মিঠামইন অষ্টগ্রাম হাওর রোড কিভাবে ভ্রমণ করবেন

মিঠামইন অষ্টগ্রাম হাওর রোড কিভাবে ভ্রমণ করবেন

কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ও ইটনা উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা হাওরাঞ্চল। বর্ষায় এসব হাওর পানিতে পরিপূর্ণ থাকে, আর শুষ্ক মৌসুমে ধীরে ধীরে পানি কমতে শুরু করে। তখন হাওরের মধ্যে তৈরি সাবমার্সিবল রাস্তাগুলো পানির ওপর ভেসে ওঠে।

একসময় হাওরবাসীর মুখে একটি কথা শোনা যেত— ‘বর্ষায় নাও, শুকনায় পাও’। অর্থাৎ বর্ষায় নৌকাই ছিল ভরসা, আর শুকনো মৌসুমে পায়ে হেঁটেই চলাচল করতে হতো। কিন্তু এখন সময় বদলেছে। উপজেলাগুলোর মধ্যে এখন অলওয়েদার রোড ও সাবমার্সিবল রাস্তা তৈরি হওয়ায় শুষ্ক মৌসুমেও হাঁটতে হয় না।

বর্তমানে বর্ষায় হাওর ভ্রমণ বেশ জনপ্রিয়। নীল জলরাশির অপার সৌন্দর্য দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসে কিশোরগঞ্জের হাওরে। নিকলীর বেড়ীবাঁধ, করিমগঞ্জের বালিখোলা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামের হাওর দর্শনার্থীদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। বিশেষ করে অষ্টগ্রাম-মিঠামইন-ইটনাকে যুক্ত করেছে ৪৭ কিলোমিটার উঁচু অলওয়েদার রোড, যা দিয়ে যেকোনো সময় হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।

বর্ষায় চারদিক পানিতে থৈ থৈ করলেও শুকনায় সেই জায়গা জুড়ে দেখা যায় সবুজ ধানের ক্ষেত, আর ধান পাকলে তা রূপ নেয় সোনালি আভায়। হাওরের এই রূপবদল দেখতে শীত বা শুকনায় কিশোরগঞ্জের হাওর রোড ট্রিপ প্ল্যান করতে পারেন। অক্টোবর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত প্রাইভেট কারেই ঘুরে আসা যায় ইটনা, অষ্টগ্রাম বা মিঠামইনের মতো এলাকাগুলো। আর অলওয়েদার রোড দিয়ে তো সারা বছরই চলাচল করা যায়!

কিভাবে হাওর রোড ঘুরবেন?

বর্ষায় নদী-হাওর পানিতে পরিপূর্ণ হলে হাওরের সাবমার্সিবল রাস্তাগুলো ডুবে যায়। কিশোরগঞ্জ থেকে মিঠামইন বা অষ্টগ্রাম যাওয়ার ফেরি সার্ভিস বন্ধ থাকে। তবে এই সময় হাওর রোডের দুপাশে পানির অপূর্ব দৃশ্য দেখা যায়, যা দেখতে অনেক পর্যটক ভিড় জমান। বর্ষায় হাওর রোডে যেতে চাইলে কিশোরগঞ্জের বালিখোলা/চামড়াবন্ধর ঘাট থেকে লোকাল বা রিজার্ভ নৌকায় মিঠামইন যেতে হবে। মিঠামইন থেকে হাওর রোড হয়ে অষ্টগ্রাম বা ইটনা রোডে ঘুরে আসা যায়। ফেরার সময় একই পথে ফিরতে হবে।

বর্ষায় আরেকটি জনপ্রিয় রুট:

নিকলী হাওর হয়ে মিঠামইন-অষ্টগ্রাম হাওর রোড। এজন্যে কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলায় গিয়ে বেরীবাধ ঘাট থেকে লোকাল বা রিজার্ভ নৌকায় মিঠামইন যেতে হবে। হাওর রোড ঘুরে আগের পথেই ফিরে আসা যায়।

বাজিতপুর হয়ে হাওর রোড:

কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলা দিয়ে অষ্টগ্রাম-মিঠামইন হাওর রোডে যাওয়া যায়। এজন্যে দীঘিরপাড় ঘাট থেকে লোকাল বা রিজার্ভ নৌকায় অষ্টগ্রামের জিরো পয়েন্টে যেতে হবে। সেখান থেকে হাওর রোড ঘুরে একই পথে ফিরতে হবে।

