
বাংলাদেশে এখন আর আকাশপথে ভ্রমণ শুধুমাত্র অভিজাত শ্রেণির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান ভ্রমণ দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, বিশেষ করে যখন কম দামে টিকেট পাওয়া যায়। আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া, প্রতিযোগিতামূলক বাজার ও অনলাইন বুকিংয়ের সুবাদে আজকাল ঘর থেকেই দেশের যেকোনো শহরে সাশ্রয়ী দামে বিমান ভ্রমণ সম্ভব হচ্ছে।
এই আর্টিকেলে আমরা জানবো কিভাবে আপনি কম দামে বিমান টিকেট পেতে পারেন, কোন রুটে ভাড়া কম, কবে টিকেট কাটলে সাশ্রয়ী হয়, কোন কোন এয়ারলাইন্স সেবা দিচ্ছে এবং আরও অনেক কিছু।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিমান রুটসমূহ
বাংলাদেশের প্রধান অভ্যন্তরীণ বিমান রুটগুলো হলো:
- ঢাকা ↔ চট্টগ্রাম
- ঢাকা ↔ কক্সবাজার
- ঢাকা ↔ সিলেট
- ঢাকা ↔ বরিশাল
- ঢাকা ↔ যশোর
- ঢাকা ↔ সৈয়দপুর (নীলফামারী)
- ঢাকা ↔ রাজশাহী
- চট্টগ্রাম ↔ কক্সবাজার
- চট্টগ্রাম ↔ সৈয়দপুর
প্রায় সব রুটেই একাধিক ফ্লাইট প্রতিদিন চলাচল করে থাকে। প্রতিটি রুটের টিকেট ভাড়া নির্ভর করে এয়ারলাইন্স, সময়, চাহিদা ও সিজনের উপর।
কিভাবে কম দামে বিমান টিকেট পাওয়া যায়?
১. আগেভাগে বুকিং করুন
আগে বুক করলে আপনি সহজেই কম দামে টিকেট পেতে পারেন। ১৫-৩০ দিন আগে বুক করলে সাধারণত ফ্লাইট কোম্পানিগুলো ডিসকাউন্ট অফার দেয়।
২. অফ-সিজনে ভ্রমণ করুন
কক্সবাজার বা সিলেটের মতো জায়গায় পর্যটনের মৌসুম (ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি বা ঈদ/ছুটি) বাদ দিয়ে অন্য সময় গেলে দাম অনেক কম থাকে।
৩. অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি (OTA) ব্যবহার করুন
ShareTrip, Flight Expert, GoZayaan, Triplover, Travel Booking BD ইত্যাদি ওয়েবসাইট বা অ্যাপ ব্যবহার করে আপনি তুলনামূলকভাবে সস্তা টিকেট খুঁজে পেতে পারেন।
৪. এয়ারলাইন্সের অফিশিয়াল অ্যাপ ব্যবহার করুন
বিমান বাংলাদেশ, ইউএস-বাংলা, নভোএয়ার বা এয়ার অ্যাস্ট্রার নিজস্ব অ্যাপে অনেক সময় এক্সক্লুসিভ ডিসকাউন্ট পাওয়া যায়।
৫. প্রোমো কোড ও কুপন ব্যবহার
ট্রাভেল ওয়েবসাইটগুলো মাঝে মাঝে প্রোমো কোড বা ব্যাংক পার্টনারশিপের মাধ্যমে ছাড় দিয়ে থাকে।
৬. রিটার্ন টিকেট একসাথে কিনুন
দুই দিকের টিকেট একসাথে নিলে অনেক সময় অতিরিক্ত ছাড় মেলে।
জনপ্রিয় এয়ারলাইন্স ও তাদের সেবা
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স
সরকারি প্রতিষ্ঠান, প্রতিটি অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট চালায়। সেবার মান উন্নত হলেও, মাঝে মাঝে সময়সূচি নিয়ে অভিযোগ থাকে।
- গড় ভাড়া (ঢাকা-কক্সবাজার): ৪৫০০–৬৫০০ টাকা
- ওয়েবসাইট: www.biman-airlines.com
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স
সবচেয়ে বেশি অভ্যন্তরীণ রুট কভার করে। সময়মতো ফ্লাইট ও ভালো কাস্টমার সার্ভিসের জন্য জনপ্রিয়।
- গড় ভাড়া (ঢাকা-সিলেট): ৪০০০–৫৫০০ টাকা
- ওয়েবসাইট: www.usbair.com
নভোএয়ার
বিশ্বস্ত, সময়নিষ্ঠ ও পরিচ্ছন্ন পরিষেবার জন্য পরিচিত। কোঅপারেটিভ কাস্টমার সাপোর্ট ও ডিসিপ্লিন্ড শিডিউল।
- গড় ভাড়া (ঢাকা-সৈয়দপুর): ৩৫০০–৫০০০ টাকা
- ওয়েবসাইট: www.flynovoair.com
এয়ার অ্যাস্ট্রা (নতুন প্রবেশকারী)
নতুন হলেও আধুনিক বিমান ও স্ট্যান্ডার্ড সার্ভিস দিচ্ছে।
- গড় ভাড়া (ঢাকা-রাজশাহী): ৪০০০–৫৫০০ টাকা
- ওয়েবসাইট: www.airastra.com
কবে টিকেট কাটলে দাম কম পাওয়া যায়?
