয়েছে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এতে অংশ নেন। পুরান ঢাকাবাসী দিনভর নানা আয়োজনের মাধ্যমে এই উৎসব উদযাপন করে থাকেন।

সাকরাইনে কী কী হয়?

ছোট-বড় সবাই অসম্ভব উৎসাহ আর উদ্দীপনা নিয়ে এই উৎসবে শামিল হয়। প্রায় প্রতিটি বাড়ির ছাদ আলোকসজ্জায় ঝলমলে হয়ে ওঠে। দুপুর থেকেই আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর ধুম পড়ে যায়। নানা রঙ আর আকৃতির ঘুড়িতে আকাশ ভরে যায়। কে কার ঘুড়ির সুতা কাটতে পারল—এই নিয়ে চলে মজার প্রতিযোগিতা। ঘুড়ির সুতা কাটার মুহূর্তে আনন্দের চিৎকারে মুখরিত হয়ে ওঠে চারপাশ।

সন্ধ্যা নামতেই পুরান ঢাকার আকাশ জ্বলে ওঠে হাজারো আতশবাজির আলোয়। রাতের আকাশে ভেসে বেড়ায় রঙিন ফানুশ। অনেকে আগুন নিয়ে খেলার কৌশল দেখায়—একজনের মুখে কেরোসিন নিয়ে ফুঁ দিলে তা আগুনের সংস্পর্শে এসে দৃষ্টিনন্দন অগ্নিশিখার সৃষ্টি করে। বর্তমানে সাকরাইন উৎসবে যুক্ত হয়েছে আধুনিকতার ছোঁয়া, যেমন ডিজে পার্টি, প্রজেক্টর শো এবং জোরালো সাউন্ড সিস্টেমের বাজনা।

সাকরাইনের দিনে পুরান ঢাকার বাড়িগুলোতে তৈরি হয় নানা ঐতিহ্যবাহী খাবার। শীতের স্পেশাল পিঠা, মুড়ি-গুড়, পায়েশসহ মজাদার সব পদ পরিবেশন করা হয়।

কোথায় যাবেন

সাকরাইন উৎসবে যোগ দিতে প্রতি বছর বহু মানুষ পুরান ঢাকায় বেড়াতে আসেন। পুরান ঢাকার প্রায় প্রতিটি এলাকাতেই এই উৎসবের আয়োজন দেখা যায়। তবে উৎসবের পুরো রোমাঞ্চ উপভোগ করতে চাইলে আপনি ঘুরে দেখতে পারেন সূত্রাপুর, লক্ষীবাজার, গেন্ডারিয়া, সদরঘাট, তাঁতিবাজার, হাজারীবাগ বা নবাবপুর।

পুরান ঢাকায় যদি আপনার কোনো বন্ধু, আত্মীয় বা পরিচিতজন থাকেন, তাহলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে যাওয়াই সবচেয়ে ভালো উপায়। সাকরাইনের আসল আবহ সাধারণত বাড়ির ছাদ থেকে সবচেয়ে ভালোভাবে উপভোগ করা যায়। পরিচিত কারও বাড়িতে গেলে এই অভিজ্ঞতা আপনিও পাবেন।

কখন যাবেন

সাকরাইন উৎসবের সূচনা হয় দুপুর পর থেকে। রাতভর চলে নানা রকমের আনন্দ আয়োজন। তবে সবচেয়ে উপভোগ্য মুহূর্তগুলো হচ্ছে বিকেল ও সন্ধ্যার সময়। আপনার উচিত এমনভাবে যাত্রা শুরু করা যাতে পুরান ঢাকার কোনো এক স্থানে বিকেলের মধ্যেই পৌঁছানো যায়।

মন্তব্য