
অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্প (Annapurna Base Camp - ABC) ট্রেকিং নেপালের সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্রেকিং রুটগুলোর মধ্যে একটি। হিমালয়ের অত্যন্ত সুন্দর অন্নপূর্ণা পর্বতশ্রেণীর মাঝে অবস্থিত এই বেস ক্যাম্পে পৌঁছানোর অভিজ্ঞতা প্রকৃতিপ্রেমী এবং অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য অবিস্মরণীয়। এই ব্লগ পোস্টে, আমরা অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্প ট্রেকিংয়ের সম্পূর্ণ গাইডলাইন, আসা-যাওয়া, থাকা-খাওয়া এবং অন্যান্য খরচের বিস্তারিত আলোচনা করব।
অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্প ট্রেকিং: সংক্ষিপ্ত বিবরণ
- ট্রেকের দূরত্ব: প্রায় ১১০-১৩০ কিলোমিটার (রুটের উপর নির্ভর করে)
- সময়কাল: ৭-১২ দিন
- সর্বোচ্চ উচ্চতা: ৪,১৩০ মিটার (অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্প)
- কঠোরতার মাত্রা: মধ্যম থেকে কঠিন
- সেরা সময়: অক্টোবর-নভেম্বর (শরৎ) এবং মার্চ-এপ্রিল (বসন্ত)
ট্রেকিং রুট এবং দিনভিত্তিক ইটিনারারি
অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্প ট্রেকিংয়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় রুট হলো নায়াপুল থেকে শুরু করে ঘোরেপাড়া, চমরং, হিমালয়, দোবান, মাচাপুচারি বেস ক্যাম্প (MBC) এবং শেষে অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্প (ABC)।
৭-দিনের স্ট্যান্ডার্ড ইটিনারারি:
- দিন ১: কাঠমান্ডু থেকে পোখারা যাত্রা (বিমান বা বাসে), তারপর নায়াপুলে গিয়ে সিয়াউলি পর্যন্ত জিপ বা হেঁটে যাওয়া।
- দিন ২: সিয়াউলি থেকে ঝিনু দান্দা/চমরং (২,১৭০ মিটার)
- দিন ৩: চমরং থেকে বাম্বু/হিমালয় (২,৯২০ মিটার)
- দিন ৪: হিমালয় থেকে দোবান (২,৬০০ মিটার)
- দিন ৫: দোবান থেকে MBC (৩,৭০০ মিটার) এবং ABC (৪,১৩০ মিটার)
- দিন ৬: ABC থেকে বাম্বু/সিনুয়া
- দিন ৭: সিনুয়া থেকে নায়াপুল, তারপর পোখারা ফেরত
আসা-যাওয়ার খরচ
১. বাংলাদেশ থেকে কাঠমান্ডু যাওয়ার উপায়:
- বিমানে: ঢাকা থেকে কাঠমান্ডু সরাসরি ফ্লাইট (ইউএস$ ২০০-৩৫০, বাংলাদেশ বিমান/নেপাল এয়ারলাইন্স/বুদ্ধ এয়ার)।
- বাসে: ঢাকা থেকে কাকরভিটা/মেচিনগর বর্ডার হয়ে নেপাল প্রবেশ, তারপর বাসে কাঠমান্ডু (প্রায় ৫,০০০-৮,০০০ টাকা)।
২. কাঠমান্ডু থেকে পোখারা:
- বিমানে: ২৫ মিনিটের ফ্লাইট (ইউএস$ ৮০-১২০)।
- বাসে: ৬-৮ ঘণ্টা (প্রাইভেট কারে ১০,০০০-১৫,০০০ নেপালি রুপি, পর্যটক বাসে ৫০০-৮০০ নেপালি রুপি)।
৩. পোখারা থেকে নায়াপুল:
- প্রাইভেট জিপ/ট্যাক্সি: ২-৩ ঘণ্টা (প্রায় ৫,০০০-৮,০০০ নেপালি রুপি)।
- লোকাল বাস: ২০০-৩০০ নেপালি রুপি।