সময় | সুবিধা | সম্ভাব্য ছাড় |
সপ্তাহের মাঝামাঝি (মঙ্গলবার, বুধবার) | কম যাত্রী | ১০-২৫% পর্যন্ত |
ভোরের ফ্লাইট | অফ-পিক টাইম | ৫০০-১০০০ টাকা কম |
অফ-সিজন (মার্চ-জুন, সেপ্টেম্বর) | কম চাহিদা | সর্বোচ্চ ছাড় |
রাতের ফ্লাইট | কম জনপ্রিয় | কম দামে পাওয়া যায় |
ব্যাংক ও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস অফার
বাংলাদেশে অনেক ব্যাংক বা মোবাইল ওয়ালেট (নগদ, বিকাশ, রকেট) এয়ারলাইন্সের সঙ্গে যৌথভাবে বিশেষ অফার দেয়।
পেমেন্ট মাধ্যম | অফার | শর্ত |
বিকাশ | ১০% ক্যাশব্যাক | নির্দিষ্ট সময় |
নগদ | ফ্ল্যাট ৫০০ টাকা ছাড় | নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে |
সিটি ব্যাংক অ্যামেক্স | ১৫% ছাড় | ইউএস-বাংলায় |
ব্র্যাক ব্যাংক | ইনস্টলমেন্টে টিকেট | নভোএয়ার |
জনপ্রিয় বুকিং ওয়েবসাইট ও অ্যাপ
নাম | বৈশিষ্ট্য |
ShareTrip | ইউজার ফ্রেন্ডলি, অনেক ডিসকাউন্ট |
GoZayaan | ইনস্টলমেন্টে পেমেন্ট সিস্টেম |
Flight Expert | কর্পোরেট টিকিটেও ছাড় |
Triplover | রাউন্ড ট্রিপ ও গ্রুপ বুকিং সুবিধা |
Travel Booking BD | সহজ রিফান্ড সিস্টেম |
জনপ্রিয় রুটের টিকেট ভাড়া (২০২৫ সালের গড় হিসাব)
রুট | বিমান ভাড়া (টাকা) | সময় |
ঢাকা ↔ কক্সবাজার | ৪৫০০ – ৭৫০০ | ৫০ মিনিট |
ঢাকা ↔ চট্টগ্রাম | ৪০০০ – ৬৫০০ | ৪৫ মিনিট |
ঢাকা ↔ সৈয়দপুর | ৩৫০০ – ৫৫০০ | ৫০ মিনিট |
ঢাকা ↔ রাজশাহী | ৩৫০০ – ৫০০০ | ৪৫ মিনিট |
ঢাকা ↔ সিলেট | ৪০০০ – ৬০০০ | ৪৫ মিনিট |
কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস
- ক্যারি অন ব্যাগ ছাড়া ভ্রমণ করলে ফ্লাইট ভাড়া আরও কমে যেতে পারে।
- ফ্ল্যাশ সেল বা বিশেষ ক্যাম্পেইন নজরে রাখুন।
- অফিশিয়াল সোশ্যাল মিডিয়া পেজ ফলো করুন অফার পেতে।
- ফ্রি ক্যানসেলেশন বা ফ্লেক্সিবল টিকেট অপশন বেছে নিন।
- কনফার্মেশন ইমেইল বা এসএমএস যাচাই করে রাখুন।
কাদের জন্য উপযুক্ত অভ্যন্তরীণ বিমান ভ্রমণ?
- ব্যবসায়িক ভ্রমণকারী: সময় বাঁচিয়ে দিনে গিয়েই কাজ করে ফিরে আসা।
- পর্যটক: দ্রুত এবং ঝামেলাহীনভাবে ভ্রমণ।
- ছুটিতে থাকা প্রবাসী: দ্রুত গ্রামের বাড়ি পৌঁছানো।
- অসুস্থ ব্যক্তি বা সিনিয়র সিটিজেন: আরামদায়ক এবং শরীরের负 চাপ কম।
উপসংহার
বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট এখন আর বিলাসিতা নয়, বরং একটি সময় সাশ্রয়ী ও কার্যকর যাতায়াত মাধ্যম। স্মার্টভাবে টিকিট বুক করলে এবং সময় বাছাই করলে যেকোনো মধ্যবিত্ত নাগরিকই এখন কম দামে আকাশপথে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে পারেন।
এখনই বুক করুন আপনার পরবর্তী ফ্লাইট — আর দেশটা ঘুরে দেখুন সাশ্রয়ী ভ্রমণে।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!