গরমে আরামদায়ক ভ্রমণের গুরুত্বপূর্ণ টিপস

গরমে আরামদায়ক ভ্রমণের গুরুত্বপূর্ণ টিপস

গরমের সময় ভ্রমণে আরাম ও সুবিধা পেতে কিছু প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিয়ে আজকে আলোচনা করব। একজন ভ্রমণকারীর জন্য এই টিপসগুলো জানা খুবই জরুরি।

ভ্রমণের সময় বিভিন্ন ছোটখাটো বিষয়ের দিকে নজর দিতে হয়। যেমন—যেখানে ভ্রমণে যাচ্ছেন, সেখানকার আবহাওয়া, তাপমাত্রা, পরিবেশ-পরিস্থিতি, স্থানীয় ভাষা, খাবারদাবার, সংস্কৃতি এবং যাতায়াত ব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন।

এই সকল বিষয়ের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—"গরমের সময় কীভাবে আরামদায়কভাবে ভ্রমণ করবেন?" চলুন, জেনে নেওয়া যাক গরমে আরামদায়ক ভ্রমণের কিছু কার্যকরী টিপস।

তাপমাত্রা সম্পর্কে জেনে নিন

আপনি যে স্থানে ভ্রমণ করতে যাচ্ছেন, সেখানকার তাপমাত্রা সম্পর্কে আগে থেকে জেনে নিন। এটি ভ্রমণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই এই বিষয়টি গুরুত্ব দেন না, কিন্তু আমি বলব—যেকোনো স্থানে ভ্রমণের আগে প্রথমেই সেখানকার তাপমাত্রা সম্পর্কে জানা উচিত।

ধরুন, আপনি বাংলাদেশ থেকে ভারতের কাশ্মীরে ভ্রমণে গেলেন। বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালে গড় তাপমাত্রা ৩০°C থেকে ৪০°C থাকে, অন্যদিকে কাশ্মীরে তখন মাত্র ১০°C! যদি আপনি কাশ্মীরের তাপমাত্রা না জেনে পাতলা কাপড় নিয়ে সেখানে যান, তাহলে আপনার জন্য স্বস্তিতে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।

দ্রষ্টব্য: কাশ্মীরের তাপমাত্রা অনেক সময় মাইনাস (-) এও নেমে যায়!

অন্যদিকে, যেসব দেশ বা অঞ্চলে তাপমাত্রা বেশি, সেখানকার আবহাওয়া সম্পর্কে না জেনে ভ্রমণ করাও ঝুঁকিপূর্ণ। তাই ভ্রমণের আগে গন্তব্যের তাপমাত্রা সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন।

তাপমাত্রা কীভাবে জানবেন?

তাপমাত্রা জানা খুব সহজ। আপনি গুগল, ইয়াহু বা বিং-এ সার্চ করে আপনার গন্তব্যের নামের পাশে "তাপমাত্রা" লিখে খুঁজলেই বর্তমান তাপমাত্রা পেয়ে যাবেন।

উদাহরণ: আপনি লিখতে পারেন—

  • "ঢাকার তাপমাত্রা"
  • "Kashmir Temperature"

এছাড়াও, আপনি সরাসরি accuweather.com বা অন্যান্য আবহাওয়া সংক্রান্ত ওয়েবসাইট থেকেও তাপমাত্রা দেখতে পারেন।

হালকা ও আরামদায়ক পোশাক পরুন

ভ্রমণের সময় হালকা ও ঢিলেঢালা পোশাক পরাই ভালো। তবে স্থান ও সংস্কৃতি অনুযায়ী পোশাকের ধরন আলাদা হতে পারে। যেমন—আমেরিকায় যা পরা হয়, বাংলাদেশে তা ভিন্ন।

একজন ভ্রমণকারীর মনে রাখা উচিত—শীতকালে যে পোশাক পরলে চলবে, গ্রীষ্মে সেটি পরা যাবে না। গরমে যতটা সম্ভব হালকা, পাতলা ও আরামদায়ক পোশাক পরুন, যাতে শরীরে বাতাস চলাচল করতে পারে। এতে ভ্রমণ অনেক বেশি আরামদায়ক হবে।

সাথে খাবার পানি নিন

গ্রীষ্মকালে আমাদের তৃষ্ণা বেশি পায়। কারণ গরমে ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে প্রচুর পানি বেরিয়ে যায়। বিশেষ করে ভ্রমণের সময় এই পানিশূন্যতার পরিমাণ আরও বেড়ে যায়। তাই ভ্রমণের সময় সঙ্গে পর্যাপ্ত পানীয় জল নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি চাইলে দোকান থেকে ছোট পানির বোতল কিনে নিতে পারেন, যা ট্রাভেল ব্যাগে সহজেই বহন করা যায়।