শুষ্ক মৌসুমে হাওর ভ্রমণ

শীতকালে পানির স্তর কমে গেলে কিশোরগঞ্জ সদর থেকে অষ্টগ্রাম যাওয়া সহজ হয়। কিশোরগঞ্জ থেকে করিমগঞ্জ হয়ে বালিখোলা ঘাটে গিয়ে ফেরি পার হয়ে মিঠামইন পৌঁছাতে হবে। মিঠামইন বাজারে যাওয়ার আগে আরেকটি নদী ফেরি পার হতে হয়। মিঠামইন থেকে হাওর রোড ধরে অষ্টগ্রাম বা ইটনা যাওয়া যায়। ফেরার পথ আগের মতোই।

কিশোরগঞ্জ সদর থেকে করিমগঞ্জ হয়ে অষ্টগ্রামের দূরত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার। যাওয়া-আসা ও ঘুরতে ৬-৭ ঘণ্টা সময় লাগে। অষ্টগ্রাম না গিয়ে মিঠামইন থেকে উঁচু রাস্তা দিয়ে কিছুদূর ঘুরে আসলেও ভালো লাগবে। নিজস্ব বাহন না থাকলে একরামপুর বাস স্ট্যান্ড থেকে সিএনজি রিজার্ভ করে নেওয়া যায়। একরামপুর থেকে লোকাল সিএনজি বা ইজিবাইকে মিঠামইন যাওয়া যায়।

বাজিতপুর রুট:

শুষ্ক মৌসুমে বাজিতপুর উপজেলা দিয়ে অষ্টগ্রাম যাওয়া যায়। দীঘিরপাড় লঞ্চ ঘাট থেকে ফেরি বা নৌকায় নদী পার হয়ে অষ্টগ্রাম পৌঁছানো যায়। অষ্টগ্রাম থেকে অল-ওয়েদার রোড ধরে মিঠামইন ঘুরে একই পথে ফিরে আসা যায়। অথবা মিঠামইন থেকে বালিখোলা হয়ে কিশোরগঞ্জ ফেরা সম্ভব।

সতর্কতা

বর্ষাকালে পানি বাড়তে শুরু করলে নিচু রাস্তাগুলো ডুবে যায় এবং ফেরি সার্ভিস বন্ধ থাকে। তাই গাড়ি দিয়ে ঘুরতে শুষ্ক মৌসুমে যাওয়াই ভালো। বর্ষায় কিশোরগঞ্জ থেকে অষ্টগ্রাম, ইটনা বা মিঠামইন যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম ইঞ্জিনচালিত নৌকা।

ঢাকা থেকে যাওয়ার উপায়

ঢাকা থেকে অষ্টগ্রাম একদিনেই ঘুরে আসা সম্ভব, তবে সময়মতো রওনা দিতে হবে। সকাল সকাল এগারসিন্ধুর প্রভাতী ট্রেনে বাজিতপুর এসে, সেখান থেকে অষ্টগ্রাম যাওয়া যায়। ফেরার সময় বিকেলে কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে ঢাকা ফিরতে পারবেন। তবে ট্রেনে যাতায়াত করলে সময় একটু কম পাবেন।

বাসে যেতে চাইলে কিশোরগঞ্জগামী বাসে কুলিয়ারচর নেমে, সেখান থেকে সিএনজি করে বাজিতপুরের দিঘিরপাড় লঞ্চঘাট যেতে হবে। এরপর সরাসরি অষ্টগ্রামের জন্য রিজার্ভ নেওয়া যাবে। ফেরার পথে কুলিয়ারচর থেকে ঢাকাগামী বাস পাবেন।

আরেকটি বিকল্প হলো ঢাকা থেকে ট্রেন বা বাসে কিশোরগঞ্জ সদরে এসে বালিখোলা, চামড়া বা নিকলী পথে ঘুরে আসা। তবে এতে সময় বেশি লাগবে।

দর্শনীয় স্থান

  • অষ্টগ্রামের ঐতিহাসিক ৪০০ বছরের পুরনো পাঁচ গম্বুজবিশিষ্ট কুতুবশাহ মসজিদ।
  • মিঠামইনের কামালপুরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের গ্রামের বাড়ি।

খাওয়া-দাওয়া

অষ্টগ্রাম বা মিঠামইন বাজারে সাধারণ মানের হোটেল পাওয়া যাবে। হাওরের তাজা মাছের বিভিন্ন পদ এখানে স্বাদ নেওয়া যায়। এছাড়া মুরগি, গরুর মাংস ও দেশীয় খাবার পাওয়া যায়।

থাকার ব্যবস্থা

রাত্রিযাপন করতে চাইলে অষ্টগ্রাম বা মিঠামইনে সরকারি ডাকবাংলোতে কম খরচে থাকা যায়। বাজেট বেশি হলে প্রেসিডেন্ট রিসোর্টের মতো হাওর-বেষ্টিত রিসোর্টে থাকতে পারেন। এছাড়া স্থানীয় কিছু বাজেট হোটেলও রয়েছে।

 

মন্তব্য