থাকা-খাওয়ার খরচ
১. ট্রেকিং পারমিট এবং টিমস কার্ড:
- অন্নপূর্ণা সংরক্ষিত এলাকা পারমিট (ACAP): ৩,০০০ নেপালি রুপি (প্রায় ২,৫০০ টাকা)।
- ট্রেকার্স ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (TIMS): ২,০০০ নেপালি রুপি (প্রায় ১,৭০০ টাকা)।
২. থাকার খরচ (লজ/টিহাউস):
- সাধারণত ৫০০-১,৫০০ নেপালি রুপি (৫০০-১,২০০ টাকা) প্রতি রাত।
- ABC-এর কাছে থাকার খরচ কিছুটা বেশি (১,৫০০-২,৫০০ নেপালি রুপি)।
৩. খাবারের খরচ:
- সকালের নাস্তা: ৩০০-৬০০ নেপালি রুপি।
- লাঞ্চ/ডিনার: ৫০০-১,২০০ নেপালি রুপি (ডাল ভাত, নুডলস, থুকপা ইত্যাদি)।
- হট ড্রিংকস: ১০০-৩০০ নেপালি রুপি (চা, কফি)।
৪. গাইড ও পোর্টার খরচ:
- গাইড: দিনপ্রতি ২,০০০-৩,০০০ নেপালি রুপি (প্রায় ১,৭০০-২,৫০০ টাকা)।
- পোর্টার: দিনপ্রতি ১,৫০০-২,৫০০ নেপালি রুপি (প্রায় ১,৩০০-২,১০০ টাকা)।
অন্যান্য খরচ
- ইন্টারনেট/ওয়াইফাই: কিছু টিহাউসে ফ্রি, নাহলে ২০০-৫০০ নেপালি রুপি।
- গরম পানি/চার্জিং: ১০০-৩০০ নেপালি রুপি।
- জরুরি হেলিকপ্টার রেসকিউ ইন্সুরেন্স: ইউএস$ ১০০-২০০ (বাংলাদেশে কিনে নেওয়া ভালো)।
মোট আনুমানিক খরচ (১০ দিনের ট্রেক)
খরচের ধরন | আনুমানিক খরচ (নেপালি রুপি) | বাংলাদেশি টাকায় (১ নেপালি রুপি ≈ ০.৮৫ টাকা) |
বাংলাদেশ থেকে কাঠমান্ডু বিমান | ৩০,০০০-৫০,০০০ টাকা | ৩০,০০০-৫০,০০০ |
কাঠমান্ডু-পোখারা বাস | ১,০০০-২,০০০ | ৮৫০-১,৭০০ |
পারমিট ও টিমস | ৫,০০০ | ৪,২৫০ |
থাকা-খাওয়া (১০ দিন) | ১৫,০০০-২৫,০০০ | ১২,৭৫০-২১,২৫০ |
গাইড/পোর্টার | ২০,০০০-৩০,০০০ | ১৭,০০০-২৫,৫০০ |
অন্যান্য খরচ | ৫,০০০-১০,০০০ | ৪,২৫০-৮,৫০০ |
মোট ≈ ১,০০,০০০-১,৫০,০০০ টাকা
ট্রেকিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র
- ভালো হাইকিং বুট
- উষ্ণ কাপড়, স্লিপিং ব্যাগ (-১০°C রেটেড)
- ট্রেকিং পোল
- সানগ্লাস, সানস্ক্রিন
- ফার্স্ট এইড কিট
- পাওয়ার ব্যাংক
সতর্কতা ও পরামর্শ
- উচ্চতা রোগ এড়াতে ধীরে চলুন, পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
- শীতকালে তুষারপাতের কারণে রুট বন্ধ থাকতে পারে।
- স্থানীয় সংস্কৃতি সম্মান করুন, প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলবেন না।
উপসংহার
অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্প ট্রেকিং একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা, যা আপনাকে প্রকৃতির অকৃত্রিম সৌন্দর্যের মধ্যে নিয়ে যাবে। সঠিক পরিকল্পনা করে গেলে খরচ নিয়ন্ত্রণে রেখে এই ট্রেক সম্পন্ন করা সম্ভব। আশা করি, এই গাইড আপনাকে ট্রেকিংয়ের জন্য প্রস্তুত করতে সাহায্য করবে!
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!