
অনেক প্রতীক্ষার পর ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট চালু হয়। যদিও এটি ২০১৭ সালেই চালু হওয়ার কথা ছিল। এখন থেকে বাংলাদেশের নাগরিকরা অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন ডিজিটাল পাসপোর্ট বা ই-পাসপোর্ট পাবেন। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ১১৮টি দেশ এই ধরনের পাসপোর্ট ব্যবহার করছে।
ই-পাসপোর্ট কি
ই-পাসপোর্ট বা ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট হলো একটি আধুনিক বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট, যেখানে একটি ইলেকট্রনিক চিপের মাধ্যমে পাসপোর্টধারীর ব্যক্তিগত ও বায়োমেট্রিক তথ্য সংরক্ষণ করা হয়। এই পাসপোর্টে একজন ব্যক্তির মোট ৪১টি তথ্য সংরক্ষিত থাকে, যার মধ্যে ২৬টি তথ্য সরাসরি খালি চোখে পড়া যায়। বাকি তথ্যগুলো বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থার আওতায় থাকে, যা শুধুমাত্র নির্দিষ্ট যন্ত্রের মাধ্যমেই পড়া সম্ভব। এই উন্নত প্রযুক্তির কারণে বাংলাদেশের ই-পাসপোর্ট বিশ্বব্যাপী আরও বেশি গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে।
বাহ্যিকভাবে ই-পাসপোর্ট দেখতে মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের (MRP) মতো হলেও এতে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন রয়েছে। পূর্বে পাসপোর্টের প্রথম পাতায় দুই পৃষ্ঠাজুড়ে ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়া থাকলেও ই-পাসপোর্টে পলিমার দিয়ে তৈরি একটি চিপ ব্যবহার করা হয়েছে, যেখানে সমস্ত প্রয়োজনীয় তথ্য সুরক্ষিতভাবে সংরক্ষণ করা হয়।
ই-পাসপোর্ট কোথায় পাবেন
প্রথম ধাপে শুধুমাত্র উত্তরা, আগারগাঁও ও যাত্রাবাড়ী থেকে ই-পাসপোর্ট ইস্যু করা হবে। ধীরে ধীরে সারাদেশের সব অঞ্চল এবং বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশিরাও ই-পাসপোর্ট সেবার আওতায় আসবেন। ই-পাসপোর্ট চালু থাকার পাশাপাশি এমআরপি পাসপোর্টও বহাল থাকবে। ঢাকা ও আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসগুলোতে আগের মতোই সাধারণ পাসপোর্ট তৈরি করার সুযোগ থাকবে।
ই-পাসপোর্ট করার নিয়ম
আপনি চাইলে ই-পাসপোর্ট পোর্টাল https://epassport.gov.bd থেকে পাসপোর্ট সংক্রান্ত সকল তথ্য জানতে পারবেন এবং সরাসরি অনলাইনে ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন। মাত্র ৫টি সহজ ধাপ অনুসরণ করে আপনি ই-পাসপোর্ট আবেদন সম্পন্ন করে দ্রুত পাসপোর্ট পেতে সক্ষম হবেন।
ধাপ ১:
প্রথমেই আপনাকে দেখে নিতে হবে যে আপনার বাসস্থানের জেলা বা স্থানীয় পাসপোর্ট অফিসে ই-পাসপোর্ট সেবা চালু হয়েছে কি না। শুরুতে শুধুমাত্র বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে এই সেবা পাওয়া যাবে, তবে ধীরে ধীরে আঞ্চলিক অফিস এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোতেও ই-পাসপোর্টের কার্যক্রম শুরু করা হবে।
যদি আপনার জেলায় ই-পাসপোর্টের সেবা চালু হয়ে থাকে, তাহলে অনলাইনে আবেদন করতে নির্দিষ্ট লিংকে ক্লিক করে আপনার বর্তমান ঠিকানা অনুযায়ী জেলা ও থানা নির্বাচন করুন। এরপর বাংলাদেশের পাসপোর্ট অফিস বা দূতাবাসের তালিকা থেকে আপনার সংশ্লিষ্ট অফিস বেছে নিন।