খাবার স্যালাইন নিন

গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড রোদের সময় শুধু পানি পান করলে ক্লান্তি এবং পানিশূন্যতা (ডি-হাইড্রেশন) দূর করা সম্ভব নয়। তাই বাইরে বেরোনোর সময় খাবার স্যালাইন সঙ্গে নেওয়া উচিত। কারণ, ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে প্রচুর লবণ ও খনিজ পদার্থ বেরিয়ে যায়, যা পানিশূন্যতা সৃষ্টি করতে পারে।

এই সমস্যা এড়াতে খাবার স্যালাইন সঙ্গে রাখা ভালো। এটি আপনি যেকোনো ফার্মেসি বা মুদি দোকান থেকে কিনতে পারবেন। প্রতি প্যাকেটের দাম মাত্র ৫ টাকা।

এটি শরীরে লবণ ও পানির ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে এবং গরমে সুস্থ থাকতে সহায়তা করবে।

ভ্রমণে কিছুক্ষন পর পর পানি পান করুণ

দূরে কোথাও ভ্রমণে গেলে বা কোনো পার্কে বেড়াতে গেলে একটানা অনেকক্ষণ না ঘুরে কিছুক্ষণ পর পর বিশ্রাম নিয়ে ভ্রমণ করুন। হাঁটার সময় বা বিশ্রামের সময় অল্প অল্প করে পানি পান করুন।

পানির সাথে খাবার স্যালাইন মিশিয়ে নিলে আরও ভালো হয়। তবে খেয়াল রাখবেন, স্যালাইন মিশ্রিত পানি যেন রোদের তাপে অতিরিক্ত গরম না হয়ে যায়। আবার, ১২ ঘন্টার বেশি সময় ধরে এই পানি পান করা যাবে না।

ভ্রমণের জন্য কিছু প্রয়োজনীয় পরামর্শ

অতিরিক্ত মোজা নিন

ভ্রমণের সময় সবসময় অতিরিক্ত মোজা সঙ্গে রাখুন। এটি যেকোনো স্থানে ও যেকোনো ঋতুতেই (গরম বা শীত) কাজে লাগবে। বিশেষ করে গরমকালে ভ্রমণে অতিরিক্ত মোজা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

সারাদিন ভ্রমণ শেষে হোটেলে ফিরে নোংরা মোজা ধোয়ার কোনো ইচ্ছাই থাকবে না। আর সারাদিন হাঁটাহাঁটির ফলে মোজা নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে যায়।

আবার অনেকের পা থেকে অতিরিক্ত ঘাম বের হয়, ফলে মোজা ভিজে যায়। তাদের জন্য তো এই সমস্যা আরও ভয়াবহ।

পরের দিন একই মোজা পড়ে ভ্রমণ করলে পায়ে ইনফেকশন হতে পারে, আর দুর্গন্ধ তো থাকবেই! তাই ভ্রমণে বেরোনোর আগে কয়েক জোড়া অতিরিক্ত মোজা সঙ্গে নিন।

অতিরিক্ত আন্ডারওয়্যার নিন

ভ্রমণের সময় অতিরিক্ত আন্ডারওয়্যার রাখুন। কারণ, ভ্রমণে আমরা প্রায় সবসময় বাইরেই থাকি।

সারাদিন ঘোরাফেরার ফলে আন্ডারওয়্যার ঘামে ভিজে দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে যায়। পরের দিন একই আন্ডারওয়্যার পরলে তা থেকে চুলকানি ও অন্যান্য ত্বকের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই ভ্রমণে অতিরিক্ত আন্ডারওয়্যার নেওয়া উচিত।

সানগ্লাস ব্যবহার করুন

প্রচণ্ড রোদে যখন চোখে ঠিকমতো দেখতে সমস্যা হয়, তখন সানগ্লাসই একমাত্র ভরসা। এছাড়া সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি (UV রে) থেকে চোখ রক্ষার জন্য সানগ্লাস পরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই ভ্রমণে সানগ্লাস ব্যবহার করুন।

ছাতা ও রেইনকোট সঙ্গে নিন

গ্রীষ্মকালে হঠাৎ বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অনেক সময় পূর্বাভাস ছাড়াই বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। তাই ভ্রমণে ছাতা ও রেইনকোট সঙ্গে রাখুন।

এছাড়া তীব্র রোদ থেকে বাঁচার জন্যও ছাতা ব্যবহার করতে পারেন। ছাতা ও রেইনকোটের দাম খুব বেশি নয়—২০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে ভালো মানের ছাতা ও রেইনকোট কিনতে পারবেন।

Comments (0)
এখনো কোনো মন্তব্য নেই

প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!

আপনার মন্তব্য লিখুন