কানাই বলাই দিঘী

পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার কাছিপাড়া ইউনিয়নে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী কানাই বলাই দিঘী (Kanai Bolai Dighi)। এই দিঘীটি স্থানীয়দের বিশুদ্ধ পানির চাহিদা মেটানোর জন্য খনন করা হয়েছিল। কানাই বলাই দিঘীর আনুমানিক দৈর্ঘ্য ২০০ মিটার এবং প্রস্থ ১৪০ মিটার। প্রায় তিনশত বছরের পুরনো এই দিঘীকে ঘিরে নানা রকম লোককথা প্রচলিত আছে। কথিত আছে, প্রায় একশ বছর আগে কাছিপাড়া গ্রামে কানাই ও বলাই নামের হিন্দু ধর্মাবলম্বী দুই ভাই বাস করতেন। একদিন তারা খেজুর গাছের বাকল ভেবে দুটি বিশাল আকৃতির গজাল মাছের উপর বসে পড়েন। পরে মাছগুলি তাদের গভীর জলে টেনে নিয়ে যায় এবং সেই থেকে দুই ভাইয়ের আর কোনো খোঁজ মেলেনি। এই ঘটনার পর থেকেই দিঘীটি কানাই বলাই দিঘী নামে পরিচিতি পায়। অনেকের মতে, এই দিঘীর কাছে ভালো মন ও সৎ উদ্দেশ্যে কিছু চাইলে তা পূরণ হয়। আবার কেউ যদি দিঘীটিকে অসম্মান করে বা কটূক্তি করে, তাহলে তার বিপদ আসে বলে বিশ্বাস করা হয়।

স্থানীয়দের বিশ্বাস, কানাই বলাই দিঘীর পানিতে মনোবাসনা পূরণের এক আধ্যাত্মিক ক্ষমতা রয়েছে। এ কারণে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ তাদের মানত নিয়ে এই দিঘীতে স্নান করতে আসে। শুধু মনোবাসনা পূরণই নয়, অনেকেই দেহ ও মনকে পবিত্র করার উদ্দেশ্যে এখানে গোসল করেন। প্রতিবছর ফাল্গুন মাসের ৯ থেকে ১১ তারিখে দিঘীর পাড়ে ওরশের আয়োজন করা হয়। এই সময় ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষ বিশ্বাস ও ভক্তির সঙ্গে এখানে সমবেত হন। তবে বর্তমানে আগাছা, কচুরিপানা ও মাটি জমে দিঘীটির এক তৃতীয়াংশ ভরাট হয়ে জরাজীর্ণ অবস্থায় পরিণত হয়েছে।

যাওয়ার উপায়

ঢাকা থেকে পটুয়াখালী নদী ও সড়কপথে যাওয়া যায়। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় সড়কপথে ঢাকা থেকে পটুয়াখালী যাতায়াত এখন অনেক সহজ ও সময়সাপেক্ষ। ঢাকা থেকে পটুয়াখালীর দূরত্ব প্রায় ২২৬ কিলোমিটার। বাসে যেতে সময় লাগে প্রায় ৫-৬ ঘন্টা। ঢাকার সায়েদাবাদ, আবদুল্লাহপুর, আরামবাগ বা গাবতলী বাস স্ট্যান্ড থেকে সাকুরা পরিবহন, শ্যামলী, গ্রীনলাইন, ইউরো কোচ, হানিফ, টি আর ট্রাভেলস প্রভৃতি পরিবহনের বাস সরাসরি পদ্মা সেতু হয়ে পটুয়াখালী যায়। ঢাকা থেকে পটুয়াখালী নন-এসি বাসের ভাড়া ৭৫০-৯০০ টাকা এবং এসি বাসের ভাড়া ১১০০-১৬০০ টাকা। এছাড়া সদরঘাট থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যায় পটুয়াখালী যাওয়ার লঞ্চ ছেড়ে যায় এবং সকাল ৭টার দিকে পটুয়াখালী পৌঁছায়। লঞ্চের ভাড়া ডেকে ৪০০-৫০০ টাকা, সিঙ্গেল কেবিন ১৩০০ টাকা, ডাবল কেবিন ২৪০০ টাকা এবং ভিআইপি কেবিন ৭০০০ টাকা।

পটুয়াখালী জেলা শহর থেকে বাসে বাউফল উপজেলায় এসে রিকশা বা স্থানীয় যানবাহনে কাছিপাড়া ইউনিয়নে অবস্থিত কানাই বলাই দিঘী দেখতে যেতে পারেন।

থাকার ব্যবস্থা

পটুয়াখালীতে রাত্রিযাপনের জন্য কালিকাপুর আবাসিক হোটেল, হোটেল হিলটন, হোটেল পানামা ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল সাফারি, পায়রা হোটেল বা হোটেল রিয়াজের মতো আবাসিক হোটেল রয়েছে।

খাবারের ব্যবস্থা

বাউফল উপজেলায় সাধারণ মানের কিছু খাবারের হোটেল রয়েছে। এছাড়া পটুয়াখালী শহরের ছোট চৌরাস্তার কাছে ভালো মানের বেশ কিছু রেস্তোরাঁ পাওয়া যায়।

পটুয়াখালী জেলার অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

পটুয়াখালী জেলার অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত, চর বিজয়, পানি জাদুঘর, সোনারচর ও ফাতরার চর উল্লেখযোগ্য।

কানাই বলাই দিঘী এর দূরত্ব
ঢাকা থেকে দূরত্ব:
135.65 কিমি
পটুয়াখালী থেকে
67.63 কিমি
নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থান
চর আলেকজান্ডার
স্বাধীনতা জাদুঘর
বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের সমাধি
মতিরহাট সৈকত
নিজাম হাসিনা মসজিদ
বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল স্মৃতি জাদুঘর
নোয়াখালী ড্রিম ওয়ার্ল্ড পার্ক
তিতা খাঁ মসজিদ
নোয়াখালী জেলা জামে মসজিদ
নোয়াখালী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার
দালাল বাজার জমিদার বাড়ি
তালুকদার বাড়ী
খোয়াসাগর দীঘি
রায়পুর মৎস্য প্রজনন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
বজরা শাহী মসজিদ
গান্ধী আশ্রম
জ্বীনের মসজিদ
মনপুরা দ্বীপ

মন্তব্য

এখনো কোনো মন্তব্য নেই

প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!

আপনার মন্তব্য লিখুন