ধাপ ২:
ই-পাসপোর্টের জন্য অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ করুন এবং দ্রুত প্রক্রিয়াকরণের জন্য অনলাইন পেমেন্ট বিকল্পটি বেছে নিন। আপনি চাইলে অনলাইন বা পিডিএফ ফরম পূরণ করে আবেদন করতে পারেন।
পিডিএফ ফরমের জন্য:
- পিডিএফ এডিটর ব্যবহার করে ফরম পূরণ করুন।
- ফরমটি প্রিন্ট করে নিন।
- প্রিন্টকৃত ফরমের সাথে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট (জাতীয় পরিচয়পত্র, পুরানো পাসপোর্ট [যদি থাকে]) নিয়ে আপনার পছন্দের পাসপোর্ট অফিস বা দূতাবাসে জমা দিন।
মনে রাখুন:
- হাতে লেখা আবেদন ফরম গ্রহণযোগ্য নয়। কম্পিউটারে ফরম পূরণ করতে হবে।
- বর্তমানে শুধুমাত্র অনলাইনে ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা যায়।
এই পদ্ধতি অনুসরণ করে সহজেই ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করুন এবং সময় সাশ্রয় করুন।
ধাপ ৩:
আপনার পাসপোর্টের ধরন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ফি প্রদান করুন। পাসপোর্ট আবেদনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে, নির্ধারিত ব্যাংক অথবা অনলাইনে ক্রেডিট কার্ড, বিকাশ বা অন্যান্য নির্বাচিত পদ্ধতিতে পাসপোর্ট ফি পরিশোধ করতে পারবেন। ব্যাংকে ফি প্রদানের ক্ষেত্রে পাসপোর্ট আবেদনপত্র সঙ্গে নিতে হবে।
ধাপ ৪:
আবেদন ফরম পূরণ ও পাসপোর্ট ফি জমা দেওয়ার পর, তালিকাভুক্তি, ছবি তোলা এবং ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেওয়ার জন্য নির্ধারিত পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করুন। এই ধাপে নিম্নলিখিত কাগজপত্র সঙ্গে নিয়ে যাবেন:
- আবেদন ফরমের প্রিন্টকপি
- পাসপোর্ট ফি প্রদানের রশিদ
- জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন সনদ
- পুরাতন পাসপোর্ট (যদি থাকে)
- অন্যান্য প্রাসঙ্গিক ডকুমেন্ট
আপনার বর্তমান ঠিকানা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট পাসপোর্ট অফিসে আবেদন করুন। তালিকাভুক্তির সময় নিম্নোক্ত বিষয়াদি যাচাই করা হবে:
- জমা দেওয়া কাগজপত্র ও ব্যক্তিগত তথ্য
- আবেদনকারীর ফটোগ্রাফ
- ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও আইরিশ স্ক্যান
- পাসপোর্ট ফি পরিশোধের রশিদ
তালিকাভুক্তি সম্পন্ন হলে, আপনাকে একটি ডেলিভারি স্লিপ/রশিদ দেওয়া হবে। এটি সুরক্ষিতভাবে সংরক্ষণ করুন, কারণ পাসপোর্ট সংগ্রহ করার সময় এটি জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক।
ধাপ ৫:
আবেদনকারীকে সরাসরি উপস্থিত হয়ে ডেলিভারি রশিদ এবং পুরানো পাসপোর্ট (যদি থাকে) জমা দিয়ে পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে হবে। পাসপোর্ট হস্তান্তরের সময় আবেদনকারীর ফিঙ্গারপ্রিন্ট এনরোলমেন্টের সময় নেওয়া ফিঙ্গারপ্রিন্টের সাথে মিলিয়ে দেখা হয়। তবে বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে, যেমন—১১ বছরের কম বয়সী শিশু বা শারীরিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে, একজন নির্ভরযোগ্য প্রতিনিধির কাছে পাসপোর্ট দেওয়া হয়।
মন্তব্য